chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

‘৬০% ন মানি; ডবল ভাড়া দন ফরিবু’

মেহেদী হাসান কামরুল: ‘৬০% ন মানি। ডবল ভাড়া দন ফরিবু’ (৬০% মানি না, দ্বিগুন ভাড়া দিতে হবে)। কথাগুলো বলছিলেন বিআরটিসি বাসের সহকারী (হেল্পার)। যাত্রীও সরকার নির্ধারিত ৬০% ভাড়ার এক টাকাও বাড়তি দিতে নারাজ। ফলাফল ব্যাপক বাড়াবাড়ি। শেষে হাতাহাতি,মারামারি। এই অবস্থা নগরীতে চলাচল করা গণপরিবহনে। সোমবার (১০ আগস্ট) নগরীতে চলাচল করা আরও বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

চলমান করোনা ভাইরাস মহামারিতে সরকার জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে প্রায় ২ মাস সকল ধরনের পরিবহন সেবা বন্ধ রাখে। এতে করে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট শ্রমিক কর্মচারীদের আয়ের পথ বন্ধ হয়। টান পড়ে পেটে। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল প্রকার পরিবহন সেবা চালু করে দেয়।

তবে শর্ত ছিলো গাড়িতে জীবাণু নাশক রাখতে হবে, যাত্রী-চালক-হেল্পার সবাই পরবেন মাস্ক, দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা যাবেনা, পাশের একটি আসন খালি রেখে যাত্রীরা বসবে। ভাড়া গুনতে হবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৬০% বেশি। কিন্তু এর কোনটি মানছেন না গণপরিবহনের চালক-হেল্পারা। উপরন্তু সরকারের বেঁধে দেয়া ৬০% বাড়তি ভাড়াকে তারা উপেক্ষা করে ১০০% বা দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছে। ফলে প্রতিদিনই কোন না কোন গণপরিহনে যাত্রী-হেল্পারের মধ্যে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি, মারামারি ঘটনা ঘটছে। অনেকসময় এসব ঘটনা গড়াচ্ছে থানা পুলিশ পর্যন্ত।

জানা যায়, নগরের ১২টি রুটে অন্তত ১২শ‘র বেশি বাস-মিনিবাস, ৫৫ টি মেট্রোপ্রভাতী বাস চলাচল করে, আছে অনেকগুলো হিউম্যান হলার। দিনরাত শহর দাপিয়ে বেড়ানো এসব বাসের কোনটাতেই মানা হয়না সরকার নির্ধারিত সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি।

অভিযোগ স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির  সভাপতি বেলায়েত হোসেন চট্টলার খবরকে জানান, বাস মালিকদের ডেকে বারবার সর্তক করার পরও তারা আইন মানছেন না। অনেকেই দ্বিগুন ভাড়া নিচ্ছেন। এই অভিযোগও অমূলক নয়। সংগঠন এসব মালিকদের বিপক্ষে অবস্থান করছে। যারা আইন মানছেন না তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে ওইসব পরিবহন মালিকদের মামলা দেয়া হোক। ব্যাক্তির অপর্কমরে দায়ভার সংগঠন নিবে না।

তিনি আরও জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পরিহন সেক্টর। র্দীঘদিন লকডাউন থাকায় আমাদের প্রায় ৩০ শতাংশ গাড়ি অকেজো পড়ে আছে। এটার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু চালক-হেল্পাররা। এই সংকটে গাড়ি রুট পরিবর্তন করে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। যা অনেক সময় মালিক পক্ষ জানেও না। চট্টগ্রাম শহরে অধিকাংশ গাড়ি চলে চুক্তিভিক্তিক। রাতে চালকরা গাড়ি জমা দিতে গিয়ে নানা অজুহাতে মালিকদের ঠকান ।

একরকম আক্ষেপ করে বেলায়েত হোসেন জানান, আপনাদের মাধ্যমে (গণমাধ্যম) সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, গণপরিবহন থেকে চলমান নির্দেশনা তুলে নেয়া হোক। বাইরে সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নাই। নির্দেশনা শুধু মসজিদ আর গণপরিবহনে। চলমান নির্দেশনা তুলে নিলে আমরা আগের নিয়মে চলে যাবো। শুধু মাত্র সিট ফিলআপ করে যাত্রী নেয়া হবে। করোনা যতদিন থাকে বাসগুলোত যাতে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা না হয় সে বিষয়ে সর্তক থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।

তবে ভিন্ন সুরে কথা বললেন বিআরটিএ ভ্রাম্যমান আদালত-১১‘র র্নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-এ-জামান। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, প্রতিদিন আমাদের তিনটি টিমে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালনা করেন। আজও কর্ণেল হাট, দেওয়ান হাটে ভ্রাম্যমান আদালত বসেছে। আমি নিজেও এখন রোডে আছি। আমরা যখন গাড়ি আটক করি তখন তারা সকল অভিযোগ মালিকদের ঘাড়ে চাপায়। এ অভিযোগেরও সত্যতা রয়েছে। মালিক-চালক-শ্রমিক সবার মাঝে প্রচন্ড লোভ কাজ করছে।

সরকার যখন ভাড়া ৬০% বৃদ্ধি করেছে তখন তারা এটাকে কাজে লাগাচ্ছে। একদিকে দ্বিগুন যাত্রী নিচ্ছে অন্যদিকে ভাড়া বৃদ্ধির  সুযোগে ১২০% ভাড়া নিচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে মালিকদের নৈতিক ভাবে স্বচ্ছ হতে হবে। তা নাহলে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ বিশৃঙ্খলা চলতে থাকবে । শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করা যায় না। নাগরিকদেরও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

তিনি আরও জানান, গত ১ মাসে আমি বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ১৪৬ টি মামলা করেছি। এরকম বাকী দুই ম্যাজিস্ট্রেটও মামলা করছেন। তারপরও কোন পরির্বতন আসছে না। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মোবাইল র্কোট পরিচালনা  করার পাশাপাশি আমাদের আরও অনেক দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি শৃঙ্খলা আনতে।

এই বিভাগের আরও খবর