chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বছর ঘুরে একই ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ড, ধোঁয়াশায় ভাড়াটিয়ারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার রাত দশটা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. নুরুল আলমের মুঠোফোনে কল আসে ছোট ছেলের। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ছেলে ভাড়ায় থাকা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ডের কথা জানান। ফোন পেয়ে দ্রুত কর্মস্থল থেকে ছুটে আসেন নুরুল আলম।
দীর্ঘ বারো বছরের বেশি সময় ধরে পরিবারসহ উত্তর কাট্টলীর এলাকার কমিউনিটি সেন্টার রোডের মরিয়ম ভিলায় ভাড়া থাকেন তিনি। বাসায় এসে তিনি জানতে পারেন ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গেল বছরের সাত নভেম্বর একই ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।

মো. নুরুল আলম চট্টলার খবরকে বলেন, ঘটনার দিন রাতে বাসায় ছিলাম না। বাচ্চার ফোন পেয়ে বাসায় আসি। অগ্নিকাণ্ডের বিকট শব্দ শুনে আমার ছেলে ও স্ত্রী ভূমিকম্প মনে করেছিল। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পেলো অগ্নিদগ্ধ কয়েকজন দৌড়াদৌড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিল। ভয় পেয়ে ভাড়াটিয়াদের অনেকে চিৎকার ও কান্নাকাটি করতে থাকে। আমার ছোট বাচ্চাটাও ভয়ে কান্না করে দেয়। এ কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসেন।

গত বছর বৈদ্যুতিক সুইচ অন করতে গিয়ে ওই ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ডে তিন জন মারা যায়। এবার মশা মারার ইলেক্ট্রিক ব্যাটে মশা লাগতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে সাজেদা বেগমের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পুলিশ ভবন মালিককে গ্রেফতার করেছে। তবে একই সময়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও ভাড়াটিয়াদের মাঝে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ভবনের নীচ তলার আরেক ভাড়াটিয়া নুসরাত বলেন, এই ভবনের অধিকাংশ ভাড়াটিয়ারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। কোনা দিন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। গত বছরে একবার আগুন ধরে মারা গেছে। অন্য কোনো ফ্ল্যাটে না হয়ে ওইখানে বার বার আগুন ধরছে। আমাদের মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন গ্যাসলাইনে লিকেজের কারণে আগুন ধরেছে। ভাড়াটিয়াকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল।

স্বয়ং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তদন্তের আগে কোনা ধরনের মন্তব্য করতে নারাজ। জানতে চাইলে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, রান্না ঘরে অগ্নিকাণ্ডের কোনো চিহ্ন নেই। সব জিনিসপত্র অক্ষত্র। অথচ এর পাশে দুটি কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ড কীভাবে ঘটেছে? এর সূত্রপাত তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। গ্যাস লিকেজের কারণে হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রান্না করেন। যার কারণে ঘরে গ্যাস আটকে যায়। রান্নার পর ঠিকভাবে চুলা বন্ধ করতে পারে না। অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন নেভাতে জানে না, অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হন। অথচ প্রতি বছরই আমরা মহড়াসহ বিভিন্ন সচেতন কর্মসূচি পালন করে আসছি। গ্যাসের গন্ধ পেলে তৎক্ষণাৎ লাইন যাচাই-বাছাই করতে হবে। সিলিন্ডার কিংবা পাইপ লাইনের গ্যাস হোক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।

বুধবার (৩ নভেম্বর) মরিয়ম ভিলার ষষ্ঠ তলার ভবনে গিয়ে দেখা দেয়, এফ টু নামে ওই ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা দিয়ে ঢুকতেই সোজাসোজি শোবার একটি কক্ষ। ওই কক্ষের দেয়াল ও জানালায় আগুনে পোড়া দাগ। এর ডান পাশে রান্না ঘর। বাম পাশে বেলকনির পাশের কক্ষটিতে আগুনে পোড়া দাগ। তবে রান্না ঘরে অগ্নিকাণ্ডের কোনো চিহ্ন নেই। ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ। ষষ্ঠ তলার দুপাশে এফ ওয়ান ও এফ থ্রি ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে। মরিয়ম ভিলায় ঝুলছে টু লেট।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর ওই ভবনের গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড(কেজিডিসিএল)। রান্নার জন্য ভবনের মালিকের পক্ষ থেকে ভাড়াটিয়াদের গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলো দিয়েছেন।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ মাজেদ চট্টলার খবরকে বলেন, আপাতত ওই ভবনে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। সব কিছু যাচাই বাছাই শেষে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি শুরু করা হবে।

আরকে/নচ

এই বিভাগের আরও খবর