chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হিজাব পড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ (জেবি) উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পড়ে আসায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে ।

শিক্ষার্থীকে মেরে হিজাব খুলে নেওয়ার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনকার ন্যায় মঙ্গলবার সকালে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে আসে ওই শিক্ষার্থীসহ আরো ৩ শিক্ষার্থী।

সকাল ১১টার দিকে এ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাস শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া তাদের ডেকে হিজাব খুলে ফেলতে বাধ্য করার চেষ্টা করে।

এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিজাব খুলতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বেত্রাঘাত করে প্রধান শিক্ষক। এরপর মুহুর্তেই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করে।

এতে কোন প্রতিকার না পেয়ে পরবর্তীতে বিনতিহা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীর চাচা মোহাম্মদ মহিব বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের প্রথমে বলেন, ‘স্কুলের ভেতর হিজাব পড়া যাবে না।

নোটিশ বোর্ডে টানানো বিদ্যালয়ের ভেতর হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার একটি নোটিশ আমাদের দেখানো হয়।’ পরে আমার ভাতিজিকে ওই স্কুল থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে উনার (প্রধান শিক্ষক) কাছে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট চাই।

এসময় তিনি কিছুটা নমনিয় হয়ে বলেন, ‘আচ্ছা ওই শিক্ষার্থী চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত হিজাব পড়লে অসুবিধে নেই। তবে আগামী বর্ষে আর পারবে না।’

শিক্ষার্থীটি এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সে জেবি স্কুলে পড়াশুনা করছে। প্রায়শ স্কুল প্রধান শিক্ষক হিজাব পড়ে স্কুলে আসলে নানান ঝামেলা করতো।

মঙ্গলবার তিনি কিছুতেই আমাকে হিজাব পড়তে দিবে না। এর আগেও আমি এবং আমার আরো কয়েকজন সহপাঠীকে হিজাব না পড়তে বাধ্য করে।

এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। এছাড়া ছাত্রীদের হাফ হাতার ড্রেস পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা ফুল হাতার ড্রেস পড়ে তাদের নানান ভাবে লাঞ্চনা করা হয়।’

অবশ্য হিজাবের জন্য শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের কথা অস্বীকার করে জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের (জেবি) প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমি মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করিনি।

তারা বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত হিজাব পরিধান করতে পারবে তবে স্কুলে ঢুকলে হিজাব খুলে ক্লাস করতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘হিজাবের জন্য আমি কোন শিক্ষার্থীকে মারধর করিনি। তবে তাদের আমি বলেছি, ‘তোমরা স্কুলের ড্রেসকোড ফলো করবে। বাড়ি থেকে হিজাব পড়ে আসলেও স্কুলে স্কার্ট পড়বে।’

শিক্ষার্থীটির আরেক চাচা মোহাম্মদ তুষার বলেন, নারীর পর্দা করা ইসলামে ফরজ। শিক্ষার্থীরা যদি হিজাব পড়ে বিদ্যালয়ে আসেন এটা তাদের স্বাধীনতা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়ে আসলে ও ফুল হাতার ড্রেস পড়লে তাদের স্বাধীনতা দেয়া।

আমার ভাতিজি সহ কয়েকজন শিক্ষার্থী হিজাব পড়ায় প্রধান শিক্ষক তাদের বেত্রাঘাত ও শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করেছে। এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়তে বাধা দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

ছাত্রীরা যদি হিজাব পড়তে চায় তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হিজাব পড়তে বাধা দেওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ড্রেস নির্ধারণ করে দিতে পারবেন কিন্তু কেউ হিজাব পড়লে তাতে বাধা দিতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর