chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

২০ নভেম্বর নেপালে জাতীয় নির্বাচন

নেপাল আগামী ২০ নভেম্বরে জাতীয় এবং প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। এ নির্বাচনে দেশটির নেপালি কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন জয় পাওয়ার আশা করছে।

নেপালের ১ কোটি ৮০ লাখ যোগ্য ভোটার ২৭৫ সদস্যের পার্লামেন্ট এবং ৩৩০ সদস্যের ৭ টি প্রাদেশিক পরিষদের জন্য ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (এফপিটিপি) এবং আনুপাতিক উপস্থাপনা (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন)- এই দুই পদ্ধতির সংমিশ্রণে ভোট দেবে।

নেপালিরা কাকে ভোট দেবে সেটি নির্ভর করছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের ওপর:

অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতি:

নেপালে ৬ বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ৮ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতিতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বিশ্বে খাবার ও জ্বালানির দাম বেড়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

কোভিড মহামারীতে অর্থনৈতিক ধাক্কার দুই বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। দেশটির মানুষের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ২ ডলারের নীচের আয়ে জীবনধারণ করছে। এই কঠিন সময়ে তারা এমন রাজনীতিবিদদের বেছে নিতে পারে, যারা খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেবে।

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবমতে, নেপালের অর্থনীতি মধ্য-জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলমান আর্থিক বছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ সম্প্রসারণের আশা আছে। গতবছর অর্থনীতি ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছিল।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:

নেপালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অধরাই থেকে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা অনুৎসাহিত হচ্ছে। ২০০৮ সালে নেপালে ২৩৯ বছরের রাজতন্ত্র অবসানের পর থেকে ১০ ভিন্ন সরকার এসেছে।

নেপালের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল: নেপালি কংগ্রেস, দ্য কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টি এবং মাওবাদী সেন্টার। প্রতিটি পার্টিই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবংদলীয় কোন্দলের কারণে কোনও পার্টিই ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।

মাওবাদী বিদ্রোহীরা যারা ২০০৬ সালে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে এসেছে, তারা মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে।

মাওবাদী গেরিলা কমান্ডার হিসাবে কাজ করে আসা নেপালের অর্থমন্ত্রী জনার্দন শর্মা বলেছেন, নেপালে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছে তাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাটাই নির্বাচনে ভোটারদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে।

মূল প্রতিযোগীরা কারা:

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত নেপালি কংগ্রেস পার্টি এবং দ্য কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট (ইউএমএল) পার্টির মধ্যে। নেপালি কংগ্রেস বর্তমানে চার দলের কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং গত তিন দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে ক্ষমতায় আছে।

নেপালি কংগ্রেসের নেতা প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা জোট বেঁধেছেন মাওবাদী সেন্টার পার্টির সঙ্গে। এটি সাবেক মাওবাদী বিদ্রোহীদের প্রধান দল। ৭৬ বছর বয়সী দেউবা এবার ষষ্ঠবারের মতো ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছেন। তার নেপালি কংগ্রেস পার্টি ভারত ঘনিষ্ঠ।

ওদিকে, ইউএমএল পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৭০ বছর বয়সী বর্ষীয়াণ নেতা কে. পি. শর্মা ওলি। রাজতন্ত্রবাদী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তার জোট আছে। যদিও সে জোট ততটা মজবুত নয়। ওলি বেইজিং-পন্থি হিসাবেই পরিচিত। তার জোট জিতলে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তিনিই হবেন পছন্দের প্রার্থী। ওলি আগেও দুইবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

অন্যদিকে, মাওবাদী সেন্টার পার্টির নেতৃত্বে আছেন প্রচণ্ড। নির্বাচনে স্পষ্ট কোনও ফল না এলে এই প্রচণ্ডই হয়ে উঠতে পারেন কিংমেকার। তিনি নিজেও প্রধানমন্ত্রী পদ পেতে ইচ্ছুক।

চীন ও ভারতের স্বার্থ:

প্রতিবেশী দেশ চীন এবং ভারত তাদের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থের কারণে নেপালের নির্বাচনী ফলের দিকে চোখ রাখবে।

চীন তাদের বিশাল বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর আওতায় নেপালের সঙ্গে অবকাঠামো প্রকল্প সই করেছে। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কাঠমান্ডু এবং লাসার মধ্যে ট্রান্স-হিমালয় রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়তে চায় চীন।

এ বছরের শুরুর দিকে নেপাল রাস্তা উন্নয়ন এবং বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন সাহায্য অনুমোদন করেছিল। তবে নেপালে আমেরিকার উপস্থিতি নিয়ে চীনের উদ্বেগের কারণে এই সিদ্ধান্ত বিতর্কিত বলে গণ্য হয়।

মআ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর