chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মিরসরাইয়ে পৌরসভার অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিপর্যস্ত পরিবেশ

ঘরে ঘরে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব, মাতৃগর্ভে নবজাতকের ক্ষতি

বিশেষ প্রতিবেদন : মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং প্রকৃতির দান এই প্রাকৃতিক পরিবেশ। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মুখে।

পুরো পৌর এলাকাজুড়ে পৌরসভার বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় জনগণের সাধারণ জীবন যাপনে নেমে এসেছে মারাত্মক হতাশা।

দুর্গন্ধ ও দূষণে অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে বায়ু ও পানি বাহিত মরণ ব্যাধি। পৌরসভার সদর এলাকার ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডে চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে।

তাছাড়া দাউদ, একজিমা, এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, হাপানি, নিউমোনিয়া, মানসিক বিকারগ্রস্থতা, ক্ষুদা মন্দা, চোখে জ্বালাপোড়া, সাইনো সাইটিস, পেটেরপিড়া, স্থুলতা, ফুসফুসের প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে অনেকের শরীরে।

স্থানীয় মাতৃকা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার জামশেদ আলম জানিয়েছেন, ডাস্টবিন থেকে ছড়ায় না এমন কোন রোগ নেই। যেখানে দুর্গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পঁচা আবর্জনা সেখানেই রোগের আতুড়ঘর।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকতা শেমল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ডাস্টবিনের দূষণের কারণে মানুষের যে সকল রোগ ব্যাধি হয় সেই সকল রোগব্যাধি প্রাণি সম্পদেরও হচ্ছে। এতে পশু পালনকারী পরিবারগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার অপরিকল্পিত বর্জ্যের বাঘাড়ে পৌরসভার গাড়ি থেকে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। যেখানে অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে প্রচুর পরিমাণ গৃহস্থলি বর্জ্য প্রতিদিন নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।

রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীর শাকসবজি, মিল কারখানার তৈলাক্ত পদার্থ, কসাইখানার রক্ত ছাপাখানার রং, হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের নিরাপদ অপসারন নিশ্চিত না হওয়ায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠেছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

অন্যদিকে কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও সেকেলে। অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলে তাতে আবার দেওয়া হচ্ছে আগুন। আগুন থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া আশপাশের বিশাল এলাকা অন্ধকার করে রেখেছে। ধোঁয়ার প্রকোপ এতোই বেশি যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচলে বাধাগ্রস্থ করছে ও সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনাও ঘটছে।

স্থানীয় জনসাধারণ ও সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, মিরসরাই বাজার থেকে মাত্র ২ শ গজ দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে জনবসতীপূর্ণ এলাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) এর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে পৌর বর্জ্যের বাঘাড় তৈরি করা হয়েছে।

যেখানে পৌর-কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন কয়েক মেট্রিক টন বর্জ্য ফেলছে। বাজারের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ কাচা বাজারের আবর্জনা, হাসপাতাল বর্জ্য সহ বিভিন্ন ফার্ম বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এই বর্জ্য থেকে বায়ু বাহিত বিভিন্ন জীবাণু স্থানীয় জনসাধারণকে নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত করছে।

এ ছাড়া মাতৃগর্ভে ভ্রূণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত, অকাল গর্ভপাতসহ নানাবিধ জটিল সমস্যার কারণ ডাস্টবিনের দূষণ। তবে ব্যাপক হারে চুলকানিসহ বিভিন্ন প্রকারের চর্ম রোগের প্রভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এখানকার জনজীবন।

তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে জন-ক্ষতিকর অপরিকল্পিত ময়লার স্তুপ অপসারণ করার দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী একে এম সাইদ মাহমুদও বলেছেন অতি শীঘ্রই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ থেকে বর্জ্য অপসারণ করে তা খরিদকৃত জমিতে স্থানাস্তর করা হবে।

এদিকে মিরসরাই পৌরসভাকে একাধিকবার নোটিশ করে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সওজ অবৈধ ডাস্টবিন অপসারনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মিরসরাই পৌর মেয়র ও বাজার কমিটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন জানান, এখান থেকে বর্জ্য অপরাসণসহ অন্যত্র বর্জ ব্যবস্থাপনার কর্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

চখ/আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর