অবৈধ ইটভাটা: বিলুপ্তির পথে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চন ধান ও পেয়ারা
চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চন পেয়ারা ও কাঞ্চন ধানের সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে। কৃষকরা কাঞ্চন পেয়ারা ও কাঞ্চন ধান বিক্রি করে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করতো। কিন্তু কাঞ্চননগর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে ১৭ টি অবৈধ ইটভাটা। ওই ইটভাটাগুলোর কালো ধোঁয়ার কারণে বিলুপ্তির পথে কাঞ্চন পেয়ারা ও কাঞ্চন ধান ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো চন্দনাইশে ৩১টি ইটভাটা রয়েছে। যারমধ্যে ৬টি বৈধ ও ২৫টির লাইসেন্স নেই (অবৈধ)। শুধু কাঞ্চনা বাদেই আছে ১৭টির অবৈধ ইটভাটা। যেখানে স্থানীয় কয়েকজন জন প্রতিনিধির মালিকানাধীন ইটভাটা রয়েছে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে অবৈধ ইটভাটা চালু রেখে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চন পেয়ারা বাগান ও কাঞ্চনধানের চাষ ধ্বংস হয়ে গেছে। ক্ষেত কামারে ফলন নেই। ধূলায় ধোঁয়ায় বিবর্ণ হয়ে গেছে ফুলে সুশোভিত আম্রমঞ্জরী ও গাছের পাতা। জমির টপসয়েল বলতে কিছু নেই। এলাকাবাসী ভূগছে চর্মরোগ আর শ্বাসকষ্টে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বা মোবাইল কোর্ট নির্লিপ্ত এসব এলাকায়। ভয়ে মূখ খুলতে পারে না এলাকাবাসী।
২৫ অবৈধ ইটভাটা :
কাঞ্চননগরে রয়েছে মেসার্স আহমদ এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স কাশেম ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স শাহসূফি ব্রিক্স ম্যানু: (এসবিএম), মেসার্স মরিয়ম ব্রিক্স ম্যানু: (এমবিএম), মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিক্স ম্যানু:, মেসার্স আমিনুল হক এন্ড মোহাম্মদ আলী ব্রিক্স ম্যানু:, মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিক্স ম্যানু:, মেসার্স জে এমসি ব্রিক্স (নবায়ন), পূর্ব এলাহাবাদে মেসার্স খাজা ব্রিক্স ম্যানু (ফাইভ বি এম), মেসার্স শাহ আমানত ব্রিক্স ম্যানু,
দক্ষিন কাঞ্চনগরে মেসার্স এ বি.এম ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স থ্রী. বি. এম ব্রিক্স ম্যানু, কাঞ্চননগর পূর্ব এলাহাবাদে মেসার্স শাহ জোহাদীয়া ব্রিক্স ম্যানু ,
মের্সাস রহমানিয়া ব্রিক্স ম্যানু, কাঞ্চননগর বটতলীতে মেসার্স চেীধুরী ব্রিক্স ম্যানু (সিবিএম), পূর্ব এলাহাবাদে মেসার্স কাঞ্চননগর ব্রিক্স ম্যানু, এম. এইচ. ওয়াই ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স ফোর বি.এম ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স শাহ আমানত ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স রহিম ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স শাহ আলী রজা (রঃ) ব্রিক্স ম্যানু। হাসিমপুরে রয়েছে তিনটি অবৈধ ইটভাটা।
তারমধ্যে মেসার্স এ আর ব্রিক্স ম্যানু: (এআরবি), মেসার্স নিউ আলী শাহ ব্রিক্স ম্যানু (এএইচএম), মেসার্স এএইচ ব্রিক্স ম্যানু:। বরমায় অবৈধ ইটভাটা রয়েছে মাইগাথায়র মেসার্স হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) ব্রিক্স ম্যানু।
বৈধ ৬ ইটভাটা :
সাতবাড়িয়ায় মেসার্স সাতবাড়িয়া ব্রিক্স ম্যানু, হাসিমপুরে মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিক্স ম্যানু, হাসিমপুরে মেসার্স বারো আউলিয়া ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স খাজা ব্রিক্স ম্যানু, মেসার্স আলীশাহ ব্রিক্স (এবিএন) ও বরমার মাইগাটায় মেসার্স খাজা ব্রিক্স ম্যানু।
বিলুপ্তির পথে কাঞ্চন পেয়ারা :
স্থানীয় পেয়ারা চাষিরা জানান, কাঞ্চন জাতের ঐতিহ্যবাহী অর্গানিক পেয়ারা (স্বাস্থ্যসম্মত) উৎপাদন এখন হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা হারিয়ে বা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চন্দনাইশের কাঞ্চননগরের পেয়ারা চাষি রকিব আহমদ (৬৩) চট্টলা খবরকে বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে এক দিকে পেয়ারার ফলন যেমন কমছে তেমনিভাবে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে পেয়ারা বাগানের পরিধিও। অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে দেশের অন্যতম অর্গানিক পেয়ারা চন্দনাইশের কাঞ্চন জাতটি এক সময় হারিয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, ভিটামিন সি ভরা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যসম্মত (অর্গানিক) কাঞ্চন জাতের এই পেয়ারা এক সময় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও পৌঁছে যেত এই পেয়ারা। এক সময়ে পেয়ারার মৌসুম শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাটবাজারগুলোতে পাইকারি ও খুচরা পেয়ারা বিক্রেতাদের আনাগোনাও বৃদ্ধি পেত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কারণে পেয়ারা বাগান ও ফলন হ্রাস পেতে শুরু করে যা চলতি মৌসুমে এই প্রভাব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।
স্থানীয় কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, লোহাগাড়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় অন্তত ১০-১২ হাজার একর পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে হাজার হাজার পেয়ারা বাগান ছিল। এখন সেই পরিমাণ পেয়ারা বাগান আর নেই। প্রতি বছরই এ পেয়ারা বাগানের পরিধি কমছে।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ এর মহাসচিব সিনিয়র আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় টিকে থাকা এসব ইটভাটা মালিকরা এতই প্রভাবশালী যে তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের তোয়াক্কা করে না। এসব অবৈধ ইট ভাটার পরিবেশ বিদ্বেষী চলমান তান্ডব চিহ্নিত করে উচ্চাদালতের আদেশের আলোকে তাদের উচ্ছেদ পূর্বক পরিবেশ বাঁচানোর জন্যে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, মানবাধিকার কর্মী কে এম শান্তনু চৌধুরী, রিদুয়ানুল করিম নাভিল,আহসান হাবীব,এম রহমান শাওন ও ইয়াসির আরাফাত বলেন, চন্দনাইশে অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা উচ্ছেদ না করলে বিএইচআরএফ এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এ আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।