chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পাহাড়তলীতে রেলের ৩১ সরকারি বাসায় “বেসরকারি লোকের ঘরবসতি”

চট্টগ্রাম নগরের রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী ভেলুয়ার দিঘী এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু সরকারি কোয়ার্টার (বাসা)। সেখানে রেলওয়ের কর্মচারি হিসেবে কোয়াটার বরাদ্দ পেয়েছেন আরএনবি সদস্য হাবিলদার কৃষ্ণ পদ চক্রবর্তী, টিকিট কিপার তপন কান্তি ভট্টাচার্য্য, গেইট কিপার রফিকুল ইসলাম, কার্পেন্টার শেখ জুবায়ের আহম্মেদ ছিদ্দিক ও পি.ম্যান রোকন উদ্দিনসহ শতাধিক স্টাফ। কিন্তু অধিকাংশই থাকেন না এসব বাসায়। সরকারি বাসা বেসরকারি লোকের কাছে ভাড়ায় লাগিয়ে পকেট ভারী করছে ৩১ জন রেল কর্মচারি।

রেলওয়ের সরকারি কোয়ার্টার বহিরাগতদের ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের । এ ছাড়া কলোনির আঙিনার খালি জায়গায় অবৈধভাবে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগও নেওয়া হয়েছে।

ভেলুয়ার দিঘী এলাকায় রেলওয়ে কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, ওয়েম্যান সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, ওয়েম্যান মো. মোস্তফা, অফিস সহকারি মো. আতিকুর রহমানসহ ৩১ রেল কর্মচারির নামে বরাদ্দ বাসা বহিরাগতরা বসবাস করছেন। এ ছাড়া খালি জায়গাতে অন্তত ৫০টি বাসা তৈরি করে সেগুলোও ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

পাহাড়তলী ষ্টেশন এলাকায় ৩১টি কোয়ার্টারে নিজেদের পাশাপাশি ডিমের আড়ৎসহ অবৈধভাবে সম্প্রসারণ করে বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে আসছে বরাদ্দপ্রাপ্তরা। আবার কেউ কেউ নিজে বসবাস না করে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে।

একাধিক ভাড়াটিয়া চট্টলার খবরকে বলেন, দুই রুমের বাসার ভাড়া ২৫০০ টাকা। বরাদ্দ পাওয়া রেল কর্মচারিদের প্রতিমাসের ৫-৬ তারিখের মধ্যে আমরা ভাড়া দিই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড়তলীর এক নারী শ্রমিক ভাড়াটিয়া বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। এখানে ভাড়া কম, তাই বাধ্য হয়ে সরকারি বাসায় থাকছি।

অবৈধ জেনেও সরকারি কোয়ার্টারে বাসা ভাড়া কেন দিচ্ছেন, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মচারী বলেন, ‘কোয়ার্টারে সুযোগ সুবিধা তেমন ভালো না। রেলের কর্মচারীরা তাই এসব বাসায় থাকতে চান না। এ জন্য ভাড়া দিয়ে দেন। আমার পাশে অনেকে বাসা বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে নিজেরা ভাড়া বাসায় থাকছেন।’

এদিকে সরকারি বাসা বেসরকারি লোকজনের কাছে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে সত্যতা পান রেলওয়ে।

২৪ সেপ্টেম্বর রেলের উর্ধ্বতন উপ সহকারি প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এসব কোয়ার্টারের বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. আবিদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ভাড়া প্রদানকারীদের বরাদ্দাদেশ বাতিল এবং অবৈধ সম্প্রসারণকারীদের নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যে সকল কর্মচারির বাসা বরাদ্দ বাতিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন- ওয়েম্যান সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, ওয়েম্যান মো. মোস্তফা, অফিস সহকারি মো. আতিকুর রহমান, টিকেট চেকার শাহিন মোল্লা, আরএনবি হাবিলদার কৃষ্ণ পদ চক্রবর্তী, টিকিট কিপার তপন কান্তি ভট্টাচার্য্য, গেইট কিপার রফিকুল ইসলাম, কার্পেন্টার শেখ জুবায়ের আহম্মেদ ছিদ্দিক, পি.ম্যান রোকন উদ্দিন, ওয়েম্যান রবিউল হক, অফিস সহকারি মোস্তাফিজুর রহমান, এম রিডার মো. মোস্তফা, এলএম মো. আলী, বুকিং সহকারি আবু নাঈম মো. ইউসুপ, ফিটার শরিফুল আলম, ই/ফিটার- ২ আবদুস সাত্তার, অফিস সহকারি হ্যাপি আক্তার, ডেসপাস মো. আজিজুর রহমান, মিস্ত্রি-২ আবু সুফিয়ান, এএলএম-২ শফি উল্ল্যাহ চৌধুরী, এস/ফিটার মো. শহীদ উল্লাহ খান, এফসি মো. মকবুল হোসেন, পি. ম্যান রুহুল আমীন মজুমদার, ওয়েম্যান শাহাদাত হোসেন, পি.ম্যান মাহিন উদ্দিন, এলএম-২ মো. কামরুল ইসলাম, খালাসী রিপন কান্তি দত্ত (দীপক), হাবিলদার মো. জসিম উদ্দিন সরকার, ডাব্লিউআরবি শামসুল হুদা ও পোর্টার জিয়াউল আলম ঠাকুর।

রেলের উর্ধ্বতন উপ সহকারি প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারিই বাসা বরাদ্দ নিয়ে সেই বাসা লাখ টাকা সেলামি নিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। অনেকেই কোয়ার্টারের খালি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে উপরি আয় করছেন। এসব বাসায় অবৈধভাবে পানি ও বিদ্যুতের সংযোগও দেয়া হয়। এর সত্যতা আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ বাসায় বহিরাগতদের থাকার কোনো সুযোগ নেই। ‘

 

এই বিভাগের আরও খবর