chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে বেড়েছে শীতের কাঁপন ,ঝুকিতে শিশুরা

কনকনে শীতে কাঁপছে চট্টগ্রাম। দিনে কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই বেড়ে যাচ্ছে শীতের কাঁপন। চট্টগ্রাম নগরী ও আশেপাশের জেলাগুলোতেও শীতের এই একই তীব্রতা। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে খেঁটে-খাওয়া এবং ছিন্নমূল ভবঘুরে মানুষ। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে ভুগছে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। ঠান্ডাজনিত রোগ বালাইয়ের শিকার হচ্ছে শিশু, মাঝবয়সী থেকে বৃদ্ধরাও।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে বাড়ছে রোগীর চাপ। গত ১৩ দিনে এখানে মারা গেছে ২৫ শিশু। যাদের বেশিরভাগই এসেছে অনেক দেরি করে। ততদিনে আরও তীব্র হয়েছে শ্বাসকষ্ট আর খিঁচুনির মতো জটিলতা।

শুক্রবার পর্যন্ত হাসপাতালের দুটি শিশু ওয়ার্ডে মোট রোগী ভর্তি ১৯০ জন।দূর-দূরান্ত থেকে দেরি করে আসা শিশুদের রোগ সারতে সময় লাগছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাব নেই। তাদের পরামর্শ শিশুদের সময়মতো চিকিৎসকের কাছে নেয়ার।

চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেবিন চৌধুরী বলেন, ‘বাচ্চার সমস্যা মনে হলে চট করে পরামর্শ নিতে হবে। তাতে খারাপ দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রতিরোধ করা যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে ফলাফলটাও ভালো হয়।’

চলমান এ কনকনে শীতের তীব্রতা আগামী এক সপ্তাহ থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের (পতেঙ্গা অফিস) পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিত চৌধুরী। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১০ ডিগ্রির নিচে হলে শৈত্য প্রবাহ বলা যায়। এখন একটু বেশি শীত অনুভব হচ্ছে মূলত পূবালী বাতাসের কারণে।

সপ্তাহজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কখনো কখনো তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি বাড়ে। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, চট্টগ্রামে তাপমাত্রা কম না থাকলেও বাতাসের তীব্রতা থাকায় শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। আগামী দুই তিন দিনে তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমতে পারে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেসময় শীতের তীব্রতা তেমন ছিল না। এরপর থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা নেমে আসে ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। একইসঙ্গে দিনের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ যে তাপমাত্রা থাকার কথা তা থাকছে গড়ে ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি কম।

শনিবার চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকা এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে এখন যে তাপমাত্রা আছে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রা। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকার পরেও চট্টগ্রামে শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। তার প্রধান কারণ হলো বাতাস ও বায়ুর আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকা। হিমালয়ের পূর্বদিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীত বেশি মনে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেইসঙ্গে মাঝারি মানের কুয়াশা পড়ছে। আগামী কয়েকদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে। তারপর তাপমাত্রা ১ থেকে ২ কুয়াশা কম থাকবে। এরপর আবারও বাড়বে।’

চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপাতত চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। কারণ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামে না। আবার নামলেও তা পরপর তিন দিন স্থায়ী থাকতে হবে। টানা তিনদিন একই রকম পরিস্থিতি হলে তখন চট্টগ্রামে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাবে। আর চট্টগ্রামে সে সম্ভাবনা কম। যদিও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর