chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রাউজানে অপহৃত ছাত্রের মাথার খুলি উদ্ধার,গণপিটুনীতে নিহত অপহরণকারী

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজ শিক্ষার্থী সিবলী সাদিক হৃদয়ের (১৯) অপহরণের পর ২লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হত্যার মূল হোতা উমংচিং মারমা (২৬) কে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেছেন কয়েক হাজার উত্তেজিত জনতা। এই ঘটনায় রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুনসহ ৯ পুলিশ আহত হয়।

গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকাল ১০ টার দিকে রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফ শাহ দরগা সড়কে এই ঘটনাটি ঘটে। গণপিটুনিতে নিহত উমংচিং মারমা রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের উথোয়াইমং মারমার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রওশন আলী কেরানির বাড়ি পিক-আপ চালক মো. শফির ছেলে সিবলী সাদিক হৃদয় (১৯) কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেনী ছাত্র। তিনি বাবা মায়ের অভাবের সংসারের হাল ধরার জন্য লেখাপাড়ার পশাপাশি বাড়ি হতে একশত মিটার দূরে জনৈক ইলিয়াসের মুরগীর খামারে ১০ হাজার টাকা বেতনে তত্ত্বাবধায়কের চাকরি নেন। তার অধীনে দুটি মুরগীর খামারে ৬জন উপজাতি (মারমা) তরুণ কাজ করতেন। মাসখানেক আগে খামারের কর্মচারী উমংচিং মারমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মালিকের হস্তক্ষেপে তা মীমাংসা হয়ে যায়। তারা খামারে বন্ধুর মত চলাফেরা করত।

গত ২৮ আগস্ট রাতে বাড়ি হতে হৃদয় খামারে যায়। পরের দিন সকালে তার সহকর্মীরা দেখেন বিছানায় তার ব্যবহৃত মোবাইল পড়ে আছে, তিনি নেই। ঘরে গিয়ে মাকে জানালে তার মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। এমনকি, মাজারে-মাজারে মানত ও ওঝার বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন। ঘটনার পরের দিন মারমা তরুণরা খামার হতে পালিয়ে যায়। এই দিন একটি অজ্ঞাত নম্বর হতে তার বাবার মোবাইলে ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয় তাদের ছেলে অপহরণ হয়েছে। ছেলেকে ফেরত নিতে চাইলে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। পরে হৃদয়ের মায়ের অনেক অনুরোধে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ নির্ধারণ হয়। তাদের কথা অনুযায়ী হৃদয়ের বাবা মো. শফি বান্দরবান সদরে গিয়ে মুক্তিপণের টাকা অপহরণকারীদের হাতে তুলে দিলেও ছেলেকে ফেরত পায় নি।

এই ঘটনায় সিবলী সাদিক হৃদয়ের মা নাহিদা আক্তার গত ৭ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে রাউজান থানায় খামারের ৬ মারমা কর্মচারীকে আসামী করে একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। পরের দিন পুলিশ বেতবুনিয়ায় অভিযান চালিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের মৃত উহ্লাপ্রুমং মারমার ছেলে আছুমং মারমা (২৬) ও কাপ্তাই থানার চিৎমরং ইউনিয়নের আমতলীনপাড়া গ্রামের উষাচিং মারমার ছেলে উক্যথোয়াই মারমা (১৯) কে আটক করেন। তারা হৃদয়কে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তি গত রবিবার র‍্যাব-৭ অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম নগরীর চাঁদগাও এলাকা হতে অপহরণের মূল হোতা উমংচিং মারমাসহ তার দুই সহযোগীকে আটক করেন পুলিশ। হৃয়দকে হত্যা করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন উমংচিং। তার দেওয়া তথ্যানুসারে ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে কদলপুরের ইউনিয়নের পূর্বে রাঙ্গুনিয়া-কাউখালী সীমান্ত একালার গহীন অরণ্যে পাহাড়ের চূঁড়া হতে হৃদয়ের মাথার খুলি, পরনের গেঞ্জি, প্যান্ট উদ্ধার করেন।

পুলিশ জানায়, হৃদয়কে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন অপহরণকারীরা। হৃদয়কে হত্যার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হৃদয়ের দেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পথে তার বাড়ির সন্নিকটে কয়েক হাজার উত্তেজিত নারী-পুরুষ পুলিশের গাড়িতে হুমড়ে পড়ে ঘটনার মূল হোতা উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেয়। এই সময় পুলিশের কয়েকজন আহত হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে বিতারিত করে উমংচিংকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি আরো জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো.আরিফ হোসেন, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর