chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও গরুর দাম আকাশছোঁয়া

ইমন আর মোরশেদ দুই ভাই। বিবির হাট পশুর বাজারে এসেছেন কুরবানির গরু কিনতে। তিন ঘন্টা বাজার ঘুরে হতাশ হয়েছেন। লাখ টাকার নিচে গরু নাই। তাদের মতো অনেকেই এবার গরুর বাজারে এসে হতাশা ব্যক্ত করে।

তিনদিন পরেই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। ঈদ উপলক্ষে এবার চট্টগ্রামের পশুর বাজারে উপচে পড়া  ভীড় করেছে ক্রেতারা। বাজারে এসে ইমন আর মোরশেদ মতো অনেকে হতাশ হয়েছেন।

ইমন চট্টলার খবরকে বলেন, বাজেটের মধ্যে পশু খুঁজেতেছি পাওয়া যাচ্ছে না।  এসব হাটে গরুর দাম যেন আকাশ ছোঁয়া। লাখ টাকার নিচে কোন গরুই পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে নগরীর বিবির হাট ও এক কিলোমিটার গরুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসছে। গরু ব্যাপারিরা ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে গরু রাখার ব্যবস্থা করছেন। কেউ গরুকে খাবার খাওয়াচ্ছে।  হাটে বাঁশ পুঁতে ত্রিপল টাঙিয়ে সব লেনের নিচে বালি আস্তর দিয়ে ফ্লোরিং করা হয়েছে। যাতে বৃষ্টি হলেও হাটে কাদা না জমে। এসব হাটে প্রচুর গরু আসতে শুরু করলেও এখনো বাজার জমে ওঠেনি।

গো-খাদ্যের দাম ও পশুপালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুর দাম গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

খামারিরা জানান, গো খাদ্যের দাম বেডে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে গরুর দামে। বর্তমানে ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুসির দাম ২ হাজার ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা।

একইভাবে ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল ১ হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ ও ৫০ কেজি ধানের কুঁড়া ২০০ টাকা বেড়ে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেসারি ও ছোলার ভুসির দামও কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। সঙ্গে এখন কোনো শ্রমিকই ১৫ হাজার টাকা বেতনের কমে খামারে কাজ করতে চান না।

বিবির হাট গরুর বাজারে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আবু তালেব ব্যাপারির সাথে। তিনি জানান, এবার গরুর দাম একটু বেশি। গতবার মত প্রতি গড়ে ২৫ থেকে ২৮ হাজার পড়লে এবার তা ৩৫ হাজার উপরে পড়বে। ছোট গরু বাজারে নেই। মাঝারি সাইজের গরুতে দাম আরো বেশি পড়বে।

এক কিলোমিটার গরুর বাজারে কথা হয় কুষ্টিয়া সদর থেকে আসা ইস্কান্দার মিয়ার সাথে। তিনি জানান, এবার খামারের দিকে ক্রেতা ঝুঁকেছে বেশি। যার কারণে এখনো বেচাকেনা শুরু হয়নি। আশা করছি আগামীকাল থেকে শুরু হবে।

এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। এর বিপরীতে স্থানীয় খামারে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি।

এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত করা পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৩২৫টি। এছাড়া ৭১ হাজার ৩৩৩টি মহিষ, ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি ছাগল এবং ৫৮ হাজার ৬৬২টি ভেড়া রয়েছে।

ঘাটতি পূরণে এরই মধ্যে কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক গরু নিয়ে চট্টগ্রামে আসা শুরু করেছেন ব্যাপারীরা।

এবার চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত ৯ টি হাটে পশুর হাট বসেছে। সাতটি অস্থায়ী পশুর হাটে ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। দু’টি চসিক তত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। বাজারগুলো হচ্ছে নূর নগর হাউজিং পশুর বাজার , ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠে হাট ।

চখ/এ আর/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর