chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সমুদ্রপথে আরব থেকে চট্টগ্রামে আসেন হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রহ.)

আগামীকাল হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রা: আ:) এর বার্ষিক ওরশ

আগামীকাল সোমবার  আনোয়ারা উপজেলার বটতলী ইউনিয়নে অবস্থিত চট্টগ্রামের অন্যতম বুজুর্গ  হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রা: আ:) এর বার্ষিক ওরশ শরিফ।

ওরশ উপলক্ষে ইতিমধ্যে দরগাহ প্রাঙ্গণ তথা পুরো রুস্তম হাট বাজার, বটতলী ইউনিয়ন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।

“লাখের কাছাকাছি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভক্তগনের জন্য মোতোয়াল্লি,খাদেমগন, দরগাহ  পালা কমিটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন”।

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (রা: আ:) জীবনী

জন্ম ও বংশ পরিচিতি :

১৩০০ ইং খ্রিস্টাব্দে যে কোনো এক সময়ে রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে ইরাকের তুষ নগর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হযরত সৈয়দ আহমদ সুফি (কঃ) তার মাতার নাম সৈয়দা সানোয়ারা (কঃ)। উক্ত পিতা-মাতার ঔরশে তারা দুই ভাই জন্মগ্রহণ করেন।(১) বড়ভাই হযরত সৈয়দ আকন্দর নুরী (কঃ) ওরফে মুহসিন পরে মোহছেন শাহ ক্রমে মোহছেন আউলিয়া (কঃ) নামে পরিচিত হন। তার পূর্ব পুরুষগণ বংশ পরস্পরায় হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর বংশধর এবং তিনি ত্বরিকায়ে কাদেরিয়ার অনুসারী ছিলেন বলে জানা যায়।

শিক্ষাজীবন :

শিশুকালে তিনি স্বীয় পিতা আহমদ সুফি (কঃ) এর কাছে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপরে বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসা উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।

বিবাহ ও সংসার জীবন :

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) পৈতৃক ভূমি ইরাকে তুস নগরেই বিবাহ করে সংসার করেন, কিন্তু তার স্ত্রী নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার সংসারের একমাত্র কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। যার নাম সৈয়দা নুরজাহান ওরফে নির্মলা বিবি। উক্ত সৈয়দা নুরজাহানের সাথে তার বড় ভাইয়ের পুত্র হযরত সৈয়দ সেকান্দার শাহ (কঃ) বিবাহ হয়। তাদের পুরো 63 পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।(১) সৈয়দশাহ মনসুর (২) ছৈয়দ শাহ কুতুব (৩) সৈয়দ সাহ ইব্রাহিম। মাজারের সন্নিকটে প্রাচীনকাল থেকে বসবাস করে আসছেন। তাদের গোত্রীয় পরিচয় “মোকামী” বা গোএ তারা বর্তমানে মাজারের খাদেম হিসেবে আছেন কিন্তু তারা বংশানুক্রমে শাহ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ)  সাথে সম্পর্কিত বলে জানা যায়। বর্তমানে তারা মাজারের মোতোয়াল্লী ও খাদেম হিসেবে পরিচিতি।

চট্টগ্রামের রওয়ানা :

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) চট্টগ্রামে আগমন ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের পরে যে কোনো এক সময়ে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) সমুদ্র পথে চট্টগ্রামে আসেন এর পূর্বে তিনি স্বীয় পিতার কাছে কাদেরিয়া ত্বরিকায় বায়াত ও খেলাফত লাভ করেন। তৎসময়ে আরব দেশ থেকে মুসলিম সুফি সাধকরা ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন সূফীদের এই দেশে আসা মূলত উদ্দেশ্যে ছিল ধর্ম প্রচার করা। তার আগমনে কিয়াম পূর্বে হজরত বদর শাহ্ (কঃ) হযরত কাতাল পীরশাহ (কঃ) নামে দুইজন ইসলাম প্রচারক সুফি চট্টগ্রামে আসেন। এ সুফীগণ ত্বরিকায় কাদরীয়া আর অনুসারী ছিলেন বলে জানা যায়।

পাথরে চড়ে চট্টগ্রামে আগমন :

তৎকালীন সময়ে সমুদ্রপথে উন্নত মানের কোন সাম্পান বা ইঞ্জিনচালিত জাহাজের ব্যবস্থা ছিলনা। তাই একদা হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া (কঃ) চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে রওনা দিলেন। এবং ইরাকের সমুদ্র পারে আসলেন, আল্লাহ পাকের দয়া ক্রমে তিনি তার সমুদ্রপথে বাহন হিসেবে একটি কালো পাথরকে শনাক্ত করলেন এবং নিয়ত করলেন, ওই পাথর আল্লাহর নির্দেশে যে স্থানে গিয়ে থামবে স্থানই আমার ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্র। সে মতে তিনি শুধু ইরাক হতে পাথরে আরো ভীত হয়ে সমুদ্রপথের রওয়ানা দিলেন। আল্লাহর অলির নির্দেশে পাথরটি নৌকায় ন‍্যায় দ্রুতবেগে গভীর সমুদ্র চলতে লাগল। অবশেষে পাথরটি বর্তমান আনোয়ারা থানায় দক্ষিণ গহিরা গ্রামের পশ্চিমে সমুদ্র উপকূলীয় ইছাখালী গ্রামের কড়িরহাট বন্দরে এসে থেমে গেল। যা বর্তমান গহিরা সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় আট মাইল পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকেই ছিল। যা কালের বিবর্তনের সমুদ্রে তলিয়ে যায়। কড়িরহাট হচ্ছে মোহছেন আউলিয়ার পাথর থেকে প্রথম অবতরণ স্থান, যা বার আউলিয়া আস্তানা নামে খ‍্যাত। সেখান থেকে তিনি চলে যান তৎকালীন দেয়াং রাজ্যের বর্তমান আনোয়ারা থানা ঝিওরী গ্রামে।

ইসলাম প্রচার:

‌ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য জ্ঞানী ও দরবেশের অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান হতে এসে তাঁরা এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। বাংলাদেশ তথা চট্টগ্রামের আশেপাশে কতিপয় অসভ্য জংলী জাতীয় লোক বসবাস করত। ধর্ম ও তার কর্ম সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানত না। তাই এ সমস্ত অসভ্য জংলী জাতীয় লোকদিগকে ইসলামের উজ্জ্বল আলোকে আলোকিত করেন, তৎকালীন সমাজের কুসংস্কার,দুর্নীতি,সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা,পরশীকাতরতা,ধর্মীয় গোড়ামী, মূর্তিপূজা ও অমুসলমানদের মুসলমান করেন যিনি, তিনি হচ্ছে আধ‍্যাত্নিক শক্তি-সম্পন্ন কামেল পুরুষ শ্রেষ্ঠ সাধক ও অন্যতম ধর্মপ্রচারক হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ)।

ঝিওরী গ্রামের অবস্থান :

শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) ঝিওরী গ্রামে অবস্থানকালে তৎকালীন সঙ্খনদীর উপকূলে গড়ে তুলেন আস্তানা শরীফ। তৎকালীন ঝিওরী গ্রাম ছিল পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুদের নৌবন্দর। পর্তুগীজ ও মগ জলদস্যু সেই লোমহর্ষক ঘটনাবলী কেন্দ্র ছিল উক্ত নৌবন্দরটি। যার প্রাচীন নাম “অঙ্গরকালী বন্দর ” বর্তমান নাম “আষাড়খালী”। তার অলৌকিক শক্তি প্রচার প্রচারের সাথে সাথে অত্র এলাকার ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসার ও অতিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে এবং অত্র অঞ্চলে গড়ে উঠে লোকারণ শহর।শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) আশার অল্পদিনের মধ্যে তার কন্যা সৈয়দ নুরজাহান ও জামাতা শহীদ সেকান্দার (কঃ) হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) সন্ধানে আনোয়ারা ঝিওরী গ্রামে এসে পৌঁছেন।

অঙ্গর কালি আষাড়খালী হতে ঝিওরী নামকরণ:

অঙ্গরখালীর স্থানীয় এক মহিলা হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ)ভক্ত ছিলেন। তিনি তাকে অধিক ভক্তি করতেন এবং প্রায় সময়ই শাহ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) দরবারে হাদিয়া তোহফা নিয়ে আসতেন। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া তাকে অতি আদর স্নেহ করতেন সে সূত্রে তিনি তাকে প্রায় সময়ে আদর করে “ঝি” সম্বোধন করতেন।এ “ঝি” শব্দ হতে তৎসময়ে অএ গ্রামের নাম ঝিওরী নামে নামকরণ করা হয়। পূর্বের অঙ্গরখালীর নাম বিলুপ্ত হয়ে যায়।

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) কারামাত

বোবা ছেলের জবান লাভ :

হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া(কঃ) অনেক অলৌকিক ঘটনা কাহিনী আজও মানুষের মুখেমুখে জনশ্রুতি রয়েছে। একদিন এক বোবা রাখাল ছেলে তার আস্তানার পাশে নদীর তীরে গরু চরাইতেছে।শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) যেকোন প্রয়োজনে তাকে কাছে ডাকলেন।তার নাম ও ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেন,

বোবা ছেলে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।”আও” “মাও” করছে। তখন  শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) বুঝতে পারলেন যে,ছেলেটি বোবা,জবানে কথা বলতে পারছে না। তখন মোহছেন আউলিয়া তার মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন এবং “যাও সামনে যাও” বলে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে বোবা ছেলেটির জবান খুলে গেল, ছেলেটি “মা মা”বলে চিৎকার দিয়ে বাড়িতে চলে যায়। এবং পিতা-মাতা কেয়সা মোহছেন আউলিয়া (কঃ) এর অলৌকিক কারামাতের কথা বর্ণনা করলে ক্রমে মানুষের মুখে মুখে উক্ত কারামাত প্রচারিত হয়ে যায়।

মাটি চিবিয়ে গরুর দুধ বের করা :

ঝিওরী গ্রামের এক বিধবা গোয়ালিনী প্রতিদিন হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ)এর জন্য গরুর দুধ আনতে,একদা মহিলাটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মহিলার একজন ছেলে ছিল তাকে দিয়ে কলসি ভর্তি করে দুধ পাঠালেন। ছেলেটি দুধ নিয়ে যথা সময়ে শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) আস্তানার অতি নিকটে পৌঁছলে হঠাৎ মাটিতে হোঁচট খেয়ে গেলে কলসি সমস্ত দুধ মাটিতে পড়ে চুপসে যায়।কিন্তু কলসি অক্ষত রয়েছে।ভয়ে ছেলেটি জুড়ে দেয় অঝোর কান্না, ছেলেটির কান্না দেখে শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) ঘটনাস্থলে যান। দেখতে পান কলসীটি অক্ষত থাকলে এসব দুধ মাটিতে সবচেয়ে যায়। তিনি ছেলেটির কান্না থামাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কান্না থামে না।শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) তখন মাটিকে হুকুম করলেন দুধ ছেড়ে দিতে সাথে সাথে মাটির উপর দুধ ভেসে উঠলো। তিনি দুধগুলি কলস ভর্তি করলেন। কলসটি পূর্বের মত দুধে ভর্তি হল।

বৃষ্টি বর্ষণ :

আল্লাহ পাকের কুদরতি লীলা খেলা বোঝা কঠিন এক বছর চট্টগ্রামে বৈশাখ,জ্যৈষ্ঠ,আষাঢ় তিন মাসের মধ্যে কোন বৃষ্টি হয়নি ক্ষেতখামার শুকিয়ে যায়,ফসল নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাঘাট শস্য ক্ষেত উত্তপ্ত গরমে ঝলসে যায়। পানির অভাবে মানুষ হাহাকার করছে। তখন ঝিওরী ও তার আশে পাশে গ্রামের লোকজন দল বেঁধে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়ার(কঃ) ঝিওরী আস্তানায় গিয়ে হযরত এর কাছে আরর্জি করলেন, তিনি তখন আগত সকল লোকজন নিয়ে জামাত সহকারে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন এবং সবাইকে সাথে নিয়ে দুই হাত তোলে মোনাজাত করলেন। মোনাজাত সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। তৎ সময় হতে অদ‍্যবধি এখনো চট্টগ্রামে আষাঢ় মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। এটা শাহ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) উল্লেখযোগ্য কারামাত বলে চট্টগ্রামের জনশ্রুতি রয়েছে। এই ধরনের আরো অনেক অনেক অলৌকিক ঘটনা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে বিভিন্ন ধর্মের গোত্রের লোক শাহ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) সংস্পর্শে শিষ‍্যত্ব গ্রহণ ও ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে সমবেত হতে থাকে।

বাতাসের উপর আরোহণ :

কথিত আছে যে, হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) ঝিওরী গ্রামে বসবাস কালে পায়ে হেঁটে বা কোন প্রকার বাহনে চড়ে চলাফেরা করতেন না। তিনি শুধু চট্টগ্রাম নাই তৎকালীন আমলে চট্টগ্রামের বাহিরে অনেক স্থানে সফর করেছেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় তার একটি আস্তানা রয়েছে বলে জানা যায়। তিনি পাখির ন‍্যায় বাতাসের উপর আরোহণ করে দূর-দূরান্ত চলাফেরা করতেন বলে জানা যায়। জনশ্রুতিতে জানা যায় যে দৈব বলে একদিন হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) পাখির ন‍্যায় বাতাসের উপর আরোহণ করে ঝিওরী হতে পূর্ব দিকে কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি আনোয়ারা থানায় হাইলধর পর্যন্ত পৌঁছলে তখন উক্ত হাইলধর গ্রামে শাহ্ কম্বলিয়া (কঃ) নামে এক বুজুর্গ বসবাস করতেন।শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) বাতাসের আরোহন করে যাওয়ার। হযরত শাহ কম্বলিয়া (কঃ) দৃষ্টি গোচর হলো, তিনি আধ‍্যাত্নিক প্রভাবে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) আকাশ থেকে ভূমিতে নামিয়ে ফেললেন। এতে বোঝা যায় উক্ত হযরত কম্বলিয়া (কঃ) ও শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ)সম-সাময়িক ওলি বা বুজুর্গ ছিলেন।

হযরত শাহ্ মোহছেন (কঃ) নামকরণ :

তার আসল বা পিতা-মাতার রাখার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ মসনদ শাহ ঝিওরী গ্রামে ও তিনি এই নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে ঝিওরী গ্রামে পর্তুগিজ মগদের বসবাস এরা তাকে “মুছেন শাহ” বলে ডাকতেন ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে তার মেয়ে বংশীয় আওলাদ (১) শেখ মনছুর (২) শেখ কুতুব (৩) শেখ ইব্রাহিম তিন জনের নামে চট্টগ্রামের নবাব বুজুর্গ উমেদ খাঁ (কঃ) একটি সনদের দশ দ্রোন জমি লা খেরাজ দলিল করে দেন। যার অংশ শাহ মোহছেন আউলিয়ার মাজারের ব্যয় করা হবে মর্মে উল্লেখ আছে। এই সনদ পত্রে শাহ মোহছেন আউলিয়া রাজস্থানের লিখা হয়েছে শাহ মসনদ উপাধি “জাহান শাহ” অর্থাৎ পৃথিবীব‍্যাপী মর্যাদাবান ১৬৬৬ খৃষ্টানদের শেষ পর্যন্ত ওরা মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) মাজার ঝিওরী গ্রামে অক্ষত ছিল ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে কোন সময়ে তার মেয়ে ও ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে কোন এক সময়ে মেয়ের জামাতা উক্ত ঝিওরী গ্রামের বেছাল প্রাপ্ত হন। তাদেরকেও ঝিওরী গ্রামে শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) পাশে সমাহিত করা হয়।

আউলিয়া নামকরণ :

‌যারা আধ‍্যাত্নিক সাধনাই কামেয়াব হন তারা অলি,অলি একবচন তার বহুবচন হচ্ছে আউলিয়া অলিদের মধ্যে যিনি সর্দার তাকে আওলিয়া বলা হয়। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) তার সমসাময়িক যুগের অলিদের সর্দার ছিলেন।তাই তাকে নামের পরে আওলিয়া শব্দ যুক্ত হয়।

‌হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) কারামাতি পাথর :

‌ যে পাথরের শহরে শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) সুদূর ইরাক থেকে চট্টগ্রাম এসেছেন পাথরটি সোয়া দুই হাত লম্বা,দেড় হাত চওড়া যা কালো মর্মর প্রস্তর বলেই মনে হয় এর ওপর কিছু আরবী অক্ষর লিখা আছে। প্রাচীনকাল থেকে জনশ্রুতি রয়েছে হযরত মোহছেন আউলিয়া (কঃ) সুদূর ইরাক হতে সমুদ্রপথে উক্ত পাথরে করে ভেসে চট্টগ্রামে এসেছেন। তবে পাতার পানিতে বাসে কি করে এ প্রশ্ন অনেকের। এই পাথরটি ১৭০০ ইংরেজি সাল পর্যন্ত ঝিওরী গ্রামের মাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অক্ষত ছিল। জিয়ারতকারীরা বিভিন্ন নিয়তে তাতে পানি ঢেলে তা পান করতেন যা বর্তমান আনোয়ারা বটতলী গ্রামে স্থিত। বর্তমান মাঝারে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বারান্দায় গ্লাস দিয়ে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে।

বেছাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতভেদ : লেখক জামালউদ্দিন কর্তৃক লিখিত “বার আউলিয়ার চট্টগ্রাম” গ্রন্থে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) ১৩৯৮ইং সালের আষাঢ় মাসে আনোয়ারা থানায় ঝিওরী গ্রামে বেছাল হন। এই মতটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অনেক ঐতিহাসিকদের মতে ১৪০০ইং সালের শেষ সময়ে আষাঢ় মাসে তিনি বেছাল হন। তাদের যুক্তি চট্টগ্রামের বার আউলিয়াদের আগমন ঘটে ১৪০০ সালের শুরুর দিকে ১৪০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ)ও হযরত শাহ বদর আউলিয়া (কঃ) উভয়ে জীবিত ছিলেন। বলে ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে,সুতরাং দ্বিতীয় মতটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা করা যায়। তার মেয়ের জামাতা সেকান্দার শাহ (কঃ) এর তত্বাবধানে তাকে ঝিওরী গ্রামে সঙ্খনদীর  অতি নিকটে সমাহিত করা হয় প্রতি বছর আষাঢ় মাসে ৫,৬,৭ তারিখে সেখানে তার ওরস উপলক্ষে মেলা বসতো বলে জানা যায়। ভেজালের পর তার একমাত্র কন্যা নুরজাহান ওরফে নির্মলা বিবিকে উত্তরাধিকার রেখে যান। নির্মলা বিবির তিন পুত্র সন্তান ছিল শেখ মনসুর,শেখ কুতুব,শেখ ইব্রাহিম। এদেরকে জীবিত রেখে ১৫০০ ইং সালে যে কোন সময়ে নির্মলা বিবি (কঃ) ভেজাল হন।১৫১০ এর ইংরেজির আগে-পরে যে কোনো এক সময়ে নির্মলা বিবির স্বামী সৈয়দ ছেকানদার শাহ (কঃ) ভেজাল হন। তারা উভয় ঝিওরী গ্রামে শাহ মোহছেন আউলিয়া রওজার পাশে সমাহিত এবং অত্র গ্রামে মোহছেন আউলিয়ার আস্তানার পাশে সম্রাট সুলতান ফিরোজ শাহ  ১৩৯৭/১৪০০ ইং সালের তৎসময়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন। ঐতিহাসিকদের মতে তখন ও শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) জীবিত ছিলেন।

ঝিওরী হতে বটতলীতে মাজার স্থানান্তর :

স্বপ্নে শাহ মোহছেন আউলিয়ার নির্দেশ :

ঝিওরী গ্রামে সমাহিত শাহ মোহছেন আউলিয়ার মাজার সঙ্খনদীর অতি নিকটে হওয়ার ক্রমেই নদী ভাঙ্গনে এক পর্যায়ে মাজার নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় একদা নদীর ভাঙ্গনে তার কফিন দেখা যেতে লাগল। জনশ্রুতি আছে এর অনেক পূর্বে শাহ মোহছেন আউলিয়া বড় ওঠানের জমিদার পরিবারে চুলকাটা গ্রামের জমিদার জবরদস্ত খাঁ (মনুমিয়া) এর পিতা শের মাস্তান খাঁ এবং পরবর্তীতে রহমত খাঁ ও হোসেন খানকে স্বপ্নে দেখেন যে । কফিনটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে। তারা তাতে কর্ণপাত করেননি, যে কারণে পরবর্তীতে তাদের জমিদারত্ব ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর পুনরায় ঝিওরী গ্রামের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী অধিবাসীকে স্বপ্নে দেখেন যে,ঝিওরী হতে উত্তর দিকে পাহাড়ের উলুবন নামক স্থানে তিন চাকার বিশিষ্ট বিশাল বটগাছ দেখতে পাবে ওই বট গাছের উপর রাতের বেলায় আপনা-আপনি বাতি জ্বলবে দেখবে সে বটগাছের তলায় আমার ও আমার মেয়ে এবং জামাতার কফিন তুলে এনে পুনরায় সমাহিত কর। স্বপ্নে উপদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখতে পান পাহাড়ের এমনি একটি জায়গা যাতে চতুর্দিকে ও উলুবনে মধ্যকানের তিন শাখা বিশিষ্ট একটি বিশাল আকারের বটবৃক্ষ যাতে সন্ধ্যার পর আপনা আপনি বাতি জ্বলছে। ওইদিকে সংঘ নদীর ভাঙ্গনে শাহ মোহছেন আউলিয়ার কফিন শঙ্খনদীতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। তারা কফিনটি নদীর পাড় থেকে তুলেন এবং পাশে স্থিত মেয়ে ও মেয়ের জামাতার কফিনও তুলেন। তিনটি কফিন স্ব-সম্মানে এনে বর্তমান বটতলী গ্রামে বটতলায় পুনরায় সমাহিত করেন। বর্তমানে বটতলীতে মাজার ঘরের আন্দরে যে রওজা তা হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) পূর্ব পাশে শায়িত তার মেয়ে নূরজাহান ওরফে নির্মলা বিবি (কঃ) ও তার ছবি আসামি হযরত সিকান্দার শাহ (কঃ) তার পুত্র শেখ ইব্রাহিম (কঃ), শেখ কুতুব (কঃ) শেখ মনসুর (কঃ) এবং নির্মিত হলো বটতলীতে হযরত মোহছেন আউলিয়া (কঃ) মাজার সেখানে তিনি অদ‍্যবধি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। বটতলীতে মাজার স্থানান্তর ১৭০০ হতে ১৭৬০ এর মধ্যে যে কোনো এক সময় হয়েছে বলে জানা যায়।

বার আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) :

ঐতিহাসিক ডক্টর আবদুল করিম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগৃহীত একখানা প্রাচীন পান্তুুলিপি থেকে সুফি এবং পীরদের কয়েকটি তালিকার সংগ্রহের তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাতে একখানা তালিকায় শাহ বদরের আমলের হজরত বদর শাহ্ (কঃ) এরপরে শাহ মোহছেন আউলিয়ার নাম রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম কারেক্টরিটে রক্ষিত সনদের ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে একখানি নকলে এবং মছনদ উভয় নামে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রবন্ধে লেখেন শাহ মোহছেন আউলিয়ার এর নামেই তিনি সাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে লেখকরা নামটি শুদ্ধ করার জন্য “মছনদ” হতে ক্রমে মোছেন, মোহছিন, মোহছেন, আউলিয়ার লিখতে থাকেন। এই মহান আওলিয়া মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে আছে এবং চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার প্রমান হলো তার নামে অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা মসজিদ পাঠাগার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের দোকানে মহান অলি নামে লিপিবদ্ধ আছে। অতএব তিনি আমাদের মাঝে কেয়ামত পর্যন্ত এভাবে বেঁচে থাকবেন।

অভিশাপে জমিদার রুস্তম আলীর বংশহীন :

কথিত আছে যে বড় ওঠানের জমিদার রুস্তম আলী খান এবং শোশকাটা গ্রামের প্রত্যেক জমিদার শেরমস্ত খাঁ এবং তার পুত্র জবরদস্ত খাঁ প্রকাশ মনু মিয়া জমিদার হযরত মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) স্বপ্নের নির্দেশে কপি স্থানান্তর করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার হুকুম পালন না করার কারণে তাদের জমিদারত্ব ধ্বংস হয়ে যায় এবং মনু মিয়া জমিদার শাহ মোহছেন আউলিয়ার কর্তৃক ও অভিশপ্ত হয়ে গোল্লা বানু ও মলকাবানু নামক ঐতিহাসিক গুণবতী সুন্দরী রমনীকে বিয়ে করেও কোন পুত্র সন্তানের মুখ দেখেননি এবং বংশ হীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

 রুস্তমহাট নামকরণ :

জবরদস্ত খাঁ প্রকাশ মরমিয়া জমিদারের বড় বোন কালাবিবির স্বামী বড় উঠানের দেওয়ান মনোহর আলী খানের বংশধর রুস্তম আলী খান শেষ জীবনে নিজের বোন ও বেয়াদবির কথা বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থী হয়ে শেষ জীবনে হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া (কঃ) এর মাজারের এত ভক্ত হয়ে গিয়েছেন যে তিনি দিন-রাত মাজারে বসে আল্লাহর এবাদতের মশগুল থাকতেন, মাজারের শ্রী বৃদ্ধির জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এক বিশাল বাজার উত্তর বাজারে বর্তমানে রুস্তম আলী খানের নামানুসারে রুস্তমহাট নামেই পরিচিত। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) এর মাজারের বারান্দায় তার ইন্তেকাল হয় বলে জানা যায়।মাজারের পাশে কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

১৯৬১ ইং সালে কফিন স্থানান্তর লংকাকান্ড :

ভক্তদের মধ্যে এ প্রবাদ প্রচলিত আছে হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) কফিন কেয়ামতের পূর্বে তিনবার স্থানান্তরিত হবে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।ঝিওরীতে একবার বটতলীতে একবার দুইবার কফিন স্থানান্তরিত হয়েছে তৃতীয় স্থানান্তর কোথায় হবে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। কিন্তু আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (কঃ) তার লিখিত দেওয়ানে আজিজে স্পষ্ট লিখছেন হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) মাজার তৃতীয় বারের মত আর কোথাও স্থানান্তরিত হবে না। এমতাবস্থায় ১৯৬১ ইং সালে চট্টগ্রাম বোয়ালখালী থানার সরোয়াতলী গ্রাম নিবাসী হালিশহরের হাফেজ মনিরুদ্দীনের খলিফা মাওলানা আব্দুল হাকিম সাহেব বটতলি থেকে মোহছেন আউলিয়ার (কঃ) কফিন তৃতীয় বারের মতো স্থানান্তরের ঘোষণা দেন তিনি সরোয়াতলী তে একটি কবর খনন করে বক্তারা প্রস্তুতিমূলক বাঁশ গাছের লাঠি তলোয়ার বলম তৈরি করে বটতলী থেকে কফিন নিয়ে আসার জন্য মরণপণ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন অন্যদিকে বটতলী বাসিরা তার প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেন। কিছুতে এশা মোহসেন আউলিয়া (কঃ) কফিন বটতলী থেকে বোয়ালখালীতে নিতে দিবেন না এই নিয়ে চট্টগ্রাম এমনকি পূর্ব-পাকিস্তান প্রশাসনকে নাড়া দেয়। চট্টগ্রামে তৎকালীন জেলা প্রশাসক একেএম ওবায়দুল্লাহ খান মাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেন জেলা প্রশাসক মাওলানা আবদুল হামিদকে বললেন আমি হলাম চট্টগ্রামের গভর্নর শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) কফিন স্থানান্তরের জন্য স্বপ্নে আমাকে দেখাতে হবে আপনাকে কেন স্বপ্নের দেখাবেন? আপনি এ কাজ থেকে বিরত থাকুন, কিন্তু মাওলানা আব্দুল হামিদ তা অমান্য করেন। তাকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তার শতাধিক ভক্ত মুরিদান সহ জেলে ঢুকিয়ে দেয় তাতে তিনি ভক্ত-মুরিদার সহ দীর্ঘদিন কারাগারে অবস্থান করেন।

হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া‌ (কঃ) চাটি চেরাগ :

‌হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) চাটি চেরাগ যা বর্তমানে ও মাজারে রক্ষিত আছে। এ ঐতিহাসিক দুইটি চেরাগ যা স্বয়ং শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) নিজেরই হাতের তৈয়ারী পিতলের চাটি যা তৎকালীন ঝিওরী  আস্তানায় জ্বালাতেন আজও সেই নিয়মে বর্তমান মাজার শরীফে কর্তব্যরত খাদেম প্রতিদিন মাগরিবের আজানের পূর্বক্ষণে তা জ্বালিয়ে দেন। কথিত আছে যে, নির্দিষ্ট মানস কামনা পুরণার্থে জ্বালানো চাটি সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত জ্বলে ও এককই পরিমাণ তেল বাতিতে থেকে যায়। তাতে ধারণা করা হয় যে, তার মানস কামনা পূরণ হয়নি। আবার অনেক সময় সন্ধ্যা থেকে সকালের মধ্যে সমস্ত তেল নিঃশেষ হয়ে যায় তাতে ধরে নেওয়া যায় তার মানুষ কামনা পূর্ণ হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত বাতি জ্বালিয়ে এরপরও কিছু তেল কড়িতে থেকে গেল ঐ তেল কর্তব্যরত খাদেমগণ সংগ্রহ করেন। উত্তর তেল মাজারে আগত ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয় এ-তেল ব্যবহার করে ভক্তরা বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করেন।

‌ হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) চাটির উপর বিদ্যুৎ বাতি ও ফ‍্যান ঘূরে না :

উল্লেখ্য যে, শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) চাটি দু’টি যখন জ্বালানো হয় তার মাজার শরীফের উত্তর পাশে ঐ চাটি দু’টির উপরে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলেনা এবং বৈদ্যুতিক ফ্যান ও ঘুরেনা এ যাবৎ অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু প্রতিটি প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে যে কারণে চাটি দু’টির নিকটবতী কোন বৈদ্যুতিক বাতি কিংবা ফ‍্যান দেওয়া আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এসবকিছু মাজারে দায়িত্বরত মোতওয়াল্লীগনের বর্ণনা।

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) মাজার পরিচর্যায় সাত হিন্দু পরিবার :

হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) মাজারে এসে প্রাচীনকাল থেকে আজ উদ্বিগ্ন ছাউনের ছাউনিতে আচ্ছাদিত শতশত বছর দরে এর উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় তুফান বয়ে গেছে এমনকি ১৯৯১ ইং ২৯ শে এপ্রিলের ভয়াবহ বন্যায় আনোয়ারা থানায় ২০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু এই মাজারের উপর ছাউনির তিল পরিমাণও ক্ষতি হয় নিয়ে মাজার গৃহের ছাউনির কাজ করে আসছেন সে আদিকাল থেকে সাতটি হিন্দু পরিবার। জানাজায় এরশাদ পরিবারের পূর্বপুরুষ পেশাগত একজন “ঘারোজা” ছিল। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) জীবদ্বাসায় প্রতিবছর নিয়মিত সে ঝিওরী গ্রামে অবস্থিত হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) এর বসত ঘরের ছাউনির কাজ করতেন সে কালিমা না পড়ে মুসলিম না হলেও তার একান্ত অনুরক্ত তো ভক্ত ছিল তিনিও তাকে ভক্তি করতেন ও অত‍্যন্ত ভালবাসতেন।উক্ত “ঘারোজা” বংশধরগণ বর্তমানে সাত পরিবারে বিভক্ত। চট্টগ্রাম আনোয়ারা থানার বিলপুরে তারা বসবাস করছে। হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (কঃ) তার উত্তরাধিকারী খাদেমদের ওসিয়ত করে যান যে, উক্ত “ঘারোজা” বংশধর দিয়ে যাতে তার আস্তানা প্রতিবছর ছাউনি দেওয়া হয়। যে কারণে অদ্যাবধিও বিলপুরের ঘারোজার বংশধর দিয়ে হযরত শাহ মোহসেন আউলিয়া (কঃ) মাজার ছাউনির দেওয়ার রেওয়াজ প্রচলন রয়েছে।

মাজার ছাউনি দেওয়ার নির্ধারিত সময় :

প্রতিবছর চৈএ ও বৈশাখ মাসের ছাউনি দেওয়ার সমাধা করা হয়। যেদিন বৈশাখ হিন্দু পরিবারের মাজার ছাউনি কাজ করতে আসবেন পুরানো মতে কর্তব্যরত মোতওয়াল্লী ঐ বংশের নবা আগতদের হাতে “দা তুলে দেবেন এবং তারা কাজ শুরু করবেন। চার চালা বিশিষ্ট মাজার ঘরটির প্রথম ছাউনি হয় দক্ষিণ চাল।ঐ চালের কাজ শেষ হলে পর পশ্চিমের চাল, তারপর উত্তর চাল, সর্বশেষ পূর্বে চাল, মাজার ছাইতে গিয়ে এ হিন্দু “ঘারোজারা”ছাউনির কাজে ব্যবহার যোগ্য যেকোনো জিনিস বিনা অনুমতিতে যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারেন। কেহ তাদের বাধা দেয় না। ছাউনির কাজে ঐ সাত হিন্দু পরিবারের ৩০/৪০ জন লোক পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেন। সকালে চালায় উঠে পায়ে ঘাম বের হওয়া পর্যন্ত তারা চালেই অবস্থান করেন। ঘাম বের হবে আঁচ করতে পারলে দ্রুত চালা থেকে নেমে পড়েন। চারটি চালা চাইতে ২০থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায় আশ্চর্যের বিষয় এ মাজার ছাওয়ার সময়ে কোন ঝড় বাদল হয়না, ঘরোজারা ঐ সময়ে নিয়মিত নিরামিষ ভোজন করেন।এ ছাউনি কাজ সম্পাদনের প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী মাজার কমিটি  থেকে পারিশ্রমিক হিসেবে পান ছাউনি  বাবদ ১ টাকা ৪ আনা শুরুতেই পালা জলপান বাবদ ১ টাকা খাদ্য ভাবত মাজারের পালা প্রতি ২ টাকা হিসাবে ১৯ আনা থেকে ৩৮ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ৪৮ টাকা ৪ আনা প্রদান করা হয়। ঘরোজাদের অন্য কোন দাবী না থাকলেও মাজার কমিটির পক্ষ থেকে তাদেরকে বকশিশ উপাদান করা হয়। এরপর এরা আগত জিয়ারত কারীদের নিকট থেকে টাকা-পয়সা-চাল ডালসহ প্রচুর উপকরণ সংগ্রহ করে যা তাদের বছরের আয় হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর