বন্যা নিয়ে সতর্ক করে নিজেই মারা গেলেন জারিফ
জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ। দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে বন্যার সতর্ক করেছেন। জরুরি মুহূর্তে নিজে সহযোগিতা করার জন্য দিয়েছিলেন নিজের মোবাইল নম্বর।
সর্বশেষ সোমবার (৭ আগস্ট) রাত ১১ টার দিকে তিনি তার ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে অতিদ্রুত সময়ে লোহাগাড়ার স্কুল ও কলেজের ভবন সমূহ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে সবাইকে সতর্ক করেন। তার সতর্কতায় অনেকের উপকার হলেও রক্ষা পাননি তিনি।
সোমবার (৭ আগস্ট) দিবাগত রাত দুইটার দিকে লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাদ ইউনিয়নে জনকল্যাণ এলাকায় নিজ বাড়ী থেকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর হওয়ার সময় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে নিয়ে যায়। প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে জুনায়েদুল ইসলাম জারিফের মরদেহ পাওয়া গেছে। একই এলাকার মোহাম্মদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছেলে তিনি।
জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। আমিরাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ছাত্র মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সোমবার (৭ আগস্ট) লোহাগাড়া উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানিতে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পুকুর ডুবে চলে গেছে শতশত পুকুরের মাছ। শত শত বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শতাধিক নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় প্রতিবেশী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফ উদ্দীন বলেন, জুনায়েদুল ইসলাম জারিফের বাড়ি বিলের পাশে ছিল। রাতে বাড়িতে বেশি পানি উঠেছে,তাই বাড়ির আশেপাশে মানুষজনদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে। যাওয়া সময় একটি গর্ত ছিল। গর্তটি দুইজন লাফিয়ে পার হয়েছিল। জারিফ লাফিয়ে পার করার সময় পানির স্রোতে ভেসে নিয়ে যায়। তারপর থেকে জারিফ নিখোঁজ ছিল।
তিনি আরও বলেন, রাত-দিন প্রায় ১৩ ঘণ্টা পরে জারিফের মরদেহ পাওয়া গেছে। বন্যা নিয়ে মানুষদের সতর্ক করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট ও নিজের বাড়ির আশেপাশে মানুষের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছিল।
উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রিয়াদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে জারিফ মানুষজনকে সতর্ক করার জন্য ফেসবুককে পোস্ট দিয়ে ছিলেন। এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছেন। হয়তো মঙ্গলবার সকালে জারিফ বাড়ির আশেপাশে মানুষদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতো। নানাভাবে এলাকার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন ত্রাণসামগ্রী। হঠাৎ জারিফের মৃত্যুতে শূন্যতা পূরণ করার মতো নয়। আমাদের সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন। সৃষ্টিকর্তা জারিফকে উত্তম প্রতিদান দিন।
জারিফের প্রতিবেশী সাজ্জাদ বলেন, জারিফ এলাকায় যেকোনো কাজে মানুষজনদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করতেন। যেকোনো দুর্যোগে মানুষজনকে সতর্ক করার জন্য কাজ করতেন। হঠাৎ জারিফের অকাল মৃত্যুতে গোটা এলাকায় নামেছে শোকের ছায়া।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মো.রাশেদুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোমবার রাত দুইটার দিকে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে দিকে জারিফের মরদেহ পাওয়া গেছে।