chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হলো ‘সাকার ফিশ’

শেষ পর্যন্ত দেশে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হলো অ্যাকুরিয়ামের শোভা বাড়ানো “সাকার মাউথ ক্যাটফিশ”। মাছটিকে ১৯৮৫ সালের “প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট”র বিধি সংশোধন করে নিষিদ্ধের তালিকায় যুক্ত করা হলো।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মৃনাল কান্তি দে গত ১১ জানুয়ারি এই প্রজ্ঞাপন জারি করেন বলে জানা যায়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর সাকার মাছ নিষিদ্ধ করতে প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০–এর ১৮ নম্বর ধারা সংশোধন প্রস্তাব প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে মন্ত্রণালয়। মাছটিকে নিষিদ্ধ করা হলে কারও আপত্তি আছে কি-না, তা দুই মাসের মধ্যে লিখিতভাবে মৃনাল কান্তি দের কাছে জানানোর জন্য বলা হয়েছিল।

১১ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু উক্ত প্রাক-প্রকাশনায় উল্লেখিত দুই মাস সময় ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে এবং প্রস্তাবিত সংশোধনের ওপর প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে সরকার উক্ত রুলসের অধিকতর সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

প্রজ্ঞাপনে আইনের ১৮ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়, সাকার মাছ কোনো ব্যক্তি আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রকাশ ও অধিকারী হতে পারবেন না।

সাকার ফিশ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ

সাকার মাছের ইংরেজি নাম Suckermouth Catfish বা Common Pleco। মৎস্য অধিদপ্তরের প্রচারপত্রে সাকার মাছকে দেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, আশির দশকে ব্রাজিল থেকে অননুমোদিতভাবে বাহারি মাছ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সাকার মাছ নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে নদী-নালা, খাল-বিল ও চাষের পুকুরে চাষ করা মাছের সঙ্গে সাকার ফিশ ব্যাপকভাবে ধরা পড়ছে, যা জীববৈচিত্র্য তথা দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।

সাকার মাছের ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করে প্রচারপত্রে আরও বলা হয়, সাকার মাছ যেকোনো জলজ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। এ কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে সাকার মাছ। দেশের জলাশয়গুলোতে এ মাছ ক্রমাগত বাড়ছে। মাছটি দেশীয় প্রজাতির মাছের রেনু খেয়ে ফেলে এবং জীববৈত্র্যের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছটি জলাশয়ের শ্যাওলা জাতীয় খাবার খেয়ে ফেলে। এরা সংখ্যায় বেড়ে গেলে তা বাস্তুসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অন্য মাছের খাবারের সংকট দেখা দিতে পারে। তখন সব প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। জলাশয় পাড়ের ক্ষেত্রবিশেষ পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে পাড়ের ক্ষতি করে এবং জলাশয়ের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কমায়।

ডোরা কাটা চেহারা আর টিকে থাকার ক্ষমতার কারণে অ্যাকুরিয়ামের মাছ হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সাকার ফিশ। মাছের বর্জ্য ও অন্যান্য ময়লা খেয়ে পরিষ্কার করে ফেলে বলেও অনেকে এটিকে অ্যাকুরিয়ামে রাখেন। এদের খাদ্য মূলত জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ। পানি ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে এ মাছ। ইংরেজি নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ, কোনো কোনো দেশে একে কমন প্লেকো বলে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গত জুনে সচিবালয়ে সাকার মাছ থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় করণীয় বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের পক্ষে তৎকালীন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান বলেছিলেন, সাকার মাছ শ্যাওলা, প্লাঙ্কটনজাতীয় খাবার বেশি খায় বলে জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য কমে যায়। জলজ জীববৈচিত্র্য ও মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ মাছটির পুষ্টিগুণ বেশি থাকলেও এটির মাংসে উচ্চমাত্রায় ক্যাডমিয়াম নামের ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

যেভাবে সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ করা হবে

সাকার মাছ নিধনের প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রচারপত্রে বলা হয়, উন্মুক্ত বা বদ্ধ জলাশয়ে পাওয়া গেলে তা বিনষ্ট করতে হবে। সেচের মাধ্যমে পুরোপুরি শুকিয়ে নষ্ট করতে হবে। হ্যাচারিতে সাকার মাছেন প্রজনন বা লালনপালন করা যাবে না। অ্যাকুরিয়ামে শোভা বর্ধনকারী হিসেবে এ মাছ পালন বন্ধ করতে হবে। সাকার মাছ যেন নতুন করে উন্মুক্ত বা বদ্ধ জলাশয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে।

এর আগে ২০০৮ সালে আফ্রিকার রাক্ষুসে মাস পিরানহা বাংলাদেশে চাষ করা, পোনা উৎপাদন, বংশ বৃদ্ধি, বাজারজাত করা এবং কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালে আফ্রিকান মাগুরের আমদানি, উৎপাদন ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে বর্তমানেও এসব মাছ বিভিন্ন সময় বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়।

মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) শামীম আরা বেগম জানান, প্রজ্ঞাপন হয়ে গেছে। এখন যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেভাবে করা হবে। সাকার মাছের আমদানি, চাষ এবং পরিবহন যেন না হয়, সেসব বিষয়ও দেখা হচ্ছে।

মআ/চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর