chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

তেল জাতীয় ফসলের চাষ শিখতে খরচ দুই কোটি টাকা

ডেস্ক নিউজ: মৌমাছি পালন ও তেল জাতীয় ফসল চাষে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশে যাবে প্রশাসনের ৪০ কর্মকর্তা। এতে সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হবে দুই কোটি টাকা।এদের মধ্যে ৩৬ জন যাবেন তেল জাতীয় ফসলের চাষ শিখতে এবং চার জন মৌ পালনের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে। তবে মৌ পালনের প্রশিক্ষণের জন্য ৩০ জন কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশনের ভেটোর কারণে তা কমিয়ে চার জন করা হয়।

‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করা হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি যেকোনো দিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তববায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ ও আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য বিদ্যমান রোপা আমন ও পতিত বোরো শস্য বিন্যাস পরিবর্তন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রমাণিত স্বল্প মেয়াদের রোপা আমন, বোরো, সরিষাসহ অন্যান্য শস্যের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নত জাতের বিনা তিল, বারি চীনা বাদাম, বারি সয়াবিন, সূর্যমুখী জাতের আবাদ সম্প্রসারণ করে দেশে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১৫-২০ শতাংশ বাড়ানো যায়। এ লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলার সম্ভাবনাময় ২৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে— ক্রপিং প্যাটার্নভিত্তিক তেলজাতীয় ফসল আবাদের জন্য ৪০ হাজর প্রদর্শনী ক্ষেত তৈরি, প্রদর্শনী বাস্তবায়নের পরবর্তী বছর অভিযোজনের জন্য উন্নত জাতের ৪ লাখ ২০ হাজার ৭৪৮ কোজি বীজ বিতরণ, তেলবীজ ফসলের প্রজনন ও মানস্মত বীজ উৎপাদন ও বিতরণ। এছাড়াও রয়েছে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান অবকাঠামোতে গুণগত মানসম্পন্ন ৮৪১ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন বোরো, আউশ ধান ও পাট বীজসহ ২১০ মেট্রিকটন মসুর বীজ ও তেলবীজ উৎপাদন। পাশাপাশি রয়েছে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস এবং কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় বেশকিছু বিষয় প্রস্তাব করা হয়েছিল, যেগুলো পরে পরিকল্পনা কমিশন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে ছিল— ভিডিও ক্যামেরা ও ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনা, পরামর্শকদের বিদেশে শিক্ষা সফর, আনুষাঙ্গিক ব্যয়, প্রতিটি উপজেলায় উপ-পরিচালক কর্তৃক বছর শেষে মেন্টরিং ও ফলোআপ আলোচনা, আঞ্চলিক ও জেলা মনিটরিং টিম গঠন করে ডিএই’র কার্যক্রম মনিটরিং ইত্যাদি। গত ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পের এই অংশগুলো বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সেইসঙ্গে অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশ না থাকায় প্রস্তাবিত ২৫টি যানবাহন কেনার প্রস্তাব ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রন্তাব) থেকে বাদ দিতে বলা হয়। পরে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ মেনে মূল প্রকল্প প্রস্তাবে এসব বাদ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরও জানায়, ওই পিইসি সভায় ডিপিপিতে প্রস্তাবিত এলাকা ডিএই’র ১৪টি অঞ্চল অপিরিবর্তিত রেখে ৬৪টি জেলার ৪৭৬টি উপজেলার পরিবর্তে সম্ভাবনাময় ২৫০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডিপিপিতে প্রস্তাবিত ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, ফটোকপিয়ার, এয়ারকুলার, ওয়াটার ফিল্টার, স্টেশনারি, সিল ও স্ট্যাম্পস প্রভৃতি কেনা বাবদ ব্যয়; প্রচার ও বিজ্ঞাপন, অডিও/ভিডিও/ডকুমেন্টেশন এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা বাবদ ব্যয়; এবং ভ্রমণ ব্যয়সহ যন্ত্রপাতির সংখ্যা, মূল্য ও ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে নির্ধারণ করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে ডিপিপি সংশোধনের সময় এসব সুপারিশ মানা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া ডিপিপিতে মৌ পালনের ওপর কর্মকর্তাদের সার্টিফিকেট কোর্সের সংখ্যা দুই ব্যাচ থেকে যৌক্তিকভাবে বাড়ানো যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের সংখ্যা ৩০ জন থেকে কমিয়ে ৪ জন করতে হবে বলা হয়। সেটিও মেনেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সার সংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো.জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, বিদ্যমান শস্য বিন্যাসে তেলজাতীয় ফসল অন্তর্ভুক্ত করে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা অনেকাংশেই সম্ভব। পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাই এর অনুমোদন বিবেচনা করা যেতে পারে