chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘হিসাবে’ তালগোল!

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি: হিসাব শাখা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। কোনো ফাইল হিসাব শাখায় গেলে সেটা যেন নড়তেই চায় না। একের পর এক অভিযোগ উঠছে এই শাখা নিয়ে। বেকায়দায় থাকা ওয়াসার হিসাব শাখার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে একের পর এক দায়িত্ব। সেই চাপে পড়ে হিসাব শাখা যেন ‘গন্ডগোল’ পাকিয়েছে। এমন অবস্থায় নতুন করে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা (হিসাব) আল মেহেদী শাওকত আজম। গত বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অ.দা.) দেয়া হয়। দায়িত্ব প্রাপ্তির অল্প দিন না যেতেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে। ওয়াসার অভ্যন্তরীন কর্মকর্তাও এ নিয়ে সোচ্চার হন।। অনিয়ম ও দায়িত্বশীল আচরণ না করা নিয়ে তাকে মৌখিকভাবে বিভিন্ন সময়ে সতর্কও করা হয়। সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট তারিখে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে কারণ দর্শানো হয়। ঠিকাদারদের বিল নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেয়া ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়। কারণ দর্শানো নোটিশে, দায়িত্ব অবহেলা এবং বেআইনী কাজের জন্য কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এবং কেন বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হবে না তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। ‘অন্যথায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে অবহিত করা হবে’ বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে গত ২৩ আগস্ট কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছে আল মেহেদী শওকত আজম। এতে তিনি ভবিষ্যতে কর্তব্যকাজে আরও সচেষ্ট থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসমস্ত বিষয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সচিব দেখবেন। চেয়ারম্যান হিসাবে যদি আমার কাছে আসেও সেটা অনেকটা ঘুরে দেরিতে আসবে। কোনো অভিযোগ নজরে আসে আমি সেটার পদক্ষেপ নিব।

রাজস্ব কর্মকর্তা (হিসাব) দায়িত্বে থাকা আল মেহেদী শওকত আজমকে সিনিয়র অডিট অফিসার হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান হয়। এরপর গত বছরের ১১ জুলাই ওয়াসা সচিব শারমিন আলম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে উপপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অর্থ) এর চলতি দায়িত্ব প্রধান করা হয়। এই পদ পাওয়ার ৩ দিনের মাথায় ১৪ জুলাই তাকে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরের দিন (১৫ জুলাই ২০২১) প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে যোগদান করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, উর্দ্বতন কর্মকর্তা শোকজ করতে পারেন। কিছু বিষয় আছে যেটা কথা বলেই ঠিক হয়ে যায়, কিছু  ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হয়। প্রশাসনিক কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্ঠা করছি। প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাসহ কয়েকটি পদে লোক নিয়োগের বিষয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

এদিকে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর প্রেরণ করা চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর প্রকল্প পরিচালক আরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়, হিসাব শাখায় বিল পাঠানোর পর থেকে বিল পরিশোধের সুপারিশ হিসাব শাখা হতে ব্যাংকে প্রেরণ করতে সর্বোচ্চ ৪১ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘ঠিকাদার/কারিগরি পরামর্শকের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী দাখিলকৃত বিল ৫৬ দিনের মধ্যে ঠিকাদার/কারিগরি পরামর্শকের অনুকুলে পরিশোধে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যথায় চুক্তি অনুযায়ী বিল পরিশোধজানিত বিলম্বের কারণে ঠিকাদার/কারিগরি পরামর্শকের পক্ষ হতে ভবিষ্যতে কম্পিহেনশন ক্লেম করার সুযোগ রয়েছে এবং তা করা হলে এর দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিবে।’

প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আল মেহেদী শওকত আজম বলেন, এটা অফিসিয়াল বিষয়। কার কথা কাকে বলবো? আমাদের এখানে বিল আটকায় থাকে না। আরিফ সাহেব যে চিঠি দিয়েছেন সেটা ব্যাংকে দিয়েছেন। ব্যাংকে আটকে ছিল। ব্যাংক ডিসবার্সমেন্ট করতে দেরি করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাক ডেইটে (পূর্বের তারিখে) হলে উনি (বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক) সাইন করবেন কেন। উনি সাইন করবেন কেন। সরকার যদি বলে এভাবে করো, তাহলে তো করতে হবে। আপনি (প্রতিবেদক) হলে আপনিও করবেন। বাজেটের টাকা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে। উনি (বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক) কুরিয়ার যাওয়ার আগেই তো সব ডিসপোজাল করে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ৯ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তাকে ৪র্থ গ্রেডে নিয়ে আসা হয়েছে। অনিয়ম করে যেমন গ্রেড দেয়া হয়েছে, একইবাবে ওই কর্মকর্তাও অনিয়মের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছেন। প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এখন ওয়াসার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে আজকের বোর্ড সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি এজেন্ডায় রাখা হয়েছে। এর আগেও এই বিষয়টি এজেন্ডায় থাকলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আজকের বোর্ড সভা থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে মনে করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর