chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনে জোর দেওয়ার তাগিদ : নওফেল

পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরে আমাদেরকে শোষণ করে অর্থসম্পদ সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গিয়ে তারা তাদের জন্য একটা জ্ঞান নির্ভর অর্থনীতি বানিয়েছে। সেই জ্ঞান এখনো আমাদের বিতরণ করে বেড়ায়। বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এসময় ইউরোপ আমেরিকার ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মত দেশগুলো লুট করে জ্ঞান নির্ভর অর্থনীতি বানিয়েছে বলে অভিযোগ উপমন্ত্রী তার দাবি, এসব দেশ জ্ঞান বিতরণ করলেও নিজেদের অপকর্মের কথা কখনোই বলে না।

এসময় ইউরোপ আমেরিকার ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মত দেশগুলো লুট করে জ্ঞান নির্ভর অর্থনীতি বানিয়েছে বলে অভিযোগ উপমন্ত্রীর। তার দাবি, এসব দেশ জ্ঞান বিতরণ করলেও নিজেদের অপকর্মের কথা কখনোই বলে না।

ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার একটা আন্তর্জাতিক প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অর্থ খরচ করে সেই উচ্চ শিক্ষা নিতে হবে। পরবর্তীতে বিনিয়োগ করা অর্থ নিয়ে নিবে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউক্রেন, আমেরিকা এই ধরনের ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলো নিজেরা একটা র্যাং ক টেবিল বানিয়েছে নিজেদের কিছু পত্রিকাকে দিয়ে। সেই র্যাং কিং তারাই করে, সেখানে ইংরেজি ভাষার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুব কম স্থান দেয়। সেখানে পড়তে গেলে আমাদের শতকোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। তারা মনে করে তারা একটা উচ্চ শিক্ষার বাজার সৃষ্টি করেছে।’

শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতা অর্জনে দিকে জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী গ্রেজুয়েট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে শুধু আমার দেশের অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত করার কথা না, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করার কথা। গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার জন্য মানসিকতা থাকতে হবে। আমার দৃষ্টিসীমা সেভাবে নির্ধারণ করতে হবে। এই ভূখণ্ডে আমি নিজেকে আবদ্ধ রাখব না, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে সারাবিশ্ব আমার কর্মক্ষেত্র হবে- সেখানে আমি যেন কাজ করতে পারি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয় এজন্য যে আমরা যখন কর্মক্ষেত্রে যাই, আমাদের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কাজ করতে পারে না। ১ শতাংশের কম বেশি শিক্ষকা ও গবেষণায় যায়। কর্মক্ষেত্রে আমরা যখন যাই, সেক্ষেত্রে আমরা যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা নিয়েছি তা যথেষ্ট নয়। এবং সেটা কর্মজীবনের জন্য যথেষ্ট উপযোগীও নয়। সেটার প্রয়োগিক মূল্য খুব কম।’

নওফেল বলেন, ‘প্রতিবেশি দেশ ভারতে মাধ্যপ্রচ্যের চেয়ে বেশি লোক আরবি ভাষায় কথা বলে। আমরা আছি শুধুমাত্র ক্বেরাত প্রতিযোগীতা নিয়ে। আমি নেজেও ছোটবেলায় ক্বেরাত প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেছি। মাখরাজ শিখেছি। সুন্দরভাবে তেলওয়াত করতে পারতাম। দুই শব্দ আরবিও আমরা কথা বলতে পারি না। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্বলতা। এদেশের এত মানুষ আমরা আরবি শিখেছি, আমরা জের যবর নোকতাসহ তেলওয়াত করতে শিখেছি, কিন্তু সেটা যদি ভাষা হিসেবে আমরা শিখতে পারতাম, মধ্যপ্রাচ্যে আমার সন্তানরাই কিন্তু রাজত্ব করত। আমরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছি। ফিলিপাইনে ৯৯ শতাংশ খ্রীস্টান, তারা আরবি ভাষাটাকে ভাষা হিসেবে শিখেছে। ভারতে আরবি ভাষাটাকে ভাষা হিসেবে শিখেছে। পবিত্রতার খাতিরে আমরা শুধুমাত্র তেলওয়াত করতে শিখেছি। এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিন। জাতিসঙ্ঘ প্রচুর চাকরি আছে, যেখানে আমাদের সন্তানরা চাকরি করতে পারতো যদি আরবি ভাষাটা সহজে পারত।’

এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ৪ হাজার ৬৬৩ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়। এছাপড়াও ভালো ফলাফলের জন্য বিভিন্ন বিভাগের ৫ জনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, ৪ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ৬ জনকে চেয়ারম্যান গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

নতুন সনদ পাওয়াদের মধ্যে বিবিএর ২ হাজার ৭৬ জন, এমবিএর ৮৩৭ জন, বি.এস.সি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৩৫৫ জন, বি.ফার্ম অনার্সের ২৩৩ জন, বি.এ. অনার্স ইন ইংলিশের ২৯৩ জন, ব্যাচেলর অব ল প্রোগ্রামের ৬৮৯ জন এবং এম.এ. ইন ইংলিশ প্রোগ্রামের ১০৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আফছার উদ্দিন আহমেদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আসিফ। সমাবর্তনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.এফ.এম. আওরঙ্গজেব। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ ও শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বিধিবদ্ধ পর্ষদের অনুমোদন লাভের পর ২০০৩ সালে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে নিজস্ব সবুজ ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সরকার ও ইউজিসি কর্তৃক সবুজ সংকেত প্রাপ্ত অন্যতম বিশব্বিদ্যালয়।

এই বিভাগের আরও খবর