তাইওয়ান-চীন উত্তেজনা : ঢাকাকে পাশে চায় বেইজিং
ডেস্ক নিউজঃ তাইওয়ান নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনায় বাংলাদেশকে পাশে চায় চীন। দেশটি বিশ্বাস করে, আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি রক্ষায় চীনের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। চীনের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি সভার স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সাম্প্রতিক তাইওয়ান সফরের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা রাষ্ট্রদূত ওই বিবৃতি দেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত এমন একসময় ওই বিবৃতি দিয়েছেন যখন ওই দেশটির স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি চলছে। আগামীকাল শনিবার সকালে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। ওই সফরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাইওয়ান প্রণালিতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এ সফরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক সংস্থাবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিশেল জে সিসনও বাংলাদেশ সফর করবেন। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের আলোচনাতেই বৈশ্বিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পেতে পারে।
এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বিকেলে এক বিবৃতিতে ‘এক চীন’ নীতির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ তাইওয়ান প্রণালির ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং এই অঞ্চলে ও এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আহ্বান জানায়।
ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীনের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে মার্কিন প্রতিনিধি সভার স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি গত মঙ্গলবার তাইওয়ানে যান। এটি ‘এক চীন’ নীতি এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যৌথ ইশতেহারের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতারও লঙ্ঘন। এটি ‘স্বাধীন তাইওয়ানের’ জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোর প্রতি ভুলবার্তা। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর এর গুরুতর প্রভাব রয়েছে। চীন কঠোরভাবে এর বিরোধিতা ও তীব্র নিন্দা জানায়।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিশ্বে একটিই চীন আছে। তাইওয়ান চীন ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার পুরো চীনের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র আইনি সরকার। ’
লি জিমিং বলেন, ‘এক চীন নীতির’ প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বজনীন ঐকমত্য আছে। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মৌলিক আদর্শ।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির চীনের তাইওয়ান অঞ্চল সফর তাইওয়ান প্রণালিজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার গভীরভাবে অবমূল্যায়নই শুধু নয়, এটি ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ও বিরোধ সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে অস্থির হয়ে ওঠা বিশ্বে এটি আরো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু ও বিশ্বস্ত অংশীদার। সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা প্রশ্নে পরস্পরের মৌলিক স্বার্থকে দুই দেশ সব সময় বুঝেছে ও সমর্থন করেছে। ’
লি জিমিং বলেন, “তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রশ্নে বাংলাদেশের তীব্র বিরোধিতা এবং ‘এক চীন’ নীতির প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি চীন অত্যন্ত প্রশংসা করে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সরকার এক চীন নীতির সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ”