chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হেসেখেলেই টাইগারদের হারাল ভারত

মামুলি সংগ্রহ নিয়ে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারল না বাংলাদেশ। রোহিত শর্মা-শুবমান গিলের ঝড়ো শুরুর পর বিরাট কোহলির শতকে হেসেখেলেই টাইগারদের হারাল ভারত।

বিশ্বকাপের ১৭তম ম্যাচে বৃহস্পতিবার পুনেতে বাংলাদেশের হার ৭ উইকেট। ২৫৭ রানের লক্ষ্য ৫১ বল হাতে রেখেই পূরণ করে বিশ্বকাপ স্বাগতিক ভারত।

ম্যাচের ফল নিয়ে নিশ্চয়তা কেটে গিয়েছিল আগেই। শেষ দিকে উত্তেজনা ছড়ায় কোহলি সেঞ্চুরি করতে পান কিনা সেটা নিয়ে। জয়ের জন্য যখন ভারতের দরকার ২০ রান, সেঞ্চুরির জন্য কোহলিরও সেঞ্চুরি হতে প্রয়োজন ছিল ২০ রান। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই রান তুলে নেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। নাসুমের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয়ের সাথে সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন কোহলি।

লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ৭৪ বলে অবিচ্ছন্ন ৮৩ রানের জুটিতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন এই ব্যাটিং স্যানসেশন।

আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ হারল টানা তিন ম‍্যাচে। অন‍্য দিকে টানা চতুর্থ জয় পেল ভারত।

বড় জয়ের পরও পয়েন্ট তালিকায় দুইয়েই আছে ভারত। নিউজিল্যান্ডেরও জয় চার ম্যাচেই। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে কিউইরা। আগামী রোববার ধর্মশালায় মুখোমুখি হবে এই দুই দল। চার ম্যাচে একমাত্র জয়ে দশ দলের তালিকায় সাতে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেটেও দুটি চল্লিশোর্ধো জুটির নেতৃত্বে ছিলেন কোহলি। ৯৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন এই তারকা ব্যাটার। রাহুল অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।

রোহিত শর্মাকে বাউন্ডারিতে ক্যাচ বানিয়ে ১৩তম ওভারে বল হাতে প্রথম সফলতা পায় বাংলাদেশ। ততক্ষণে ভারতের সংগ্রহে জমা পড়ে ৮৮ রান। ঘটনাবহুল সেই ওভারটিতে হাসান মাহমুদ দুই নো বলসহ দেন ২৩ রান। হাসানকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট হন রোহিত। এই ওপেনার ৪০ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৪৮ রান। গিল করেন ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ বলে ৫৩।

গিলের পর শ্রেয়াস আয়ারের উইকেটও নেন মিরাজ।

বাংলাদেশের হারের চিত্রনাট্য লেখা হয়ে যায় মূলত প্রথম ইনিংসেই। শক্ত ভিতের উপ দাঁড়িয়ে এবারও হতাশ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়রা। ব্যাটিং অর্ডারে রদবদলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার ভারতের বিপক্ষে চারে নামানো হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। ব্যর্থ তিনিও। আশা জাগিয়েও লম্বা ইনিংস খেলতে পারেনি মুশফিকুর রহিম। লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসানের কল্যাণে বিশ্বকাপে নিজেদের রেকর্ড জুটি আর শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বশীল ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কিছুটা লড়াই করার মতো পুঁজি পায় দল।

কিন্তু পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসেসিয়েশন স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে এই পুঁজি নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামরা লড়াইটাও করতে পারেননি।

অথচ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং রানের জুটি এনে দেন তানজিদ আর লিটন। দারুণ ব্যাটিংয়ে তারা যোগ করেন ৯৩ রান। বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ৬৯ রান, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে।

চোটের কারণে খেলছেন না নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্ত। টস জিতে ব্যাটিং নেন তিনিই।

কুলদিপ যাদবের সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তানজিদ। ভাঙে ওপেনিং জুটি। তানজিদ ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন ৪১ বলে। আউট হন ৪৩ বলে ৫১ রান করে। ৫টি চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বিনা উইকেটে ৯৩ থেকে স্কোরবোর্ড হয়ে যায় ৪ উইকেটে ১৩৭। এসময় আউট হয়ে যান আস্থার প্রতীক হয়ে লড়তে থাকা লিটন। দারুণ খেলতে থাকা এই ওপেনার আউট হন ধৈর্য হারিয়ে বেরিয়ে এসে জাদেজাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। তিনি খেলেন ৮২ বলে ৭ চারে ৬৬ রানের ইনিংস।

এরপর বড় সংগ্রহের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন তাওহিদ হৃদয় ও মুশফিক। দুজন ৪২ রানের জুটি গড়েন ষষ্ঠ উইকেটে। অনেকক্ষণ উইকেটে ধুকতে থাকার পর হৃদয় আউট হন শার্দুল ঠাকুরকে হাঁকাতে গিয়ে খাড়া আকাশে তুলে। ৩৫ বলে ১৬ রানে শেষ হয় তার লড়াই।

বুমরাহর বলে পয়েন্টে জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন মুশফিক। অভিজ্ঞ এই কিপার-ব্যাটার করেন ৫৬ বলে ৩৮ রান। এই ইনিংস দিয়েই সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডে বিশ্বকাপে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিক।

শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৩৬ বলে তিনটি করে ছক্কা চারে ৪৬ রান করে। তার কল্যাণেই মূলত আড়াইশ পার করতে পারে দল।

ম্যাচে একটা দুঃসংবাদ ভারত শিবিরে। বোলিং করতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন হার্দিক পান্ডিয়া। মাত্র ৩ বল করতে পারেন এই পেস অলরাউন্ডার। পরে আর মাঠে নামেননি।

বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার, মুম্বাইয়ে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৮ (লিটন ৬৬, তানজিদ ৫১, শান্ত ৮, মিরাজ ৩, হৃদয় ১৬, মুশফিক ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ৪৬, নাসুম ১৪, মোস্তাফিজুর ১*, শরীফুল ৭*; অতিরিক্ত ৬; বুমরাহ ১০-১-৪১-২, সিরাজ ১০-০-৬০-২ পান্ডিয়া ০.৩-০-৮-০; কোহলি ০.৩-০-২-০, ঠাকুর ৯-০-৫৯-১, কুলদিপ ১০-০-৪৭-১, জাদেজা ১০-০-৩৮-২)।

ভারত: ৪১.৩ ওভারে ২৬১/৩ (রোহিত ৪৮, গিল ৫৩, কোহলি ১০৩*, শ্রেয়াস ১৯, লোকেশ ৩৪*; অতিরিক্ত ৪; শরিফুল ৮-০-৫৪-০, মুস্তাফিজ ৫-০-২৯-০, নাসুম ৯.৩-০-৬০-০, হাসান ৮-০-৬৫-১, মিরাজ ১০-০-৪৭-২, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৬-০)

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি।

চখ/ফখ

এই বিভাগের আরও খবর