chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ট্রলারে ১০ জনকে হত্যা ঘটনা ধামাচাপা দিতে ডুবিয়ে দেয়া হয় বোট

জলদস্যু সন্দেহে ১০ জনকে বরফ ভাঙার মুগুর, বাঁশ ও লাঠি দিয়ে প্রথমে পেটানো হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ১০ জনকেই কোল্ড স্টোরেজে আটকে রেখে সাগরে বোট ডুবিয়ে দেয়া হয়।

ট্রলারে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার মামলায় আসামি বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদারকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেয়া হয়। করিম সিকদার জবানবন্দি না দিলেও রাজি হন বাইট্টা কামাল।

 

জবানবন্দিতে আসামি কামাল জানায়, ঘটনার সময় সে কক্সবাজার শহরে ছিলেন। তবে ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে তার কয়েক দফার কথায় নিশ্চিত হয়েছে ১০ জনের ট্রলারটি সাগরে ডাকাতি করতে নেমেছিল। ডাকাতির একপর্যায়ে কয়েকটি ট্রলারের জেলেরা ১০ জেলেকে ধরে প্রথমে গণপিটুনি দেন। এরপর গুম করার জন্য লাশগুলো বরফ রাখার কক্ষে আটকে রেখে ছোট ট্রলারটি (ডুবন্ত ট্রলার) সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

সোমবার (১ মে) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় ৩ ঘণ্টা জবানবন্দি দেন বাইট্টা কামাল।

মামলায় গ্রেফতার ৩ আসামির জবানবন্দির পাশাপাশি স্বজনদের মাধ্যমে বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।

ট্রলারে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার মামলায় আসামি বাইট্টা কামাল ও করিম সিকদারকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে নেয়া হয়। করিম সিকদার জবানবন্দি না দিলেও রাজি হন বাইট্টা কামাল।

সোমবার (১ মে) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রায় ৩ ঘণ্টা জবানবন্দি দেন বাইট্টা কামাল।

 

আদালত প্রাঙ্গণে বাইট্টা কামালকে দেখার জন্য ছুটে আসে তার পরিবারের সদস্যরা। আর ঘটনার দিন সাগরে কি ঘটেছিল এবং বাইট্টা কামালের সঙ্গে সাগরে ট্রলারে থাকা জেলের সঙ্গে কি কথা হয়েছিল তার বর্ণনা দেন আসামি বাইট্টা কামালের মেয়ে।

 

সুমাইয়া আরও বলেন, ডাকাতরা চাচাদের মারধর করে সাগরে ফেলে দেয়ার পর ট্রলারটি নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আরেকটা ট্রলার দেখতে পেয়ে বলেছে, আনোয়ারের ট্রলার নিয়ে যাচ্ছে সবাই আসো। তারপর ট্রলারে একটা পতাকা টাঙিয়ে দেয়ার পর অনেকগুলো ট্রলার ডাকাতের ট্রলারকে পিছু নেয়। এ সময় ডাকাতরা ৩ ঘণ্টা গুলি চালিয়েছে। গুলিতে একজন জেলে মারা গেছে এবং আরেক হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এসব শুনেছি। এরপর রাগ করে জেলেরা ডাকাতের ট্রলারে উঠে তাদের মারধর করছিল তখন আমার চাচা অন্য ট্রলার থেকে বলছিল তোমরা ওদেরকে মারধর করিও না, প্রশাসনের কাছে দিয়ে দেব। কিন্তু চাচা বলেছে নাকি তুমি কথা বলিও না, তোমাকে একদম কেটে ফেলব। তখন আমার চাচা আনোয়ার ভয়ে দূরে সরে গেছে। তারপর ওদের মেরে নাকি কোথায় ফেলে দিছে জানে না। এসব বিষয় আমি বাসায় এসে শুনেছি।
ট্রলারে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে গত রোববার (৩০ এপ্রিল) মামলার দুই আসামি ফজল কাদের ও আবু তৈয়ব ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

 

এই ২ আসামি স্বীকার করেছেন ৯ এপ্রিল সাগরে একটির ট্রলারকে ঘিরে কয়েকটি ট্রলারের লোকজন ডাকাত-ডাকাত বলে মারতে দেখেছেন। যারা মারধর করতে ছিলেন তারা সকলেই মহেশখালী মানুষ। এরা বাঁশখালীর বাসিন্দা। ফলে এ ২ জন ঘটনাস্থল থেকে বাঁশখালী চলে গিয়েছিলেন। আরেক আসামি গিয়াস উদ্দিনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

সোমবার (১ মে) ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামলার ১নং আসামি বাইট্টা কামাল। রিমান্ডে বা জবানবন্দিতে কি বলেছে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস।

 

আর কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা। এ ঘটনায় যারা ভিকটিম তাদের সংখ্যাও কিন্তু অনেক। সকল বিষয়ে পুলিশের যে প্রথাগত পদ্ধতি রয়েছে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ভিত্তিক তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। একটি হত্যাকাণ্ডে যত বিষয় জড়িত থাকতে পারে, তার প্রতিটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

ট্রলারে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গেল ২৫ এপ্রিল এজাহার নামীয় ৪ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত ট্রলার মালিক শামশুল আলমের স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা মরদেহসহ ট্রলারটি উপকূলে নিয়ে আসা হয়। এরই মধ্যে উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়েছে ৪ জনের মরদেহ ও কঙ্কালটি। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে তাদের পরিচয়।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর