chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সমাজের গল্পে বেলাশেষে সিনেমা

সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাব, বর্তমান সময়ে এমন মানসিকতার লোকজন দেখা যায় না। আজকাল শেখানো হয়; নিজের জন্য বাঁচ। একসময় এদেশে বড় পরিবার দেখা যেত। বড় পরিবার মানেই হৈ হৈ, অটুট বন্ধন , অনেক স্মৃতি, সুখ দুখ সবার। বড় পরিবার গুলো ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেই কারণ হিসেবে ভেবে নিচ্ছে জায়গার সংকট বা জীবিকার তাগিদে দূরে চলে যাওয়া। শুধুই কি তাই? বড় পরিবার গুলোর কেন্দ্রে একজন বলিষ্ঠ ব‍্যক্তিত্ববান মানুষ থাকতেন। যে উন্নতি বলতে বুঝত পরিবারের উন্নতি। নিজের ব‍্যক্তিগত উন্নতির কথা কখনও চিন্তায় আনতেন না। দিন শেষে মানুষ গুলো সম্মান পেতেন না,বরং আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতেন।

 

সময়ের সাথে সাথে তারা দেখতে পেল নিজেকে নিয়ে ভাবা মানুষ গুলো সময়ের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। যতই মুখে আমরা বলি; অন্যের তরে নিজের সুখ খুঁজে নাও। দিন শেষে সফলতা শিক্ষা আধুনিকতা বলতে পেশাগত জীবনের উন্নয়নকে ভেবে নিই। পশ্চিমা সংস্কৃতি এখনো আমাদের কাছে সর্বাপেক্ষায় গ্রহণযোগ্য। অথচ আমাদেরও সুন্দর গঠনমূলক সংস্কৃতি আছে। নব‍্য পাশ্চাত্য দর্শনে বিশ্বাসী লোকজনের কাছে পারিবারিক সুখ শান্তির মূলে স্বাবলম্বীতা। সবাই নিজেকে স্বাধীন সফল স্বাবলম্বীভাবে গড়তে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নির্ভরতা আস্থা দায়িত্ববোধ। হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা। বেড়ে যাচ্ছে বিচ্ছেদ। নির্ভরতাকে ভেবে নিচ্ছে বোঝা । অথচ ছোট্ট বাচ্চাটা তার উপর নির্ভর আবার বৃদ্ধ বাবা মা সন্তানের উপর এ কোন বোঝা নয় বরং এ ভালোবাসার গোপন মন্ত্র। স্বামী প্রতি নির্ভরতা অন্ধ বিশ্বাস কোন বোকামি বা অজ্ঞতা নয়। বরং এতে তৈরি হয় দায়িত্ববোধ ভালোবাসা। বাঙালিদের পঞ্চাশ বছর একসাথে সংসার করার গোপন সূত্র ছিল এটি। আজকাল সাত দিনে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণ ও এটি।

 

বেলা শেষে সিনেমা , এ পটভূমিতে তৈরি । সিনেমার মূল চরিত্র আছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি অধুনা পাশ্চাত্য দর্শনে বিশ্বাসী। তার বিদেশী বন্ধুদের বন্ধন, দায়িত্ববিহীন জীবন, তার সাংসারিক একগেয়ে জীবন থেকে অধিক প্রিয়। তিনি নারী স্বাবলম্বীতায় বিশ্বাসী । তার স্ত্রী চিরচেনা স্বামী ভক্ত বাঙালি ঘরকোণে মেয়ে। যে একাই সংসারের লাঙল শক্ত হাতে ধরে ছিল। স্বামীর সংসারের প্রতি অমনোযোগীতা তার সংসারের প্রতি একটুও অনাগ্রহ করে তুলতে পারে নি। তিনি ভেবে নিয়েছিলেন সবার সুখে তার সুখ। তিনি ভাবতেন তার স্বামী ও এটা ভাবে।

 

বিবাহিত জীবনের পঞ্চাশ বছর পর তিনি বুঝতে পারলেন, এ সবই মিছে। তার স্বামী চাওয়া পাওয়া আর তার চাওয়া পাওয়ায় বিস্তার ফারাক। তিনি অভ‍্যাস আর ভালোবাসার ফারাক বুঝে উঠতে পারেন নি। স্বামীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা তিনি প্রথমে নিছক মজা ভেবে নেন।

 

সিনেমার শেষে দৃশ্যে সৌমিত্র আবার ফিরে আসে তার স্ত্রীর কাছে এসে দেখে তার স্ত্রী এবার সত্যিই স্বাবলম্বী ঠিক তার ভাবনার মত। পরিচালক এ দৃশ্যে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে কোন মেয়ে চাইলেই যেকোনো বয়সে নিজের আয়ের ব‍্যবস্থা করতে পারে।

 

সৌমিত্র এক সাথে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটা সিনেমার সব থেকে সুন্দর মুহূর্তে। মেয়েটির স্বপ্ন গুলো যেমন শুধু নিজের জন্য না। ঠিক তেমনি আপনার ঘুরতে যাওয়া কিংবা আকাশ ছুয়ে দেখার স্বপ্নটা যেন, শুধু একার না হয়। দুজন একসাথে আকাশ ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন দেখা উচিৎ।

 

ইসরাত জাহান মুক্তা

শিক্ষার্থী,আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

এই বিভাগের আরও খবর