chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামের খলিফা পট্টিতে ৭ হাজার দর্জির ঘুম নেই

দর্জি পাড়া

নগরীর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে একেবারে ছোট্ট একটা এলাকার নাম খলিফা পট্টি। এটি দর্জি পাড়া বলেই খ্যাত। সেখানে রয়েছে ৫ শতাধিক পোশাক তৈরির ক্ষুদ্র কারখানা। রমজান মাস এলেই নিঘুম কাজ করে প্রায় ৭ হাজার দর্জি শ্রমিক।

                                                                                                                                                             ছবি- ফয়সাল এলাহী। 

  • গত ৬৫ বছর ধরে এই ছোট্ট এলাকা ঘিরে এখানে গড়ে ওঠেছে পোষাক শিল্প। ওই সময় নোয়াখালী বেগমগঞ্জের প্রয়াত আইয়ুব আলীর হাত ধরে সামান্য ফেরীওয়ালা থেকে এই পোষাক তৈরীর মার্কেট। পূরানো দিনের হকারগিরি এখন আর নেই। আইয়ুব আলীর পরবর্তী প্রজন্মই এই এলাকার পোষাক তৈরী কারখানার মালিক।

গত ৬৫ বছরে একেবারে খালি হাতে এসে প্রায় দুই তিন শতাধিক মানুষ এখন এখানকার বড় পাইকারি ব্যবসায়ী। এখান থেকে সারা দেশের মার্কেটগুলোতে নিত্য নতুন ডিজাইনের ঈদজামা সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে তৈরী হচ্ছে এবারের ঈদ আকর্ষণ নিত্য নতুন ডিজাইনের নজরকাড়া পোশাক।

    ছবি- ফয়সাল এলাহী। 

এবার নতুন নয়, প্রতিবছরই এখানে তৈরী করা হয় ঈদ জামা। এছাড়া সারা বছরের কমন কাপড় চোপড়ও এখান থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়। নিউ মার্কেট, চিটাগাং শপিং কমপে¬ক্্র, আমিন শপিং সেন্টার, সেন্ট্রাল প-াজা, ইউনুস্কু, স্যানমার ওসান সিটি, কেয়ারি ইলেশিয়াম, ভিআইপি টাওয়ার, সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, মুন্নীপ্লাজা, অফমি প্লাজা, মতি টাওয়ার, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, সিঙ্গাপুর মার্কেট, মিমি সুপার মার্কেটসহ নগরীর অভিজাত মার্কেট সমুহে খলিফাপট্টির তৈরী পোষাকই শোভা পাচ্ছে।

একসময় তাদের তৈরী পোষাকের কদর ছিল নগরীর রেয়াজ উদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঝারি মার্কেটগুলোতে। কিন্তু গত ১০ বছর থেকে খলিফা পট্টির পোষাক শিল্প কারখানাতেই তৈরী করা হচ্ছে নিত্য নতুন ডিজাইনের ঈদ জামা। আর এসব জামাকাপড় নগরীর অভিজার মার্কেট ছাড়িয়ে এখন ঢাকা, ফেনী, কুমিল্ল¬া, কক্্রবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও জেলার ১৪ উপজেলার খুচরা মার্কেট পর্যন্ত স্থান করে নিয়েছে।

খলিফা পট্টির ডিসেন্ট টেইলাসের কারিগর জুয়েল বলেন, চীন-ভারত থেকে দেশে পোশাক যদি না আসত তাহলে খলিফাপট্টির পোষাক কারখানাই দেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠত।

খলিফাপট্টি ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, খলিফাপট্টিকে কেন্দ্র করে মালিক শ্রমিকসহ প্রায় দশ হাজার মানুষের পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার ব্যবসায়ীদের সহজশর্তে ঋণদেয়াসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হলে এখানে দুই বছরের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

খলিফাপট্টি বণিক সমিতির সভাপতি জানান, গত ৬৫ বছর ধরে এশিল্পে সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। প্রতিবছর এখানকার তৈরী পোষাকই দেশের বাজার গুলোর বড় ধরনে চাহিদা মেটায়। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গত ৬৫ বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার শ্রমিক সৌদি, দুবাইসহ বিদেশে আয় উপার্জন করছে। সুযোগ সুবিধার অভাবে প্রতিবছর ৫-৬জন ব্যবসায়ী এখান থেকে মাইনাস হয়। এখানকার পূজিঁ নিয়ে কারখানা গুটিয়ে ব্যবসায়ীরা অভিজাত মার্কেটের দিকে ঝুকে পড়ে। তারপরও সমিতির তদারকি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আন্তরিকতার কারণে এ শিল্প কোনভাবে ঠিকে আছে।

কারখানার মালিকরা জানান, নগরীর অভিজাত মার্কেটের অর্ডার এখন এখানে বেশী। কিন্তু বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে প্রোডাকশন কমে গেছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অভিজাত মার্কেটে এখানকার তৈরী কাপড়ের কদর দিন দিন বাড়লেও এ সমস্যার কারণে যথাসময়ে ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হয়না।

খলিফাপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, ৫ শতাধিক কারখানায় রাত দিন তৈরী পোষাক তরে তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভারতীয় ডিজাইন অনুকরণে তৈরী ফ্রক, স্কাট, ডিভাইডার, থ্রি পিছ, প্যান্ট, শিশুদের জামা কাপড়ে সজ্জিত এখানকার কাজল ফ্যাশন, ভাই ভাই গার্মেন্টস, আজমির গার্মেন্ট, শাহজালাল গার্মেন্টসসহ অধিকাংশ দোকান। এখানে বানানো কাপড় কেয়ারী ইলেশিয়ামসহ মাঝারি ধরনের মার্কেট রিয়াজ উদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেট, গুলজার টাওয়ার, চকবাজার শাহেনশাহ মার্কেট, মতি টাওয়ারসহ সর্বত্র কদর বেশী। খলিফা পট্টির তৈরী জামা কাপড় চলে যায় সিলেট, কক্্রবাজার, নোয়াখালীসহ প্রত্যন্ত জেলা ও উপজেলায়। নিত্য নতুন ডিজাইনের বাহারি রংয়ের ঈদের পোষাক তৈরীতে ব্যস্ত এখানকার ৫০০ কারখানার ৯০০ কারিগর ও ৭ হাজার দর্জি শ্রমিক। ঈদ সংনিকটে। তাই সারাদেশের অর্ডার পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। নির্ঘুম রাত, রাতদিন বিরামহীনভাবে চলছে ঈদের পোষাক তৈরীর কাজ।

  • ফখ/চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর