chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

তেলের মজুদ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা চেয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় আমদানিকারক ও বিভিন্ন  মার্কেটের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও মুষ্টিমেয় মিল মালিক, পাইকারী ও পরিবেশকদের কারসাজির কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী কতটুকু তেল মজুদ রাখতে পারবেন সে বিষয়ে  সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা চেয়েছেন।

একই সঙ্গে আলোচনা সভায় বক্তারা, নতুন করে পেঁয়াজ, গম এবং ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রালয়ের কার্যকরী ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার (১৬মে) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন। দ্যা চিটাগং চেম্বার অব কমার্ম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেল থেকে শুরু করে সব পণ্যের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। বৈশ্বিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে ভোজ্যতেলের বাজার টালমালাট অবস্থা। কিন্তু এর আগে আমাদের আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আমরা দেখছি বৈশ্বিক পেক্ষাপটের অজুহাতে এখানকার ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকে কৃত্রিম সংকটকে উসকে দিতে গুদামে তেল করে রেখেছেন। মিলগেইট থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা তেল কিনে, পরিবেশক হয়ে খুচরা পর্যায়ে তেল পৌঁছে যাবে। যে দামে পণ্য কিনেছেন তার একটা লাভ ধরে ব্যবসায়ীরা  বিক্রি করে দিবেন। কিন্তু আমরা দেখছি উল্টে চিত্র। বাজারে অভিযান চালানোর পর বিপুল পরিমাণে তেলের হদিস মিলছে।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ৫৪ লাখ ব্যবসায়ী বিভিন্নভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সরকার সব ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ঢাকায় এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছেন বলে আফসোস করেছেন। এটা ব্যবসায়ী সমাজের জন্য লজ্জার বিষয়। গুটি কয়েক জনের কারসাজির জন্য এত বড় ব্যবসায়ীক সমাজের সম্মান ক্ষুণ্ন হতে পারে না।

গেল ৯ মে নগরীর পাহাড়তলী বাজারে অভিযান চালিয়ে সিরাজ সওদাগরের মুদি দোকানির গুদামে ১৫হাজার লিটার সয়াবিন তেল পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের কর্মকর্তরা।

 

অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, জব্দ করা সয়াবিন তেলগুলো বসুন্ধরা গ্রুপের ছিল। ওই ব্যবসায়ী আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) মার্কেট ঘুরে ঘুরে অর্ডারের সিল্প কাটেনি কেনো? এতগুলো তেল মজুদ রয়ে যাওয়ার পেছনে পরিবেশক ও এসআরের যোগসাজেশ রয়েছে। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

 

আলোচনায় সভায় চট্টগ্রাম জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ আহমেদ সোলায়মান বলেন, তেলের কারসাজির কথা আসলেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি কতটুকু পণ্য মজুত করে রাখতে পারবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। এছাড়া ওই ব্যবসায়ী আগের কেনা পণ্য নতুন দামে বিক্রি করছেন কিনা সে বিষয়টিও নজরে আনা হচ্ছে না। অথচ মিল মালিকরা তিন দিনেও তেল সরবরাহ করছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তেল নিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে। এসব জায়গায় সরকারকে কাজ করতে হবে। আমরা সুষ্পষ্ট নির্দেশনা চাই।

 

মতবিনিময় সভায় দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইয়েদ ছগির আহমেদ বলেন, ২০ শতাংশ ব্যবসায়ী একটু এদিক-সেদিক করছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে গম আমদানি বন্ধের পর দেশে  আটার দাম সাত থকে আট টাকা বেড়ে গেছে। নতুন করে ডলারের দাম বাড়ছে। আগামী কোরবানির আগে নতুন করে বাজার অস্থিতিশীল না হওয়ার পেছনে কাজ করতে হবে। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফয়েজ উল্ল্যাহ,আমদানিকারক, নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

 

আরকে/নচ/চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর