chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আকাশে-বাতাসে জয় বাংলা ধ্বনি

মহান বিজয় দিবস আজ

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত/ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/নতুন নিশানা উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/এই বাংলায়/তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা সত্যিই বাঙালির জীবনে সত্যি হয়ে এসেছে। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় : ‘আমার ছিল না মুক্ত মাতৃভূমি/শৃঙ্খলহীন স্বাধীন দেশ;/শতবর্ষের শত সাধনায়/পেয়েছি তোমায় বাংলাদেশ।’

বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিন আজ (১৬ ডিসেম্বর)। একাত্তরের এই দিনটিতে বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান। সেই দিনটির ন্যায় আজ সেই স্লোগান তুলবে পুরো জাতি। সর্বত্র উড়বে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।

বিজয়ের এইদিনে শপথ নেয়া হবে দেশ থেকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার। শপথ নেয়া হবে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসম্মানকারীদের রুখে দেয়ার। শপথ নেয়া হবে দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথে বাধাদানকারীদের সমূলে উচ্ছেদ করার।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি  ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, মহাকালের ইতিহাসে স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জন জাতিকে এনে দিয়েছে একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। তবে তা একদিনে অর্জিত হয়নি।

এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী বাণীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর উনিশ শ’ একাত্তরের এই দিনে ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই বিজয়ের আনন্দে আজ বাংলার মানুষ ভাসবে।

আজ ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হবে। লাখো মানুষের মিলনমেলা হবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে সবাই। দিনভর বাংলার পথে-প্রান্তরে বাজবে বিজয়ের গান। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তৈরি করা হবে বিজয়মঞ্চ। সেখানে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, গান ও নৃত্য পরিবেশনা হবে।

জাতি আজ স্মরণ করবে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আরও দৃঢ়প্রত্যয়ী হবে নতুন প্রজন্ম। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাবে সর্বস্তরের মানুষ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে; যে দেশ এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং আর সাহস জুগিয়েছিল।

আজ সরকারি ছুটি। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদ্যাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড়বে। ঘরের সামনে, ভবনের ছাদে কিংবা গাড়িতেও উড়বে লাল-সবুজের এই পতাকা।

সূর্যোদয়ের সময় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা জানাবেন জাতীয় নেতারাও।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ রাজধানীর সড়কদ্বীপ, প্রধান সরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠান আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, বিজয় শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, স্বাধীন বাংলা বেতার ও দেশবরেণ্য শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিজয় দিবসের কর্মসূচি :
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন।

ফখ|চখ

এই বিভাগের আরও খবর