chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দেনমোহর সর্বনিম্ন ৬৬২৯ টাকা থাকলেই বৈধ হবে নিকাহ

মুসলিম বিবাহের রীতি অনুযায়ী দেনমোহর অত্যাবশ্যকীয়। দেনমোহর মূলত একটি সম্মানি। যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকেন। এর মূল উদ্দেশ্য, নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। এটি স্ত্রীর মূল্য নয় যে, দেনমেহর পরিশোধ করলেই মনে করা হবে নারী নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ইসলামি শরিয়তের উদ্দেশ্য হলো- যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসবে, তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে। এমন কিছু উপহার দেবেন, যা তাকে সম্মানিত করে। তবে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে, দেনমোহর এতো অল্প নির্ধারণ না করা যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত না থাকে। আবার এতো অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে অসম্ভব।

দেনমোহর নির্ধারণ ছাড়া মুসলিম রীতিতে কোনো বিয়ে শুদ্ধ হয় না। তবে, এর সঙ্গে ডিভোর্সের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকের ধারণা, দেনমোহর একটা হলেই হলো। এটা তো আর দেওয়া লাগবে না। এই ধারণা থেকে আমাদের সমাজে দেনমোহরের পরিমাণটা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া অন্য আরও অনেক ধারণা রয়েছে। দেনমোহরের পরিমাণ দিন দিন বাড়ার ক্ষেত্রে সেসবের ভূমিকা রয়েছে। যেমন-

১. কন্যা পক্ষ ধারণা করেন, যদি ৫০ লাখ টাকা কিংবা সে পরিমাণ অস্বাভাবিক দেনমোহর ঠিক করা যায়। তবে ছেলের পরিবার তো সে টাকা কখনো দিতে পারবে না। তাহলে আমার মেয়েও সুখে থাকবে। কখনো ডিভোর্স দিতে পারবে না।

২. আমাদের একটা সোশ্যাল স্ট্যাটাস আছে। আমরা কি আমাদের মেয়েকে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে দিতে পারি?

৩. বড় মেয়ের বিয়েতে ছেলে পক্ষ ২০ লাখ টাকা দেনমোহর ঠিক করেছিল। মেজ মেয়ের বিয়েতে ২৫ লাখ টাকা ছিল। তাই ছোট মেয়ের বিয়েতে দেনমোহর ৩০ লাখের কম হবে না।

৪. খালেক সাহেবের মেয়ের (কাল্পনিক নাম) দেনমোহর ছিলো ২০ লাখ টাকা। আমার মেয়ের দেনমোহর এর থেকেও বেশি হওয়া লাগবে। আমি বোঝাতে চাই, আমার মেয়েকে বড় ঘরে বিয়ে দিচ্ছি।

৫. দেনমোহর তো আর দেওয়া লাগে না, একটু বাড়িয়ে ধরলে খারাপ কী? শুনতে ভালো লাগে।

এখন কথা হলো, দেনমোহর বেশি কেন হতে হবে? এটা নির্ধারণ করা উচিত পাত্রের সামর্থ্যের ওপর। যেটা কন্যা পক্ষ কখনো চিন্তা করেন না। কন্যাপক্ষ বিয়ের কথা বলে পাত্রপক্ষের সঙ্গে। পাত্রের সঙ্গে না। তাই তারা তার সামর্থ্য সম্পর্কে জানতে পারেন না। দেনমোহর আদায় করার দায়িত্ব পাত্রের। অভিভাবকের নয়। কিন্তু, বর্তমানে দেখা যায়; দেনমোহর নির্ধারণে পাত্রের নিজের কোনো ভূমিকা নেই। অভিভাবকরা যা চাপিয়ে দেন, পাত্র বিয়ের খুশিতে বেশিরভাগ সময় তাই মেনে নেন।

দেনমোহর সর্বনিম্ন কত টাকা নির্ধারণ করা যায়?

কোনো নারীকে বিয়ে করলে, ইসলামি বিধান অনুযায়ী তাকে অবশ্যই দেনমোহর দিতে হবে। দেনমোহর ধার্য করা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার। তার ন্যায্য অধিকার তিনি যেন সঠিকভাবে পায়। স্ত্রীর যেন অবমূল্যায়ন না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি দেনমোহর নির্ধারণের সময় স্বামীর আর্থিক অবস্থার প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে। সামর্থ্যের বাইরে দেনমোহর ধার্য করে, তাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। দেনমোহরের শরিয়তি বিধান হলো, ১০ দিরহামের কম না হওয়া। এর মূল্য যখন যা, দেনমোহরের সর্বনিম্ন মূল্যও তখন তাই হবে।

দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যূনতম পরিমাণ হানাফি মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা। বর্তমান বাজার অনুযায়ী যার মূল্য ৬৬২৯ টাকা। এর কম পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণে স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ১০ দিরহামের কম কোনো দেনমোহর নেই (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)।

কিন্তু, এর ওপরে যেকোনো পরিমাণকে দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে, স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য। তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না, যাতে তিনি তা পরিশোধ করতে না পেরে গুনাহগার হন।

কিন্তু, আমাদের সমাজে দেনমোহরের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমাণ হলো মোহরে ফাতেমি।

মহানবী (সা.) নিজ কন্যা হযরত ফাতিমা (রা.)-কে হযরত আলীর (রা.) সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সময় যে দেনমোহর নির্ধারণ করেছিলেন, তাকেই মোহরে ফাতেমি বলে। এর পরিমাণ হলো ৫০০ দিরহাম। আধুনিক হিসেবে হয় ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রূপা। এক দিরহামের ওজন হলো ৩.০৬১৮ গ্রাম। বর্তমান বাজারে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ২ হাজার ১০০ টাকা হলে মোহরে ফাতেমির মূল্য হবে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৫ টাকা। তবে মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন সময় রূপার দাম ওঠানামা করে। তাই, অবশ্যই যখন যেমন দাম হবে সে অনুযায়ী কমবেশি হবে।

দেনমোহর যে শুধু টাকা বা রুপা দিয়ে পরিশোধ করতে হবে, এমনটা নয়। এক্ষেত্রে স্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কিছু দিতে পারবেন।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর