chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

তাসকিন-তামিম নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

খেলাধুলা ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কখনোই সিরিজ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। অবশ্য এই সিরিজের আগে, প্রোটিয়াদের তাদের মাটিতে কোনো ওয়ানডে ম্যাচে হারানোর ইতিহাসও ছিল না টাইগারদের।

তাসকিনের অগ্নিঝরা বোলিং তোপের পর তামিম-লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

আজ বুধবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে সেঞ্চুরিয়নকে যেন নিজের ট্রেনিং গ্রাউন্ড বানিয়ে ফেলেছেন স্পিডস্টার তাসকিন আহমেদ। এই মাঠেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জয়ে নেতৃত্ব দেয়ার পর তৃতীয় ম্যাচে আবার ম্যাচজয়ী স্পেলে ৩৫ রানে তুলে নিয়েছেন তিনি ৫টি উইকেট।

তাসকিন আহমেদের ৫ উইকেটে মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। সেই সাথে, তৈরি করেছেন ইতিহাস গড়ার প্রেক্ষাপট। এরপর বাকি কাজটুকু হেসে খেলেই করেছেন টাইগার ব্যাটাররা।

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ১৫৫ রানের টার্গেটে শুভ সূচনা করেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। বলের গুণাগুণ বিচার করে ধীরে সুস্থে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়।

পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৮ রান তোলে বাংলাদেশ। যেখানে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রাবাদার হ্যাটট্রিক চারে ১৬ রান তোলেন তামিম। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে এক রান নিয়ে ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। তাতে ৯ চারে এবারের সিরিজে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

হাফ সেঞ্চুরির পর থেকে প্রোটিয়া বোলারদের ওপর আরও চড়াও হতে থাকেন তামিম। তাবরাইজ শামসির বলে চার মেরে লিটনের সঙ্গে শতরানের জুটি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

এদিকে হাফ সেঞ্চুরির ঠিক আগ মুহূর্তে আউট হয়েছেন লিটন। মহারাজের ফুলার লেংথ বলে তুলে মারতে গিয়ে বাভুমার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৪৮ রান করা লিটন।

তবে তিনে নামা সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের ৯ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন তামিম। এমন জয়ে প্রোটিয়াদের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতলো তামিমের দল। এশিয়ার তৃতীয় দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জিতে বাংলাদেশের ইতিহাস।

এর আগে বুধবার (২৩ মার্চ) সেঞ্চুরিয়ানে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুটা দুর্দন্ত করেন দুই ওপেনার জানেমান মালান এবং কুইন্টন ডি কক।

প্রথম ৬ ওভারে ৪০ রান তুলে নেওয়া প্রোটিয়ারা বড় সংগ্রহের আভাসই দিচ্ছিলেন। তবে তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপে শেষ পর্যন্ত ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানেই অলআউট হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

শুরুটা করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ৭ম ওভারে এসে ভয়ংকর কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভেঙে টাইগারদের স্বস্তি এনে দিলেন মিরাজ।

আউট হওয়ার আগে ৮ বলে ১২ রান করেন তিনি। আর দলীয় ৪৬ রানে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে প্রোটিয়াদের। এরপর ১৩তম ওভারে এসে দ্বিতীয় উইকেট তুলে নায় বাংলাদেশ। ওই ওভারের তৃতীয় বলটি স্টাম্পের বেশ বাইরে করেছিলেন তাসকিন।

আর লাইনের বাইরের বল খেলতে গিয়েই ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন ভেররেন্নে। ১৬ বলে একটি চারে ৯ রান করে তিনি ফিরেছেন দলীয় ৬৬ রানে।

মালানকেও ইনিংস বড় করতে দেননি তাসকিন। পরের ওভারে বল হাতে এসেই তুলে নিয়েছেন এই ওপেনারকে। আউট হওয়ার আগে ৫৬ বলে ৭টি চারে ৩৯ রান করেন মালান। দলীয় ৬৯ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার।

পরের ওভারে বল হাতে এসে বাভুমাকে তুলে নিয়েছেন সাকিব। ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে সাকিব আল হাসানের বল খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন বাভুমা আর তাতেই বল আঘাত হানে তার পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ারও। ১১ বলে ২ রান করে বাভুমা ফেরেন দলের ৭১ রানে।

৭১ রানে চার টপ অর্ডার ব্যাটারকে হারানোর পর শরিফুল ইসলাম এসে তুলে নেন প্রোটিয়াদের পঞ্চম উইকেট। রসি ভ্যান ডার ডুসেনকে টিকতেই দেননি শরিফুল। ১০ বলে ৪ রান করে ফেরেন এই ব্যাটার।

এরপর ডেভিড মিলার এবং ডুয়েন প্রিটোরিয়াস মিলে চেষ্টা করেন বড় জুটি গড়ার। ষষ্ঠ উইকেটে ২৪ রানের জুটিও গড়ে ফেলেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের জুটিকে বড় হতে দেননি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ।

২৫ তম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন প্রিটোরিয়াস। শরীরের থেকে বেশ বাইরের বল খেলতে গিয়েছিলেন প্রিটোরিয়াস।

তবে শেষ পর্যন্ত তাসকিনের বাউন্স প্রিটোরিয়াসকে পরাস্ত করে ব্যাটের কোণায় লেগে পৌঁছে যায় মুশফিকের অভিজ্ঞ গ্লাভসে। তাতেই দলীয় মাত্র ১০৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তারপর কাগিসো রাবাদাকে তুলে নিয়ে তাসকিন পূর্ণ করলেন পাঁচ উইকেটে কোটা।

ওয়ানডেতে এটি তাসকিনের দ্বিতীয় ফাইফার। এর আগে ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার। শেষ দিকে কেশভ মহারাজ ২৮ রান করেন। ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-
দক্ষিণ আফ্রিকা- ১৫৪/১০ (৩৭ ওভার) (মালান ৩৯, মিলার ১৬, প্রিটোরিয়াস ২১, মহারাজ ২৮; তাসকিন ৫/৩৫, সাকিব ২/ ২২)
বাংলাদেশ – ১৩২/১ (২১.৪ ওভার) (লিটন ৪৮, তামিম ৮৭*)

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর