chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রকল্প এলাকায় দেড় হাজার অবৈধ স্থাপনা

কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই খালের মুখের প্রায় ৬৫ একর জায়গা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতা প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি তুলেছেন। এসব ঘরবাড়ি উচ্ছেদে অভিযান চালাতে এরআগে বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালু করা হয়নি বরং এখানে সেখানে খাল-নদী ভরাট করে নতুন নতুন ঘরবাড়ি উঠছে।

জানা গেছে,২০১০ সালের জুলাইয়ে বন্দরের প্রকল্প এলাকায় কর্ণফুলী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালককেও নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এরমধ্যে দুই তিন বার উচ্ছেদ অভিযান চললেও অদৃশ্য কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৩ বছর পরও আদালতের সেই নির্দেশ পালন হয়নি। আলোর মুখ দেখেনি কর্ণফুলী রক্ষায় নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ঘোষিত টাস্কফোর্স কমিটির কাজও। ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসে কর্ণফুলীর উভয় তীর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনকে সর্ম্পৃক্ত করে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিয়ে যান নৌমন্ত্রী। গত দেড় বছরে কথিত এই টাস্কফোর্স উদ্ধার করতে পারেনি এক ইঞ্চি অবৈধ ভূমিও। উল্টো নতুন উদ্যোগে দখল হচ্ছে নদী। উঠছে নতুন ঘরবাড়ি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে  আকতার উদ্দিনের নেতৃত্বে (স্থানীয়রা কসাই আকতার নামেই চিনে), ড্রেজার মহিউদ্দিন, কিলার ওসমানের ভাই জামাল, কার্টুন সাত্তার, ইয়াছিন, টোকাই কবির, উত্তম বাবু সহ ২০/২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট রাজাখালী খালের মোহনায় সরকারি খাস জমিতে গড়ে তুলেছে অবৈধ বস্তি। ওই বস্তির প্রায় শতাধিক শেডে প্রায় দেড় থেকে দুই  হাজার কক্ষ রয়েছে। আঁটোসাঁটো গিঞ্জি পরিবেশে গড়ে উঠা এসব অবৈধ বস্তির ঘরগুলোর এক কক্ষেই চলে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে বসবাস। কিছু অংশ সেমিপাকা এবং ঝুপড়ী ঘর গুলো বেড়া ও টিন দিয়ে তৈরি। এখানে শহরের দিনমজুর, গার্মেন্ট শ্রমিক,  রিক্সাওয়ালা, হকারসহ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা বাস করেন। এসব কক্ষের মাসিক ভাড়া ৭শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও রয়েছে এসব বস্তিতে। এক নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে ব্যবস্থা করে বস্তিতে দেয়া হয়েছে অবৈধ সংযোগ। প্রতিমাসে একটি বাল্ব একশ ও একটি ফ্যান দুইশ’ টাকা হিসেবে আদায় করে জমিদার নামের ওই সব দখলদাররা। সব মিলিয়ে ঘর ভাড়ার নামে প্রতিবছর প্রায় তিন কোটির টাকার আয় হয় এ বস্তি থেকে। বস্তি এলাকায় অবৈধ ঘর ছাড়াও গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও উচ্ছেদের সময় ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে সেমি পাকা মসজিদ ও মাদরাসা। রাতের আঁধারে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মন্দির।

সি বীচ কলোনী নাম দিয়ে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে আবদুর রহমান, আজগর, মোহাম্মদ হোসেন, দানু মেম্বার মিলে গড়ে তুলেছে আলাদা বস্তি। প্রায় ৫০ শেডের ওই বস্তিতে রয়েছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ কক্ষ। এখানকার বস্তির বাসা গুলোর ভাড়াও ৭শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত।

স্থানীয় লোকজন জানায়, এসব অবৈধ বস্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে চাক্তাই ভিত্তিক এক অপরাধী সিন্ডিকেট। তাঁরা বস্তি এলাকাসহ আশেপাশে রাতের বেলায় নানা ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে, চলে অসামাজিক কার্যকলাপও।

কর্ণফুলীর তীরে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েক হাজার একর ভূমি। এসব ভূমির অধিকাংশই বেদখল। কর্ণফুলীর তীরে থাকা ২ হাজার ৪৬৯ একর ভূমির মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজেদের ব্যবহৃত জমি মাত্র ৯৭৫ একর। অবশিষ্ট জমির মধ্যে বন্দর সহায়ক বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৩৫ একর ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৩৪ একর জমি লিজ দেওয়া আছে। আর স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় অবৈধ দখলে আছে নদী তীরে থাকা বন্দরের ১০৯ একর জমি।

স্থানীয়রা বলছেন, অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে ঘর ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি বেচাকেনাও হচ্ছে নদীর তীর। ভূমি অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া দলিল। এরপর একজন দু’জন করে ভুয়া দলিলের জমি বিক্রি হচ্ছে কয়েক হাতে। এ কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীর গতিপ্রবাহ।

বন্দরের সহকারি ম্যানেজার (ভূমি) জিল্লুর রহমান জানান, চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনায় বন্দরের জমি থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয়েছে এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যেসব অবৈধ বসতি আছে সেগুলো জেলা প্রশাসকের খাস খতিয়ানভূক্ত জায়গা। এজন্য আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। ওইসব সরকারি জমি কাউকে ইজারা কিংবা কারো নামে হস্তান্তরিত হয়নি।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর