chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আ জ ম নাছির নাকি আবদুচ ছালাম: কে হবে কালুরঘাট সেতুর দুঃখের সঙ্গী

নতুন কালুরঘাট সেতুর স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে চলে গেলেন পরপারে  দুজন সংসদ সদস্য। আশা পূরণ  হলো না বোয়ালখালীবাসীর । প্রত্যেকের মনে একটাই প্রশ্ন—এখন কী হবে? কালুরঘাট সেতু হবে কি হবে না, সেই প্রশ্নের চেয়ে এখন সাবেক মইন উদ্দীন খান বাদল (২০০৯–১৪, ২০১৪–১৯) এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদের (২০২০–২৩)  উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, সেটিই প্রধান হয়ে উঠেছে। কারণ, বিধান অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করে সংসদের খালি আসনটি পূরণ করতে হবে।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ইন্তেকাল করলে এই আসনটি শূন্য হয়। ষাটের দশকের তুমুল আন্দোলনের দিনগুলোতে ছাত্ররাজনীতিতে সম্মুখসারির নেতা ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতার পরও তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে যে কজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মোছলেম উদ্দিন একজন। প্রবীণ জাসদ নেতা মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

 

প্রয়াত এই দুই সংসদ সদস্য তাঁদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের কথা বলে গেছেন। রাজনীতির সঙ্গে দুজনেরই নাড়ির যোগ। হঠাৎ টাকা–পয়সাকে পুঁজি করে কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হিস্যায় তাঁরা দুজন রাজনীতিক হয়ে ওঠেননি। তৃণমূল মানুষের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ রেখে, পথেঘাটে, মিটিং–মিছিলে থেকে, জনপদের সমস্যা চিনে চিনে তাঁরা রাজনীতি করেছেন। এলাকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল বলেই তাঁরা মানুষের প্রকৃত চাহিদা কী বুঝতে পারতেন। তার জন্যই তাঁরা কালুরঘাট নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

মইন উদ্দীন খান বারবার বলতেন, কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়িত না হলে তিনি সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু পদত্যাগের সুযোগ তিনি পাননি, পৃথিবীটাই ত্যাগ করলেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদের তোড়জোড় কম ছিল না; কিন্তু দেশব্যাপী উন্নয়নের প্রবল স্রোতোধারাকে তিনিও কালুরঘাট পর্যন্ত আনতে পারেননি। কালুরঘাট সেতুর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি। লক্ষ্য বোয়ালখালীবাসীর প্রতিদিনের তীব্র বিড়ম্বনা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুই পাড়ে অপেক্ষমাণ মানুষের অপেক্ষার দুর্ভোগ আর আক্ষেপের অবসান তিনি দেখে যেতে পারেননি।

বোয়ালখালীর মানুষ এখন কালুরঘাট সেতুর জন্য আফসোসের চেয়ে হারানো এই দুই নেতার জন্য কষ্ট বেশি পান। পশ্চিম কধুরখীলের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু একদিন নিশ্চয়ই হবে। কর্ণফুলীর দুই তীরের মানুষের কষ্ট হয়তো একদিন লাঘব হবে। কিন্তু আফসোস থেকে গেল, মোছলেম উদ্দিন সেটি দেখে যেতে পারলেন না।’ মোছলেম উদ্দিন আন্তরিকভাবে কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ চেয়েছিলেন বলেই মানুষের এই আক্ষেপ। রাজনৈতিক নেতারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আইন প্রণয়নের জন্য। রাস্তাঘাট, সেতুসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের দায় তাঁদের নয়। তবু মানুষ বিশ্বাস করে সংসদ সদস্যরাই উন্নয়ন করেন। তাঁরা আন্তরিক হলেই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বোয়ালখালীর মানুষেরা এই বিশ্বাস থেকে পরবর্তী সময়ে কে হবেন সংসদ সদস্য—তা নিয়ে যতটা কৌতূহলী হওয়ার কথা, ঠিক ততটা নয়। চরণদ্বীপ গ্রামের ভোটার মোহাম্মদ নোমান বলেন, ‘একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ। পরবর্তী সংসদ নির্বাচন তো কদিন পরেই। এই কয়েক মাসের জন্য আবার ভোট। এ জন্য তেমন আগ্রহ পাচ্ছি না।’

মানুষের আগ্রহ থাক বা না থাক, বিধান অনুযায়ী উপনির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে ভোটারদের উৎসাহ না থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় লোকজন এবং আগ্রহীরা উদগ্রীব। কে আসছেন এবার?

 

আওয়ামী  লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে প্রথম নামটি হলো চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসন থেকে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমাদের নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ১০ বছর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রেখেছেন এই চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য। আমার সারাটা জীবন এলাকার মানুষের সঙ্গে কেটেছে। এলাকার জনগণের সঙ্গে তাঁদের সুখ–দুঃখে আছি, থাকব। উপনির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, তবে আমি নির্বাচন করব।’

এরপর নাম উচ্চারিত হচ্ছে সাবেক মেয়র এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  আ জ ম নাছির উদ্দীনের। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও, মোহরা ও পাঁচলাইশ এলাকা এই আসনের অন্তর্ভুক্ত। বলতে গেলে এই আসনের সবচেয়ে বেশি ভোট হচ্ছে নগরের অংশেই। আর তাঁদের রায় পেয়ে আমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমি মেয়র থাকা অবস্থায় নগরের এই অংশের উন্নয়ন করেছি। এলাকার প্রতিটি ইউনিট থেকে শুরু করে ওয়ার্ড, পাড়া–মহল্লায় প্রতিনিয়ত নানান রাজনৈতিক–সামাজিক–ধর্মীয় ও ক্রীড়ার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। তবে মনোনয়ন কাকে দেওয়া হবে, সেটি আমার দলই সিদ্ধান্ত নেবে। আমি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র হিসেবে যদি দল আমাকে বিবেচনা করে, তবে আমি নির্বাচন করব।’

বোয়ালখালীর বাসিন্দা প্রবীণ রাজনীতিক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম আবুল কালামের নামেও গুঞ্জন উঠেছে। আবুল কালাম বলেন, ‘আমি এই বোয়ালখালীর মাটির সন্তান। এই এলাকা আমার। এই আসন আমার। আমি সারা জীবন এই আসনের জনগণের সুখে–দুঃখে ছিলাম। আমি এই এলাকার সন্তান। দলের দুর্দিনে এই এলাকায় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আমিই ছিলাম। আমি এখান থেকে নির্বাচন করব। আমিই এই আসনের দাবিদার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন। চাইতে পারেন। আমি ২০০৮ সালেও চেয়েছিলাম। পরে আমাকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত করেছেন। ২০১৮ সালে কুয়েতে ছিলাম। তাই মনোনয়ন চাইতে পারিনি। তার আগে ১৯৮৬ ও ২০০১ সালে আমিই মনোনয়ন পেয়েছিলাম। ২০০১ সালের নির্বাচনে ২০ হাজার ভোটে হেরেছি।’

এ ছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন উপকমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম গোমদনন্ডী, পূর্ব গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম–৮ আসনে মোট ভোটার আছেন প্রায় পাঁচ লাখ। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এই পাঁচ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন, সেটি দেখার অপেক্ষায় চট্টগ্রামের মানুষ।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর