chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

তেলের দাম বৃদ্ধি নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়াবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চাল, চিনি, সবজির দামের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকায় নাভিশ্বাস। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। গ্যাস, বিদ্যুৎ পানির মূল্যও দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেড়েছে ডলারের অস্বাভাবিক দামও। কয়েকদিন আগে সীমিত আয়ের মানুষের ভরসাস্থল টিসিবির পণ্যের দামও বাড়ানো হলো। এ অবস্থায় কেরোসিন এবং ডিজেলের দামবৃদ্ধি ভোক্তা পর্যায়ে ‘মারাত্মক বিরূপ্রভাব’ ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন।

দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহন, যাতায়াত খাতে ব্যয় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্য ও সেবার দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়ে জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে বলে মত প্রকাশ করে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আর্ন্তজাতিক বাজারে দামবৃদ্ধির অজুহাতে বাংলাদেশ জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার সাথে সাথে বাজারে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগে যাবে, হু হু করে সকল খাদ্য-পণ্য ও সেবা সার্ভিসের মুল্য বেড়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। সরকার জ্বালানী খাতে ভর্তুকি হ্রাসের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এর প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে যা খুবই ভয়াবহ হতে পারে। অন্যদিকে বিগত বেশ কিছুদিন ধরে আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এ অবস্থায় এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের গণশুনানী ব্যাতিরেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির ঘোষণাকে হতাশাজনক বলে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান অজুহাতে বুধবার নির্বাহী আদেশে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে। তবে অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রোলের দাম আগের মতোই প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থাকছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে এস এম নাজের হোসাইন আরও বলেন, কেরোসিন এবং ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে মারাত্মক বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কেরোসিন এবং ডিজেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত পণ্যের বাজারে আগুন ধরবে। পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনের ব্যয় বেড়ে যাবে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতকে নতুন করে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিটি পণ্যের আরেক দফা দাম বাড়িয়ে দিবে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে কেরোসিন এবং ডিজেল তেলের দাম কমতির দিকে ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে এখন দাম বাড়িয়ে দিল। দাম যখন কম ছিল তখন সরকার বাংলাদেশে দাম সমন্বয় করেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে এখন দাম বাড়িয়ে দিল। দাম সমন্বয় না হওয়াতে এখন বাজারে বিরুপ প্রভাব দেখা দিবে। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যদি নিয়মিত সমন্বয় করতো তাহলে সেটার একটা অবস্থা তৈরি হতো। এখন হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিবে ব্যবসায়ীরা।

বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাজের বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার সাথে যুক্ত ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়ালেও অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ায়নি। ফলশ্রুতিতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সাধারণ ভোক্তাদের সাথে ন্যায্য বিচার করতে সক্ষম হয়নি।

বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাজের আরও বলেন, সরকার পহেলা নভেম্বর থেকে ভারতের ডিজেল ও পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিলেও আনন্দবাজার পত্রিকা আজ ৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায় কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোলে লিটার প্রতি ৫ রুপি ও ডিজেলে ১০ রুপি হারে উৎপাদন শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আশা করি সরকার ভারতের দৃষ্টান্তটি বিবেচনায় আনবে।

বিবৃতিতে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় আরও বলেন, সরকার আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দামবৃদ্ধি, বিশ্বব্যাংক, এডিবিও আইএমএফ’র পরামর্শে জ্বালানী খাতে ভুর্তকি হ্রাস ও ভারতে তেল পাচার হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি বাহনা তুলে দেশের জনগনের উপর বর্ধিত মুল্য চাপিয়ে দিলেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ জনগনের জন্য মরার উপর খারার ঘাঁ হবে সেবিষয়ে নজর না দিয়ে বহুজাতিক গোষ্ঠির নিয়োগকৃত গুটি কয়েক বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী যা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ও সরকারের সাথে সাধারণ জনগনের দুরত্বকে বহুগুন বাড়িয়ে দিবে বলে মন্তব্য করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসা উচিত।

বিবৃতিতে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অন্যদিকে জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মুল্যবৃদ্ধি, সেবা সার্ভিসের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সাধারণ জনগোষ্ঠির জনজীবন যাত্রার মুল্যবৃদ্ধিসহ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। বিশেষ করে কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্যবদ্ধি মধ্যবিত্তসহ সাধারন নাগরিকদের জীবন যাপনে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও সরকার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের তেল চুরি, সীমাহীন দুনীর্তি ও অপচয় বন্ধ না করে এবং জ্বালানী তৈলের উপর শুল্ক না কমিয়ে সাধারন জনগণের উপর অবৈধ চাপ প্রয়োগ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে ব্যস্ত।
একইসঙ্গে তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে অনভিপ্রেত সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার উদ্ভব এড়াতে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান তিনি।

এসএএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর