chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ছোট অপরাধকেও এড়িয়ে যেতে নেই

বিশেষ সম্পাদকীয়: লতা চুরি, পাতা চুরি, মা’র কানের সোনা চুরি। এটি আমাদের অঞ্চলের একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমার মা’র কাছ থেকে বহুবার এটি শুনেছি। তিনি যেমন এই কথাটি আমাদের বলতেন, তেমনি বলতেন তাঁর সমসাময়িকদেরকেও।

এতে তিনি যা বোঝাতে চাইতেন তা হল কেউ যদি ছোটখাটো অপরাধ করে আর তাকে যদি সাথে সাথে সংশোধন করা না হয়, তাহলে সে আস্তে আস্তে একজন বড় অপরাধী হবে।

বাংলাদেশে পড়া শেষ করে আমেরিকায় যখন অপরাধ বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী করতে আসি, তখন জানতে পারি যে একজন বিখ্যাত অপরাধ বিজ্ঞানী অপরাধের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মোটামুটি এই ধরণের একটি ধারণাই ব্যবহার করেছেন।

জেমস উইলসন নামের সেই অপরাধ বিজ্ঞানী ১৯৮২ সালে তাঁর এক প্রবন্ধে বলেন, ছোটখাটো অপরাধগুলোকে যদি সাথে সাথে দমন বা প্রতিরোধ করা না হয়, তাহলে অচিরেই বড় ধরনের অপরাধগুলো ঘটতে এবং বাড়তে থাকবে।

অপরাধ বিজ্ঞানে তাঁর এই বিশ্লেষণকে বলা হয় “ভাঙ্গা জানালা তত্ত্ব”। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন যে যদি কোন বাসায় কেউ একজন ঢিল মেরে একটি জানালা ভেঙ্গে দেয়, আর বাসার মালিক বা অন্য কেউ যদি জানালাটি দ্রুত ঠিক না করে, তাহলে অপরাধী মনে করবে হয়ত এই বাসায় কেউ নেই অথবা এই বাসার মানুষগুলোর নিজেদেরকে রক্ষা করার ক্ষমতা নাই।

ভাঙ্গা জানালাকে একটি রূপক হিসেবে ব্যাবহার করে তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে সমাজে যখন ছোটখাটো অপরাধগুলোকে বাড়তে দেয়া হয়, যখন সমষ্টিগতভাবে সবাই এই অপরাধগুলোকে দমন করতে উদ্যোগ নেয় না, তখন অপরাধীদের ধারণা হয় যে, তারা আরও বড় অপরাধ করলেও কেউ তাদের অপরাধ দমনে এগিয়ে আসবে না। ফলে ছোট অপরাধীরা আস্তে আস্তে বড় অপরাধী হয়, শক্তিশালী হয়।

এই তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রয়োগ করে অপরাধ প্রতিরোধ বা দমন করতে হলে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে যাতে কেউ ছোটখাটো অপরাধ করলে তাকে দ্রুত সংশোধনে সাহায্য করা যায়।

ইভটিজিং বা ওড়না টানা ছেলেদের পরিবারগুলো তাদেরকে বুঝিয়ে অথবা সামজিক চাপ সৃষ্টি করে এই ছেলেদেরকে এইসব অপরাধ থেকে ফেরাতে হবে। পরিবার বা সমাজ যদি এতে অকার্যকর হয়, তবে তাদেরকে শাস্তির আওয়তায় নিতে হবে।

আপাতদৃষ্টিতে এই ক্ষুদ্র অপরাধকে বাড়তে না দিলে ধর্ষণ জাতীয় বড় অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাদক ব্যবসা এবং ব্যবসায়ীদের নির্মূলের পাশাপাশি নজর দিতে হবে যাতে বাচ্চা, কিশোর বা যুবকরা ধূমপান বা ঘুমের ওষুধ জাতীয় নেশায় আসক্ত না হয়ে পড়ে।

তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে, অন্য যে কোনো তত্ত্বের মতই, এই তত্ত্বটিও সকল ধরনের অপরাধের-যেমন রাজনৈতিক সন্ত্রাস, কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে না।

তবে এইটুকু বলা যায় যে, আমরা যদি আমাদের প্রিয়জনদেরকে ছোটখাটো অপরাধ করা থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করতে পারি, তবে সমষ্টিগতভাবেই আমরা অপরাধের শিকার হওয়া থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারবো।

লেখকঃ অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম খন্দকার
ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগ
কুজটাউন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

এমআই/চখ

এই বিভাগের আরও খবর