chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০ প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচার

পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা। ওই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান  ১২৩৪টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, অভিনব কায়দায় রপ্তানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যচালান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, অথচ বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত হচ্ছে না এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তদন্তে নামে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ।এতে দেখা যায়, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতিপূর্বক অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে। বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নং কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত না হয়ে সমুদয় রপ্তানি মূল্য বাবদ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানসমূহ টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট, প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে।

থ্রি-স্টার ট্রেডিং

ঢাকার বনানীতে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১২০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যায়।রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ৮১৬ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে।তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, কানাডা মিসর প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা।এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী লিঃ, কে আর এস সি এন্ড এফ লিঃ, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

ফরচুন ফ্যাশন

ঢাকার মিরপুরের ফরচুন ফ্যাশন ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ৫৯টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করে।রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ৪৩৫ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে।তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, মিশর, কানাডা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে।পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রায়।এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট রিয়াংকা ইন্টারন্যাশনাল, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ও এম/এস এ.কে এন্টারপ্রাইজ।

অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড

ঢাকার কচুক্ষেত এলাকার এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৪২টি রপ্তানিচালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে।রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ১৯৫ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে।তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট পান বেঙ্গল এজেন্সী লিঃ, এ এন্ড জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল , জে জে এসোসিয়েট, জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এন এইচ কর্পোরেশন ।

পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড

গাজীপুরের টঙ্গির এ প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ২০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়। রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ১৭০ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইনস, নাইজেরিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন ও এন এইচ কর্পোরেশন আগ্রাবাদ।

স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড

ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১০টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়।রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ৬৬.৮ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন, পান বেঙ্গল এজেন্সী লিঃ ও কে আর এস সি এন্ড এফ লিঃ।

ইডেন স্টাইল টেক্স

ঢাকার খিলক্ষেতে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৮টি রপ্তানিচালানে জালিয়াতি করেছে মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়। রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ৪২ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালানগুলো টোঙ্গা, ওমান, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি জালিয়াতির সাথে জড়িত সি এন্ড এফ এজেন্ট জি আর ট্রেডিং কর্পোরেশন , পান বেঙ্গল এজেন্সী লিঃ ও কে আর এস সি এন্ড এফ লিঃ।

অর্থ পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিল অব এক্সপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে রপ্তানিকৃত পণ্য হলো টি-শার্ট এবং প্রতি পিসের ওজন দেখানো হয়েছে ৫০০থেকে ১০০০ গ্রাম বা তারও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতি কেজি নিট ফেব্রিক্স দিয়ে কমপক্ষে ৬টি টি-শার্ট হয়ে থাকে। প্রতিটি টি-শার্টের গড় ওজন ন্যূনতম ২৫০ গ্রাম ধরে রপ্তানিকৃত টি শার্টের সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে। তাছাড়া কিছু কিছু পণ্যচালানে রপ্তানি পণ্যের মূল্য খুবই কম ঘোষণা করা হয়েছে।এক্ষেত্রে সমসাময়িক রপ্তানি চালানের সমজাতীয় পণ্যের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্য রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লিখিত ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মূলত বিল অব এক্সপোর্টের  কোড ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে।

১০টি প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্টসমূহ পর্যালোচনায় বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায় নি। অধিকন্তু, বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সাউথ ইস্ট ব্যাংক হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, উল্লিখিত ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই উক্ত ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়। প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সাথে উক্ত ব্যাংক সম্পর্কিত নয় বিধায় উক্ত ব্যাংকের মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্রাক্ট বা ইএক্সপি এর রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হয়নি বা হওয়ার কোনো সুযোগও নেই।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মোঃ শামসুল আরেফিন খান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধানসহ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অধিকন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর বিআইএন এবং সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টের এআইএন স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একই পন্থায় ৩৭৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা উৎঘাটিত হয়।