chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে ঈদ বাজারে ছুটছে মানুষ

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের অভিজাত শপিংমল, বিপণীবিতান ও মার্কেটগুলোতে ঈদ বাজারে ছুটছে মানুষ। শবে বরাতের পর থেকেই এবার জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদ বাজারে ইফতারে পর থেকে সেহেরির আগপর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। শহরের মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসছেন মার্কেটে। তাই প্রতিদিন ইফতারের পর থেকে সেহেরির আগপর্যন্ত ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে দোকানগুলোতে। বিশেষ করে কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি। পাশাপাশি জুতা, কসমেটিকস, পাঞ্জাবি, প্যান্টের দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানেও রয়েছে ভিড়। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে মার্কেটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি তত বাড়ছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন ঈদে কেনাকাটা করছেন।

দোকানিরা বলছেন, শবে বরাতের পর থেকে বেড়েছে বিক্রি। শেষ দিকে আরো বাড়বে বলে আশা করছি। এ বছর আগেভাগেই ঈদের পোশাক-আশাক ও জুতা বিক্রয় শুরু হয়েছে। যেটা সচরাচর আগের বছরগুলোতে তেমন চোখে পড়েনি। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ এখনও কেনাকাটায় না নামায় ঈদের বাজারে এখনও ভিড় জমেনি।

রবিবার সকাল থেকে নগরীর অভিজাত নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, টেরিবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, জহুর হকার্স মার্কেট, আগ্রাবাদ সিঙ্গাপুর মার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টার, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স,সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, আমিন সেন্টার, বহদ্দারহাট স্বজন সুপার মার্কেট, চকবাজার মতি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, বালি আর্কেড, সানমার ওশ্যান সিটি, ফিনলে স্কয়ারসহ একাধিক মার্কেটের দোকানগুলোয় দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতারা বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এতে একরকম স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মার্কেটগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরীর টেরিবাজারে দেখা গেছে, ইফতারির পর পরই দেখা যায় মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়। সকাল থেকে রাত ১টা-২টা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। এক সময় টেরিবাজারের কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও বর্তমানে খুচরা কেনাকাটার জন্যও হয়ে উঠছে বেশ জনপ্রিয়। পাওয়া যায় শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রী-পিস, পুরুষদের পাঙ্গাবি, শার্টের কাপড় থেকে সুট-বুটেরসহ নানারকমের কাপড় ও থানকাপড়, কসমেটিকসসহ সাজসজ্জার নানা উপকরণ। বর্তমানে কাপড়ের পাইকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আধুনিক শপিংমল ও মেগাশপও করে নিয়েছে জায়গা এই টেরিবাজারে। টেরিবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮৫টি মার্কেট রয়েছে। এখানে দোকানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। এ কারণে বাজারটিতে ভিড় করছে ক্রেতারা।

ক্রেতারা বলেন, ঈদের সময় যতই এগিয়ে আসবে ততই ভিড় বাড়বে। ভেবেছিলাম রাতে ঝামেলা কম হবে। রাতেও দেখি অনেক ভিড়। একসঙ্গে অনেক দোকান থাকায় প্রতি বছর টেরিবাজার থেকেই কেনাকাটা করি। তবে কাপড়ের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি মনে হচ্ছে।

টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, টেরিবাজার শাড়ির জন্য প্রসিদ্ধ। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ডসহ নানা দেশ থেকে শাড়ি ও অন্যান্য কাপড় আসে। শবে বরাতের পর থেকে রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রচুর বিক্রি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি। রমজানের শেষ দিকে প্রচুর বেচাকেনা হয়।

অন্যদিকে নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও তামাকুমন্ডি লেন কম দামে সব ধরনের ভালো পণ্যের জন্য ক্রেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। নগরীর সবচেয়ে বড় এ বাজারে ঈদকে ঘিরে ধনী-গরিব সব শ্রেণির ক্রেতার সমাগম ঘটে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শবে বরাতের পর থেকে বিক্রি অনেকটা বেড়েছে। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, পরিবারের সাত সদস্যের জন্য রিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে ঈদের কেনাকাটা করছি। শেষের দিকে শপিংমলে ভিড় বেশি হবে, তাই আগে কেনাকাটা করে নিলাম। আর বেতনও পেয়ে গেছি, তাই দেরি না করেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করলাম। বাচ্চাদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। অন্য বছরের তুলনায় কাপড়ের দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে। ঝামেলা এড়াতে সকালের দিকেই চলে এসেছি মার্কেটে।

মিমি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের মার্কেটে রমজানের ৪-৫ দিনের পর থেকেই বিক্রি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে আশা করছি। তবে এখনও পুরোদমে জমে উঠেনি। রমজানের শেষের দিকে পুরো দমে বিক্রি জমে উঠবে বলে আশা করছি। করোনার কারণে এখন দোকানপাট বেড়ে গেছে, অনলাইনে ব্যবসা বেড়ে গেছে। সেজন্য কাস্টমার কিছুটা কম মনে হচ্ছে আমাদের কাছে। করোনার আগে প্রচুর বিক্রি হতো। কারণ ওই সময় অনলাইনে এত ব্যবসা ছিল না।

নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট স্বল্পআয়ের মানুষের ঈদের কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয়। হকার্সের ব্যবসায়ীরা বলেন, শবে বরাতের পর থেকে বিক্রি অনেক বেড়েছে। রোজার প্রথম দিকের তুলনায় এখন বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। বলতে পারি মার্কেট জমজমাট হতে শুরু করেছে। যারা চাকরিজীবী তাদের অনেকেই এখনও বেতন-বোনাস পায়নি। বেতন-বোনাস পেলে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

নগরীর চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ বেচাকেনা ভালো। বিগত বছরগুলোতে দেখেছি, ঈদের শেষ মুহূর্তে এসে বেচাকেনার ধুম পড়ে যেত। এবার এ ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা এসেছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকেরা এবার ঈদে আগেভাগে কেনাকাটা শুরু করেছেন। আশা করছি নিম্ন আয়ের ক্রেতারা বাজারে নামলে আরও পোশাক বিক্রি হবে।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, মার্কেটে এখনও ভিড় জমেনি। তবে কেনাকাটা কম হচ্ছে না। কেনাকাটা ভালো। ভিড় না থাকায় মার্কেটে আসা ক্রেতারা একটু স্বস্তিও বোধ করছেন। দেখে-শুনে পোশাক কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।

নগরীর অভিজাত মার্কেটে বেচাকেনা হলেও অলস সময় পার করছে ছোট ছোট খুচরা দোকান। ক্রেতা তেমন নেই। এর কারণ নিম্ন আয়ের মানুষ এখনও কেনাকাটায় নামেনি। আশা করছেন ২০-২৫ রোজার দিকে নামবে। তখন বাজারে ভিড় বাড়বে। কেনাকাটার ধুম পড়বে।

 

মুন/চখ

এই বিভাগের আরও খবর