chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চোখে জল, মানবণ্টন নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেষ ঘণ্টা বাজতেই একে একে বের হয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। কেউ একা, কেউ বের হচ্ছিল দল বেঁধে। কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থেকে স্কুলের আঙিনা হঠাৎ শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে। গণমাধ্যমকর্মীরাও অপেক্ষা করেছিলেন পছন্দসই ছবি ফ্রেমবন্ধী করতে। হঠাৎ স্কুলের এক কোণে শিক্ষার্থীদের একটি জটলায় চোখ আটকে যায়। চারদিক ঘিরে রাখা কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে এক শিক্ষার্থী কান্না করছেন। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে চোখের জল মুছে দিচ্ছিল অপর এক বান্ধবী। সান্ত্বনার পরও তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল জল

শিক্ষার্থীদের চোখে জল, মানবণ্টন নিয়ে অসন্তোষ শিক্ষার্থীরা
আজ থেকে শুরু হয়েছে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা। চাপের কারণে পরীক্ষার খাতায় ছোট্ট একটি ভুল করে বসেন এক ছাত্রী। আর তাতে ফল খারাপের আশঙ্কায় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই ছাত্রী। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

অনবরত কান্না করে যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর নাম সুমাইয়া তাসনু। স্মরণকালের দীর্ঘ ছুটি শেষে সুমাইয়া আজ বসেছিলেন এসএসসি পরীক্ষায়। নগরের কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন।

কান্নার কথা জিজ্ঞেস করতেই সুমাইয়া নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করেন। তখনও তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, রচনামূলক পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন আমার জানা ছিল। কিন্তু টেনশনে ভুল উত্তর লিখেছিলাম। কিন্তু মনে পড়ার পর নতুন করে লিখার সময়-সুযোগ ছিল না। ভুল উত্তর কেটে দিয়ে চলে আসছি। এই ভুলের কারণে আমার ফলাফল অনেক খারাপ হবে। আড়াই নম্বর কেটে ফেলবে।

সুমাইয়া কথা বলতেই পাশ থেকে এক বান্ধবী সান্ত্বনা দিয়ে বলছিল ‘স্যার ইচ্ছে করলে তোকে নম্বর দিতে পারে, মনে কষ্ট নিস না। কান্না করিস না। সামনের পরীক্ষাগুলো ভালো করে দে। রেজাল্ট ভালো হবে।

করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনলাইনে ক্লাস চললেও সশরীরে ক্লাস থেকে বঞ্চিত হন শিক্ষার্থীরা। নতুন আঙিকে মানবণ্টন, প্রশ্নপত্রের সময় ও নম্বর বিভাজন নির্দেশিকার আলোকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দিনে পদার্থবিদ্যা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) থাকছে বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন পরীক্ষা।

সুমাইয়ার মতো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। খাতায় কাঙিক্ষত উত্তর দিতে না পেরে অনেকের মুখ ছিল ভার। একলা দাঁড়িয়ে ছিল স্কুলের বারান্দায়। কেউবা মানবণ্টন, প্রশ্নপত্রের সময় ও পরীক্ষা সূচি নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানান।

মেহেরুন ছাদিয়া নামে এক শিক্ষার্থী চট্টলার খবরকে বলেন, এখন ৩২ নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে একটি ভুলের জন্য এক নম্বর কেটে নেওয়া হতো। কিন্তু এখন একটি ভুলের জন্য আড়াই নম্বর কেটে নিচ্ছে। এ ছাড়া জেএসসি পরীক্ষায় মূল্যায়নের ওপর আমাদের এসএসসির রেজাল্ট নির্ধারণ হবে। কেউ জেএসসিতে খারাপ করলে এসএসসি ভালো করলেও রেজাল্ট খারাপ হবে। এসএসসির পরীক্ষার ভিত্তিতে ফলাফল মূল্যায়ন করলে ভালো হতো।

নামিয়া রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে কোচিং, ক্লাস ও পড়াশোনা থেকে দূরে ছিলাম। এ বছর মাস্ক পরে, এক বেঞ্চে বসিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে। প্রশ্ন পেয়ে আমরা কিছুটা বিব্রত হয়েছি, অল্প ভুল করলে মার্ক কেটে নিচ্ছে। প্রশ্ন কিছুটা কঠিন হলেও কেউ আমাদের অটোপাস বলতে পারবে না। রসায়ন পরীক্ষায় আর একটা দিন বন্ধ দিলে সবার জন্য ভালো হতো।

ময়মন্ত্রী বণিক নামে এক শিক্ষার্থী পাঠদানের আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দাবি জানান। পরীক্ষার পর কেন্দ্রের বাইরে মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অর্পণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন, মানসিকভাবে আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। পরীক্ষার হলে অনেক বন্ধুরা জানা প্রশ্ন ভুল করে দিয়ে আসছে। আমাদের পড়ানো হয়েছে এমন বিষয়গুলো পরীক্ষায় আসলে ভালো করতে পারব।

এর আগে সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামে শুরু হওয়া এসএসসির পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহমুদদুল্লাহ মারুফ। এসময় তিনি পরীক্ষার যাবতীয় বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি বলেন, অল্ব সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমে গতি ফেরাতে কাজ চলছে। সময় ব্যাপ্তি না বাড়িয়ে এক প্রকার ব্যাসিক ট্রায়ালের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রেগুলোতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অভিভাবকদের কেন্দ্রের বাইরে অহেতুক ভিড় না করতে আহ্বান জানান তিনি।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর