chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার : ৩৪ কোটি টাকার ল্যাব চসিকের গলার কাটা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এর আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও মাইক্রো-কেমিক্যালের পূর্ণাঙ্গ দুটি ল্যাব রয়েছে । আর এই ল্যাবে স্থাপন করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার খাদ্যের মান যাচাইয়ের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ল্যাবটি খাদ্যের মান যাচাইয়ের কোনো কাজ হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘ আট বছরেও জনবলের পদ সৃজন হয়নি। মান পরীক্ষার সাইনিং অথরিটি না থাকায় পরীক্ষার রিপোর্ট গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। জনবল দীর্ঘ সময়েও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ল্যাবে ব্যবহারের জন্য কয়েক লাখ টাকার কেমিক্যাল মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। বর্তমানে দুই জন টেকনিক্যাল লোকসহ আট জন পরীক্ষাগারের পাহারায় নিয়োজিত রয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবত ল্যাবটি অচল অবস্থায় রয়েছে। এডিবি কোটি কোটি টাকা খরচ করে ল্যাবটি নির্মাণ করে দিয়েছে। মেয়র মহোদয় ল্যাবটি দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নিতে বলেছেন। জনবল নিয়োগ দিতে হবে। ফলে ল্যাব চালু করতে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।’

চসিক সূত্রে জানাযায়, ২০১৬ সালে জানুয়ারিতে নগরীর হামজারবাগ এলাকায় নির্মিত আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারটিতে কার্যক্রম শুরু হয়। এডিবি ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে ল্যাবটি নির্মাণ করা হয়। পরে ২০২১ সালে এডিবি সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলে যান। শুরুতে প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩৬ জনের মতো টেকনিক্যাল ও অন্যান্য জনবল থাকলেও বর্তমানে আট জন লোক কর্মরত রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় কর্মরতরা চাকরি ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও মাইক্রো-কেমিক্যাল ল্যাবে দুজন কেমিস্ট কর্মরত রয়েছেন। কাজ না থাকায় তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

ত্রিতল বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাব ও তৃতীয় তলায় মাইক্রো-কেমিক্যাল ল্যাব রয়েছে। ল্যাব দুটি খাদ্যদ্রব্যের মান পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক মেশিন, সংরক্ষণ ব্যবস্থাসহ যাবতীয় উপকরণ রয়েছে। কোটি টাকা দামের একাধিক মেশিন রয়েছে। ল্যাবে মেশিনারি ও আসবাব সবকিছু সাজানো গোছানো অবস্থায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ইনস্পেক্টররা মাঝে মধ্যে মান যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন খাদ্যের নমুনা পাঠাতেন। গত সাত-আট মাস যাবত তারা কোনো নমুনা পাঠাচ্ছেন না। ফলে ল্যাবের কার্যক্রম চালু না থাকায় বহু মূল্যবান মেশিনগুলো কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে। ল্যাবে রক্ষিত প্রচুর কেমিক্যাল মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তি সংবলিত খাদ্য পরীক্ষাগার আর নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ল্যাবে পরীক্ষার রিপোর্ট অফিস-আদালতে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। কারণ ল্যাবে পরীক্ষার রিপোর্টের সাইনিং অথরিটি না থাকায় রিপোর্ট প্রশাসনিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না। এতে কোনো সংস্থা থেকেও পরীক্ষার জন্য নমুনা আসছে না। চট্টগ্রামে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কোনো ল্যাব নেই।

প্রতিষ্ঠানের নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ফারহান ইসলাম বলেন, ঢাকায় ও চট্টগ্রামে কয়েকটি পরীক্ষাগারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। ফলে প্রয়োজন হলে আমরা এসব ল্যাবে পরীক্ষা করে থাকি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন নগরীতে প্রায় সময় ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। শুরুতে অভিযানে সংগ্রহ করা নমুনা চসিকের এই ল্যাবে মান যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হতো। ল্যাবটি চালু থাকলে চসিকের বছরে প্রচুর রাজস্ব আয় হতো।

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, রিপোর্টের সাইনিং অথরিটি কর্পোরেশনর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রদানের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো অনুমোদন মিলেনি। ল্যাব পরিচালনার জন্য জনবলের অভাব রয়েছে। জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর