চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দীর মৃত্যু: ওসি,জেল সুপারের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তের নির্দেশ
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। সংস্থাটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৩ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি একই আদালতে মামলাটির আবেদন করেছিলেন কারাগারে মারা যাওয়া রুবেলের স্ত্রী পুরবী পালিত। ওইদিন আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করেন। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এরপর আজ (রোববার) মামলাটির বিষয়ে আদেশ প্রদান করেন আদালত।
দায়রা জজ আদালতের কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত বলেন, ‘আদালত সরাসরি মামলা গ্রহণের নির্দেশনা দেননি। তবে পিবিআইকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা তদন্তপূর্বক নিরূপণের আদেশ দিয়েছেন। ২৭ মার্চ প্রিলিমিনারি এনকোয়ারি রিপোর্ট জরুরি ভিত্তিতে দাখিলের জন্য পিবিআইকে আদেশ দিয়েছেন। এ প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।’
মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে, বোয়াখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আছহাব উদ্দিন, একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) এস. এম আবু মুসা, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাঈন উদ্দিন, এএসআই মো. সাইফুল ইসলাম, কনস্টেবল কামাল ও আসাদুল্লাহ, এসআই রিজাউল জব্বার, ঘটনার দিনের থানার ডিউটি অফিসার, চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, জেলার মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, মো. আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন ও ইব্রাহিম এবং কারাগারের পদ্মা ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মাস্টার।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৭ জানুয়ারি বিকেলে বোয়ালখালী থানা পুলিশের একটি টিম রুবেল দেকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিন রাতে বোয়ালখালী থানা থেকে রুবেলের পরিবারে ফোন দিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয় এবং টাকা না দিলে রুবেলকে ৫০০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের মামলা সাজিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। কথা মতো টাকা দিয়ে অস্বীকৃতি জানানোয় ২৭ জানুয়ারি রুবেলকে ২০০ লিটার মদ উদ্ধার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। আদালত রুবেলকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
আবেদনে আরও বলা হয়, পরদিন আদালত রুবেলকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রিজন ভ্যানে করে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুবেলের পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য কারাগারে যান। কারারক্ষীরা মুমূর্ষু অবস্থায় রুবেলকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসেন। তখন রুবেলের কপালে, ডান চোখের ভ্রুয়ের ওপর রক্তাক্ত কাটা জখম এবং মুখমণ্ডলে নীল ফোলা জখম দেখা যায়। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায় রুবেলের পরিবার খবর পান, তিনি কারাগারে মারা গেছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অজয় ধর বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে দায়ের করা মামলাটির আবেদন প্রথমে আদালত গ্রহণ করেন। এটি যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীর বাদীর বক্তব্য শুনেন। সবশেষ আজ (রোববার) মামলাটি পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
চখ/জুঈম