chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মহাকাশের ছবি এবং আলোর বয়স

১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি ওয়েব টেলিস্কোপ কি ভাবে তুলতে পারলো?
ওয়েব টেলিস্কোপ মহাকাশে পাঠিয়ে আমাদের কি উপকার হবে কিংবা এই ছবি তুলে আমাদের কি লাভ?

 

আলোর বয়স

অনেক ক্ষেত্রেই আমরা চেহারা দেখে ব্যক্তির বয়স আন্দাজ করে থাকি। আমাদের মতো, আলোরও চেহারা আছে আর সেই চেহারা দেখে তার বয়স মাপা যায়। ধরুন আমরা একটা নিভানো বাল্ব এর দিকে তাকিয়ে আছি। সুইচ অন হলো, বাল্ব জ্বললো আর আমরা তার আলোটা দেখতে পেলাম। তার মানে সুইচ অন করে বাল্বের মাধ্যমে আলো তৈরি করলাম আর সেই আলোটা বাল্ব থেকে আমাদের চোখে আসলো।

বাল্ব আর আপনার দূরত্ব খুব কাছে তাই আপনি বাল্বের আলোটা তাৎক্ষণিক দেখতে পেলেন। এখন এই বাল্বটা যদি চাঁদে জ্বালানো হতো, তাহলে বাল্বের আলোটা আমরা দেখতে পেতাম প্রায় ১ সেকেন্ড পরে। যদি সূর্যে জ্বালানো হতো তাহলে বাল্বের আলোটা আমরা দেখতে পেতাম প্রায় সাড়ে আট মিনিট পরে। অর্থাৎ আমরা যে আলোটা এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি তার একটা বয়স আছে-কারণ সেই আলোটার উৎপত্তি হয়েছিল বেশ কিছুক্ষণ আগে।

মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু থেকে আমাদের কাছে আলো আসে। সেটা হয় তার নিজের অথবা অন্য কারো থেকে ধার করা আলো। তাই দিনের আকাশের সূর্য আর রাতের আকাশের চাঁদ তারার যে আলো আমরা এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি তা আমাদের জন্যে এই মুহূর্তের মনে হলেও সেই আলোর জন্ম বেশ কিছু আগে।

একটা আলোর জন্ম থেকে আমদের চোখে ধরা পড়ার ব্যাপ্তিকালটাই আলোর বয়স।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো আমরা আলোটা দেখি না। দেখি যার কাছ থেকে আলোটা এসেছে তাকে। যেমন সূর্যকে, চাঁদকে, তারাগুলোকে (আর আমাদের লাইট বাল্ব টাকে)। ঠিক তেমনি আমরা যখন বয়স বলি, তখন আলোটার বয়স না বলে বলি তারা বা গ্যালাক্সির বয়স।

একই ভাবে, ওয়েব টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের ঠিক এই মুহূর্তের ছবিই তুলেছে, কিন্তু টেলিস্কোপে যে আলোর সমাহার ধরা পড়েছে তার মধ্যে কিছু আলোর জন্ম বা উৎপত্তি প্রায় ১৩০০ কোটি বছর আগে, কিছু আলোর সাড়ে চারশো কোটি বছর, কিছু আলো কয়েক বছর আগেকার। ওয়েব টেলিস্কোপের ক্ষমতা বুঝানোর জন্য NASA বেছে বেছে কেবল মাত্র ১৩০০ কোটি আর সাড়ে চারশ কোটি বছর আগেকার কিছু ছবি আমাদের সামনে হাজির করেছে।

আমরা সৌভাগ্যবান এই কারণে যে এ যুগের বিজ্ঞানীরা পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে আলোর বয়স বের করতে জানেন আর তা ব্যবহার করে মহাজগতের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদেরকে জ্ঞাত করছেন এবং এতে আমাদের স্থান কি আর কোথায় তা বুঝানোর চেষ্টা করছেন।

মহাবিশ্বের জ্ঞান আর আমাদের ভবিষ্যৎ

জ্ঞানের ক্ষুধা অসীম। অজানাকে জানার জন্যই হাবল বা ওয়েব টেলিস্কোপ। বিজ্ঞানীদের হাজারো তত্ত্ব আছে যার বাস্তব পরীক্ষিত উত্তর হয়তো ওয়েব টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্ত থেকে মিলিয়ে দিবে। যাত্রা তো মাত্র শুরু।

মহাবিশ্বকে আমরা যতই জেনেছি, আমাদের জীবন যাত্রার মান ততই উন্নত হয়েছে। যেমন এয়ার পিউরিফায়ার, বেবি ফরমূলা, মেমরি ফোম, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, জিপিএস প্রযুক্তি, পুঙ্কখাণপুঙ্খ আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মোবাইল ফোন যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি ইত্যাদি, ইত্যাদির প্রভূত উন্নতি।

NASA কিংবা অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবীর বড় বড় উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে নিযুক্ত করে থাকে। এতে উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর বহুবিধ অগ্রগতি সাধন হয়।

মহাকাশ অন্বেষণ তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে সাহায্য করে। বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত কর্মশক্তিকে অনুপ্রাণিত করে। মানব অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে নতুনত্ব উদ্ভাবন এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।

মুহাম্মদ শামীমুজ্জামান

বিজ্ঞান লেখক ও কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ

এই বিভাগের আরও খবর