chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ইসলামের ইতিহাসে জমাদিউল আউয়াল মাসের যত ঘটনা

ডেস্ক নিউজ : ইসলামের ইতিহাসে জমাদিউল আউয়াল মাসের বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে। তার সংক্ষিপ্ত  কিছু ঘটনা জেনে নিন। 

উশাইরাহ অভিযান বা গাযওয়ায়ে উশাইরাহ : দ্বিতীয় হিজরির জমাদিউল আওয়াল মাসে এই অভিযান সংঘটিত হয়। আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কুরাইশের একটি বাণিজ্য দল সিরিয়ায় যাচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) গুপ্তচর মারফত এ সংবাদ শুনতে পান। তিনি ১৫০ বা ২০০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে তাদের পথরোধের জন্য যাত্রা করেন। এ সময় তিনি আবু সালামা বিন আবদুল আসাদ মাখযুমি (রা.) কে মদিনার দায়িত্ব দিয়ে যান। মুসলমানদের সাদা পতাকার বাহক ছিলেন হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রা.)। মুসলমানরা বনু দিনারের গিরিপথ পেরিয়ে মরুভূমির মধ্য দিয়ে ইবনে আজহার উপত্যকায় পৌঁছেন। তারপর ইয়ামামার ছোট পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে ইয়ানবুর সমভূমির মধ্য দিয়ে উশাইরায় পৌঁছেন। তারা এখানে জমাদিউল আউয়াল মাসের বাকি সময় এবং জমাদিউস সানির কয়েকদিন অবস্থান করেন। তারা আবু সুফিয়ানের বাহিনীর দেখা পাননি। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির; আর-রাহিকুল মাখতুম, অনুচ্ছেদ : গাযওয়ায়ে যুল উশাইরাহ]।

বনি সুলাইমের উদ্দেশে অভিযান : তৃতীয় হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহরানে বনি সুলাইমের উদ্দেশে অভিযানে বের হন। বনি সুলাইমের একটি দল মুসলমানদের ওপর আক্রমণের উদ্দেশ্যে ফুরুর দিক থেকে বাহরানে সমবেত হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছে। তিনি ৩০০ জন যোদ্ধা নিয়ে তাদের উদ্দেশে বের হন। তারা বাহরানে পৌঁছে দেখেন বনি সুলাইমের লোকরা ওই জায়গা ছেড়ে চলে গেছে। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাখতুম (রা.) কে মদিনার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির, অধ্যায় : তৃতীয় হিজরির ঘটনাবলি]।

আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন আফফান (রা.) এর মৃত্যু : চতুর্থ হিজরির জমাদিউল আউয়ালা মাসে আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন (রা.) মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কন্যা রুকাইয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জানাজা পড়ান। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ছয় বছর। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির, অধ্যায় : চতুর্থ হিজরির ঘটনাবলি]।

হুসাইন বিন আলী (রা.) এর জন্ম : চতুর্থ হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসে হুসাইন বিন আলী (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। হিজরি ৬১ সালে ১০ মহররম আশুরার দিন তিনি শাহাদাতবরণ করেন। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির, অধ্যায় : চতুর্থ হিজরির ঘটনাবলি]।

বনি লিহ্য়ান অভিযান : বনি লিহ্য়ান বিশ্বাসঘাতকতা করে রজি প্রান্তরে ১০ জন মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার সংকল্প করেন। ষষ্ঠ হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসে আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাখতুম (রা.) কে মদিনায় প্রতিনিধি নিযুক্ত করে দুইশ’ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে যাত্রা করেন। বনি লিহ্য়ানের দুর্বৃত্ত লোকরা এ অভিযানের আভাস পেয়ে আগেভাগেই পার্বত্য অঞ্চলের দিকে পালিয়ে গেল। চারদিকে লোক পাঠিয়ে তালাশ করেও তাদের খোঁজ পাওয়া গেল না। চৌদ্দদিন পর মুসলমানরা মদিনায় পৌঁছলেন। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির, অধ্যায় : ষষ্ঠ হিজরির ঘটনাবলি]।

যায়দ বিন হারিসা (রা.) এর ইস অভিযান : ষষ্ঠ হিজরির জমাদিউল আওয়াল মাসে সিরিয়া থেকে আগত কুরাইশের একটি বাহিনীকে পথরোধ করার জন্য যায়দ বিন হারিসা (রা.) ১৭০ জন সৈন্যসহ ইসে গমন করেন। এ কাফেলায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জামাতা যায়নাব (রা.) এর স্বামী আবুল আস বিন রবীও ছিলেন। তিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। কাফেলাটিকে ধরে মদিনায় নিয়ে আসা হয়। আবুল আস যায়নাব (রা.) এর নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাকে নিরাপত্তা দেন। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির, অধ্যায় : ষষ্ঠ হিজরির ঘটনাবলি]।

মুতা অভিযান : অষ্টম হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জর্ডানের মুতার উদ্দেশে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। যায়দ বিন হারিসা (রা.) এই যুদ্ধে সেনাপতি মনোনীত হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যায়দ নিহত হলে জাফর বিন আবু তালিব সেনাপতি, জাফর নিহত হলে আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি। তিন হাজার সৈন্যের বাহিনী যাত্রা শুরু করে। খ্রিষ্টান বাহিনীতে হিরাক্লিয়াসের নেতৃত্বে সৈন্যসংখ্যা ছিল এক লাখ। তাদের সঙ্গে আরবের বিভিন্ন গোত্র থেকে সাহায্যকারীও ছিল প্রায় এক লাখ। প্রথমে মুসলমানরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। পরে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বিস্ময়কর সমরকৌশল অবলম্বন করেন। ফলে খ্রিষ্টানরা মনে করে মুসলমানদের জয় হয়েছে। [আল-কামিল ফিত তারিখ, ইবনে আসির, অধ্যায় : অষ্টম হিজরির ঘটনাবলি, মুতা যুদ্ধ]।

ইমাম আবু হানিফার মৃত্যু : ১৫০ হিজরির জমাদিউল আউয়াল মাসের ১১ তারিখ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন। এই দিনেই ইমাম শাফেয়ি (রহ.) এর জন্ম হয়। [মানাকিবুল ইমাম আবি হানিফাতা ও সাহিবাইহি, ইমাম যাহাবি, পৃষ্ঠা ৪৮]।

যুবাইদাহর মৃত্যু : খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী যুবাইদাহ বিনতে জাফর ২১৬ হিজরির জমাদিউল আওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন খলিফা আমিনের মা।

গ্রন্থনা : উমর মুহাম্মদ মাসরুর