chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আশায় বুক বেধেছে বোয়ালখালীবাসী! সালাম কি পারবে?

গত ৩৩ বছর ধরে অসহনীয় কষ্ট-দুর্ভোগ সহ্য করে নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে আসছেন বোয়ালখালীবাসী। শুধুমাত্র কর্ণফুর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিটিশ আমলের কালুরঘাট সেতুর জন্য। তিন দশক ধরে ভোটের বৈতরণী হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন সুচতুর রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বেমালুম ভুলে যান মন্ত্রী-এমপিরা।

প্রতি নির্বাচনে প্রার্থীরা কালুরঘাট সেতুর নির্মাণের  আশ্বাস দিয়েছেন। এমনকি উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থীরা সেতুটি নির্মাণের  আশ্বাস দিয়েছেন। ১৯৯১ সাল থেকে রাজনৈতিক দলের ভোটের ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে এই কালুরঘাট সেতু।

কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাটে নতুন করে সড়ক কাম রেল সেতুর দাবিতে তিন মেয়াদে সংসদে ও মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়ঝাপ করে ‘ব্যর্থ’ হন চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে ২০০৮, ১৪ ও ১৮ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল। রাগে ক্ষোভে এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বলেছিলেন এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু না হলে সংসদ থেকেই পদত্যাগ করবেন তিনি। তার এ ঘোষণার বছর না পেরুতেই ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।

কালুরঘাট সেতু দেখে না যাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে বাদল কবরে গেলেও তার আসনে উপ নির্বাচনে মনোনয়ন পান প্রবীণ রাজনীতিক বোয়াখালীর বাসিন্দা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদ। তিনি ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য হন। নির্বাচনের আগে তিনিও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রদানের সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যেই কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ করা শুরু করবেন। এমনকি গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সেতু স্বপ্ন নয় বাস্তব উল্লেখ করে ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের কথাও জানিয়েছিলেন। এমনকি সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নামে নামকরণের দাবিও জানান তখন।

কিন্তু বাদলের পর মোছলেম উদ্দীনও দেখে যেতে পারেন নি কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ।  গতবছর ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর পর ৮ মাসের মত এমপি  নির্বাচিত হয়েছিলেন মামুন আল  নোমান।কিন্তু তিনি ও কোন আশার দিতে পারেনি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে  নৌকার প্রার্থীকে হারিয়েছেন  লাঙ্গলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয় পেয়েছেন আবদুচ ছালাম।এর আগে  চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসন থেকে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

আবদুচ ছালাম বলেন, ‘সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণেই জনগণ  নৌকার পক্ষে রায় দিয়েছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে তাতে জনগণের সমর্থন রয়েছে। ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে আসার যেই সুযোগ করে দিয়েছেন তার জন্য আমার নেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সাথে আমার নির্বাচনী এলাকা বোয়ালখালী উপজেলা, নগরীর মোহরা, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, পশ্চিম ষোলশহর ও পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা আমাকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন বলে। মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছে তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি। জনগণ আমাকে ভোট দেওয়ায় আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। একই সাথে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাই। আমার দীর্ঘ  সময়  রাজনীতির মাঠে  থেকে করে তৃণমূল থেকে  আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সেতুটি নির্মাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেছেন ২০১০ সালে। তখন জাতির জনকের কন্যা ঘোষণা দিয়েছিলেন কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু করে দিবেন। এই সেতুর প্রত্যাশা পূরণে মানুষ আজকে আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমি আশা করি এক বছরের মধ্যে যে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যেন দৃশ্যমান হয়। কালুরঘাটে নতুন সেতুর কাজ যেন দৃশ্যমান হয় সেই জন্য  দ্রুত পদক্ষেপ নিবো।’

বোয়ালখালীর মানুষ এখন কালুরঘাট সেতুর জন্য আফসোসের চেয়ে হারানো এই দুই নেতার জন্য কষ্ট বেশি পান। পশ্চিম কধুরখীলের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘ কালুরঘাট সেতু একদিন নিশ্চয়ই হবে। আমরা আশায় বুক বেধে আছি আবদুচ ছালাম আমাদের সন্তান তিনি অবশ্যই  কর্ণফুলীর দুই তীরের মানুষের কষ্ট লাঘবে কাজ করবেন ।

এই বিভাগের আরও খবর