chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে জলদস্যুরা

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ আজ পাঁচদিন হলো। এরমধ্যে গতকাল শুক্রবার জলদস্যুদের নতুন দল জাহাজটির দায়িত্ব নিয়েছে এবং পুরোনো দল জাহাজ থেকে নেমে গেছে। নতুন দল দায়িত্ব নিয়ে নাবিকদের সঙ্গে তাদের পরিবারসহ সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

এদিকে এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি ২৩ নাবিককে শারীরিকভাবে নির্যাতন না চালালেও জাহাজে থাকা তাদের সীমিত খাবারে ভাগ বসাচ্ছে দস্যুরা। ফলে দ্রুতই খাবার ফুরিয়ে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্রের মুখে দস্যুদের সব কথা মেনে চলতে হচ্ছে বাংলাদেশি ২৩ নাবিককে, যে কারণে মানসিক একটা চাপ ও ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে কাটছে তাদের। সম্প্রতি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান পরিবারের সদস্যদের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠান।

অডিও বার্তায় তিনি জানান, জিম্মি হওয়ার দিন তাদের কাছে ২০-২৫ দিনের খাবার মজুত ছিল। পানি ছিল ২০০ টনের মতো। প্রতি বেলায় এখন ৩০ জলদস্যু নাবিকদের সঙ্গে খাবার খাচ্ছে। এ কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে খাবার ও পানি।

তিনি আরও বলেন আলহামদুলিল্লাহ, এখনও খাবার আছে। কিন্তু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে। তাই এই খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না। আর হয়তো ১০-১৫ দিন যেতে পারে। এরপর খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাব।

গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মির পর প্রতিদিন নাবিকদের কেউ কোনো না কোনোভাবে স্বজন কিংবা জাহাজ মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। কিন্তু শনিবার (১৬ মার্চ) দিনভর জিম্মি থাকা নাবিকদের কেউ জাহাজ মালিক কিংবা স্বজনদের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি। এই প্রথম একটি দিন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রয়েছেন নাবিকরা।

ধারণা করা হচ্ছে, মালিকপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতেই এমন যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে জলদস্যুরা। তবে আজও জলদস্যুরা মুক্তিপণ হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট অংকের টাকা দাবি করেনি।
ভারত মহাসাগরে মঙ্গলবার জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর বৃহস্পতিবার সোমালিয়ার উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি নোঙর করেছিল। এরপর দস্যুদের আগের দল জাহাজ থেকে নেমে পড়ে। আরও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১৫-২০ জনের নতুন আরেকটি দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নেয়।

নোঙর তুলে শুক্রবার বিকেলে তারাই জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করে। তাদের সঙ্গে আছেন ইংরেজি জানা একজন দোভাষী। আজ শনিবার পর্যন্ত সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করেনি। এ ব্যাপারে মালিকপেক্ষরও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেনি তারা। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগির তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে মুক্তিপণের প্রস্তাব পাঠাবে জলদস্যুরা।
এদিকে জাহাজটির আবার অবস্থান পরিবর্তনের খবর শুনে আতঙ্ক বেড়েছে জিম্মিদের পরিবারে। উৎকণ্ঠা নিয়ে স্বজনরা ঘটনার কারণ জানতে চাচ্ছেন জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে।
জাহাজের মালিকপক্ষের মুখপাত্র ও কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,
বৃহস্পতিবার জলদস্যুদের নতুন আরেকটি দল জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এটি উপকূল থেকে চার নটিক্যাল মাইল দূরে গিয়ে নোঙর করায়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জাহাজটি অবস্থান পাল্টে এখানে নোঙর ফেলে। জলদস্যুদের কেউ আমাদের সঙ্গে এখনও মুক্তিপণের ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। তবে নাবিকেরা সবাই ভালো, সুস্থ আছেন। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আজ দিনভর নাবিকরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়েছে স্বজনদের।
নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান,
এমন বিচ্ছিন্নতা তৈরি করা জলদস্যুদের একটি কৌশল। চাপ বাড়াতে তারা এমনটি করে থাকে। এটা নিয়ে স্বজনদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্য নিজ থেকেই যোগাযোগ করবে।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে পৌঁছেছে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটি। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের আরেকটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম ‘এমভি জাহান মণি’। বড় অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।

শুধু এমভি আবদুল্লাহ নয়; আরও অনেক জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে অতীতে জিম্মি হয়েছিলেন। তাদের কেউ ২০ মাস পর, কেউ ১০ মাস পর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান। ২০১২ সালে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ২০ মাসেরও বেশি সময় জিম্মি থাকার পর বাংলাদেশি সাতজন নাবিক মুক্তি পান। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর ভারত মহাসাগর থেকে মালয়েশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এম ভি আলবেডো’কে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এ সময় তারা জাহাজটিতে থাকা ২২ জন কর্মকর্তা এবং ক্রুকেও জিম্মি করে। এই ২২ জনের মধ্যে ছিলেন ৭ জন বাংলাদেশি, ৭ জন পাকিস্তানি, ৬ জন শ্রীলঙ্কান এবং একজন করে ভারতীয় ও ইরানি নাগরিক। তাদের সবাই মুক্তিপণ দিয়ে দীর্ঘ সময় পর মুক্ত হয়েছিলেন।

কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় ১০০ দিন পর।

এই বিভাগের আরও খবর