chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হাতহীন এক বাঁশি শিল্পী

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে অনেক মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না, এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আমাদের চারিপাশেই রয়েছে৷ হাতবিহীন এক সংগীতশিল্পী গোটা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন৷

বয়স সবে তিরিশের গোড়ায় হলেও ফেলিক্স ক্লিসার আজ পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীতের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন৷ তিনি পায়ের আঙুল দিয়ে ফ্রেঞ্চ হর্ন বাজান৷ ফেলিক্স মনে করেন, ‘‘সংগীতশিল্পীর পরিচয় শুধু তার সৃষ্টি করা ধ্বনির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ তার গোটা জীবন, ভাবনাচিন্তা ও প্রেরণাও গুরুত্বপূর্ণ৷ সংগীতশিল্পীরা কম্পিউটারের মতো কোনো ধ্বনি ফুটিয়ে তোলেন না৷ তাদের ব্যক্তিত্ব রয়েছে৷ তাদের পরিচয়ের সব দিকও সেই ধ্বনির উপর প্রভাব রাখে৷”

ফেলিক্স দীর্ঘ সময় যাত্রাপথেই কাটান৷ রিহার্সাল, রেকর্ডিং ও কনসার্টের কাজে তিনি গোটা দুনিয়া চষে বেড়ান৷

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি প্রথম হর্ন বাজানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন৷ কেন যে তখন এই বাদ্যযন্ত্রটি বেছে নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে সত্যি তার কোনো ধারণা নেই৷

দুটি হাত ছাড়াই জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে দমিয়ে রাখা যায় নি৷ সংগীতশিল্পী হিসেবে বিশাল সাফল্যের পথেও সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা সৃষ্টি করতে পারে নি৷ একমাত্র অন্যদের সংশয়ই সেই পথ কিছুটা কণ্টকিত করেছে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফেলিক্স ক্লিসার বলেন, ‘‘এমন নয় যে আমি যথেষ্ট ভালো বাজাতে পারতাম না৷ কিন্তু অন্যরা আমাকে বলেছেন, এটা একেবারেই সম্ভব নয়৷ যত ভালোই বাজাই না কেন বা ধ্বনি যতই সুন্দর হোক না কেন, তাদের ধারণা বদলায় নি৷”

কিন্তু ফেলিক্স তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন৷ একটি স্ট্যান্ডের উপর বাদ্যযন্ত্র রেখে তিনি পায়ের আঙুল দিয়ে ভাল্ভগুলি চালনা করেন৷ আঙুল মোটেই জরুরি নয়৷ হর্ন নামের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় ঠোঁটের সঞ্চালনই আসল বিষয়৷ ফেলিক্স বলেন, ‘‘হর্ন বাদক হিসেবে ঠোঁট চেপে এভাবে বাতাস করতে হয়৷ ঠোঁট টেনে ধরার ভঙ্গি অনুযায়ী সুর বদলে যায়৷”

ফেলিক্স ক্লিসার ডাবল ফ্রেঞ্চ হর্ন বাজান, যেটির দুটি টিউনিং রয়েছে৷ ভালভের সংখ্যার উপর বাতাসের প্রবাহ ও পিচ নির্ভর করে৷ তিনি বলেন, ‘‘স্ট্যামিনা বা দম বাড়ানো আমার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল৷ এর সঙ্গে ভাল্ভের বিন্দুমাত্র কোনো সম্পর্ক নেই৷ যে সব মুভমেন্টের জন্য হাতের প্রয়োজন হয়, তা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা হয় নি৷ সেটি কখনোই আমাকে অনুশীলন করতে হয় নি, এমনিতেই পেরেছি৷”

এর মানে অবশ্য এই নয়, যে পেশাদারী সংগীতশিল্পী হওয়ার পথ তাঁর জন্য মসৃণ ছিল৷ তাঁকে অনেক উদ্যম নিয়ে, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়েছে৷

এমনকি কিশোর বয়সেও সেই সংগ্রাম চালু হয়েছিল৷ ফেলিক্স জার্মানির হানোফার শহরে হর্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ তিনি জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইয়ুথ অর্কেস্ট্রায় বাজিয়েছেন এবং প্রথম সংগীত প্রতিযোগিতায় জয়ের মুখ দেখেছেন৷ একটি দিনও অনুশীলন করতে ভোলেন না তিনি৷ ফেলিক্স ক্লিসার মনে করেন, ‘‘শুধু কোনো কিছু নিয়ে মুগ্ধতা থাকলে কোনো লাভ হয় না৷ নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়৷ সেটা আমার জন্য অত্যন্ত জরুরি৷”

ফেলিক্স অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন এবং বেশ কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন৷ ছয় বছরের জন্মদিনে তিনি চেক জেমলিনস্কি কোয়ার্টেটের সঙ্গে মোৎসার্ট ও হাইডেনের সৃষ্টিকর্মের তালে রেকর্ডিং করেছিলেন৷

ভ্রাম্যমান সংগীতশিল্পী হিসেবে অন্য বিষয়ের জন্য তার হাতে বেশি সময় থাকে না৷ বেশিরভাগ সময় ফেলিক্স ভ্রমণ করেন৷ কিন্তু নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি সেই মূল্য দিতে প্রস্তুত৷ ফেলিক্স ক্লিসার বলেন, ‘‘কখনো কখনো খুব ক্লান্ত লাগে ঠিকই, কিন্তু অন্যদিকে মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে মানুষকে খুশি করতে সংগীত পরিবেশন করা, সংগীতের মাধ্যমে উপার্জন করাও বিশাল এক প্রাপ্তি৷ আমি সব সময়ে সে কথা মনে রাখার চেষ্টা করি৷”

এমন সচেতনতা তাঁকে বছরের প্রতিটি দিন অনুশীলন করতে সহায়তা করে৷

এই বিভাগের আরও খবর