হালিশহরে কঙ্কাল উদ্ধারের ১৪ মাস পর পিবিআইয়ের জালে খুনী
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০ সালের ২ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ওয়াসা প্রকল্পের সীমানার পিলার খনন কাজে গর্ত খোরার সময় উদ্ধার করা হয় মানব কঙ্কাল।
এর আরো ৫ মাস আগে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ছোট ভাই রুবেলের সন্ধানে নীলফামারী থেকে চট্টগ্রামে আসে তার ভাই মামুনুল ইসলাম। কোন খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর হালিশহর থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন।
এতে বলা হয় ওই মাসের ১৯ নভেম্বর থেকে তার ভাই রুবেল নিখোঁজ হয়। এরমধ্যে তার ভাই যে এলাকা থেখে নিখোঁজ হয়েছে সে এলাকায় উদ্ধার হয় মানব কঙ্কাল। ডিএনএ পরীক্ষা করে পুলিশ লাশটি রুবেলের বলে শনাক্ত করা হয়।
এরপর থেকে খুনের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যাকান্ডের প্রায় ১৯ মাস ও কঙ্কাল উদ্ধার হওয়ার ১৪ মাস পর গাজীপুর থেকে খুনীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।
তিনি বলেন, বুধবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকা থেকে রুবেল হোসেন নামে এক যুবক খুনের অপরাধে সোহরাব হোসেন ওরফে বলীকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।
সােহরাব হােসেন বলী লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার সিন্দুৰ্ণা ইউনিয়নের মৃত মনছুর আকন্দের ছেলে। সোহরাব খুনের কথা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জানিয়েছেন এ তদন্ত কর্মকর্তা।
স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দী ও পিবিআই সূত্রে জানা যায়, নিহত রুবেল ও সোহরাব দুই বছর আগে চট্টগ্রামের হালিশহর চৌচালা এলাকায় বর্গা চাষি হিসেবে একসাথে কাজ শুরু করেন।
বন্ধুত্বের খাতিরে সুদের উপর রুবেলের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। এক পর্যায়ে ধারের টাকা চাইতে গিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো।
ঘটনার দিনও সন্ধ্যায় ওয়াসার সীমানার জমিতে টাকা পাওনা নিয়ে ভিকটিম রুবেলের সাথে আসামির ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে ভিকটিম রুবেলকে আসামি সোহরাব ধারালাে দা দিয়ে মাথায় স্বজোরে কোপ দেয়।
এতে রুবেল জ্ঞান হারায় এবং কিছুক্ষণ পর মারা যায়। এরপর লাশের পাশেই সোহরাব গর্ত করে লাশটি পুঁতে ফেলে।
বিগত ২০২০ সালের মার্চের ২ তারিখ হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ওয়াসা প্রকল্পের সীমানার পিলার খনন করার প্রাক্কালে মাটির গর্তের মধ্যে একজন অজ্ঞাতনামা পুরুষের কঙ্কাল দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা হালিশহর থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে হালিশহর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কঙ্কালটি উদ্ধার করে।
সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, পুলিশ অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির ডিএনএ’র সাথে ভাই দাবিকারী সামছুলের ডিএনএ আলামত তুলনামূলক পরীক্ষার পর আদালতের নির্দেশক্রমে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো মামলাটি অধিগ্রহণ করে।
মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তার বন্ধু সোহরাবের উপর সন্দেহ তৈরি হয় পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তার। তবে হত্যাকাণ্ডের পরপরই খুনী চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে বগুড়ার একটি চরাঞ্চলে বর্গা চাষ শুরু করেন।
পুলিশ তার খোঁজ শুরু করেছে সেটা বুঝতে পেরে বগুড়া ছেড়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর গিয়ে গরু পালনের কাজ নিয়েছিলেন। তার অবস্থান শনাক্ত করে বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
বৃহস্পতিবার আসামী সোহরাবকে আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে খুনের দায় স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা বিচারকের সামনে তুলে ধরেন।
চখ/আর এস