chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ফ্লাইওভারের ফাটল নিয়ে মুখোমুখি চসিক-সিডিএ

নিজস্ব প্রতিবদেক: নির্মাণের চার বছরের মধ্যে নগরের বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র্যাম্পের দুটি পিলারে ফাটল নিয়ে ফের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ)।

পিলারের ফাটলের পেছনে নির্মাণ ত্রুটিকে দুষছেন মেয়র, তবে সিডিএ বলছে ভারী পণ্য বোঝাই গাড়ি কিংবা অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে এ ফাটল দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে ফ্লাইওভারের ফাটল পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, এটি ভুল ছিল। উড়ালসড়ক নির্মাণের সময় ফাটল ধরা র্যাম্পের অংশ মূল নকশায় ছিল না। পরে এটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। নির্মাণ ত্রুটির কারণে এই ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করেছিল সিডিএ। তারা এটিকে যাচাই-বাচাই করবে।

তিনি বলেন, আজকেই সিডিএকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব। এর আগেও এই ফ্লাইওভারে গার্ডার ধসে দুর্ঘটনায় কয়েকজন মারা গিয়েছিল। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আপাতত নিরপত্তার স্বার্থে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে চসিক মেয়র বলেন, কী কারণে এ ধরনের ফাটল হয়েছে, কারো গাফিলতি বা ত্রুটি ছিল কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করে বলতে হবে। সিডিএকে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এ বিষয়ে করপোরেশন সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত।

তবে মেয়রের বক্তব্য মানতে নারাজ ফ্লাইওভার বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, মূল নকশায় ফাটলের র্যাম্পের অংশ ছিল না। পরে এটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে কোনো ধরনের নির্মাণ ত্রুটির কারণে এ ধরনের ফাটলের সৃষ্টি হয়নি। অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই পরিবহন চলাচলের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে। এরপরও আমরা বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখব।

সড়কে তীব্র যানজট

গতকাল সোমবার (২৫ অক্টোবর) ওই উড়াল সড়কের র্যাম্পের ফাটলের ছবি সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আতঙ্কের মুখে রাতেই ব্যারিকেড দিয়ে উড়ালসড়কের আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্পটিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফ্লাইওভারের ফাটল নিয়ে মুখোমুখি চসিক-সিডিএ
এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্পটিতে ব্যারিকেট দেওয়ার কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই পাশের সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

এক পাশের সড়কে চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফ্লাইওভারের নিচে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। ফলে আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অল্প দূরত্বে যাওয়া গণপরিবহনের যাত্রীদের নাকাল হতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের বেগ পেতে হয়।

ফাটল দেখতে ভিড়

নিজের চোখে ফাটলের অংশ দেখতে সকাল থেকেই উৎসুক মানুষ ভিড় জমাতে থাকে। বহদ্দারহাট দিয়ে চলাচল করা পথচারী, পরিবহনের চালক থেকে শিক্ষার্থীরাও একপলক উঁকি দিয়ে ফাটলের অংশ দেখছিলেন।

ফ্লাইওভারের ফাটল নিয়ে মুখোমুখি চসিক-সিডিএ
বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারের ফাটল দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছে। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

সাইফুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা চট্টলার খবরকে বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, আত্মার বলির মাধ্যমে (মৃত্যুর মাধ্যমে) চাই না। এর আগে এখানে গার্ডার ধসে ১৪ জন মানুষ মারা গেছে। এটি কী ফাটল নাকি অন্য কোনো ধরনের ক্রটি সে বিষয়টি যাচাই করতে হবে। একটি মৃত্যু হলে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। প্রশাসনকে দ্রত সময়ের মধ্যে এর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরেক পথচারী মো. নুরুল হুক চট্টলার খবরকে বলেন, ফ্লাইওভারটিতে প্রতিদিন ভারী পণ্যবোঝাই গাড়ি চলাচল করে। অতিরিক্ত ভারের কারণে এই ধরনের ফাটল হয়ে থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল সিডিএ। তবে ২০১২ সালে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৪ জন মারা যাওয়ার পর ফ্লাইওভারের তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। এই ফ্লাইওভার বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের সংযোগ রক্ষা করেছে। সিডিএর নিজস্ব অর্থায়নে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই উড়ালসড়ক তৈরি করা হয়েছিল।

তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর