chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পরিচ্ছন্ন নগর আর আলোকায়নের অন্যান্য উদাহারণ মেয়র নাছির

চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। ২০১৫ সালের ৬ মে শপথ নেন মেয়র হিসেবে। তবে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওই বছরের ২৬ জুলাই। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরকে পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য সম্মত ও আধুনিক নগরী গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রথমে শুরু করেন নগরীকেত পরিচ্ছন্ন করার অভিযানে। হাতে নেন ডোর টু ডোর প্রকল্প।

২০১৫ সালের আগে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত উন্মুক্ত ডাস্টবিন। এছাড়া যেখানে সেখানে ফেলা হতো ময়লা-আবর্জনা। ময়লার দুর্গন্ধে অনেক স্থানে চলাচল করাও কষ্টকর ছিল নগরবাসীর জন্য। কিন্তু মেয়র নাছির দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষণা দেন ডোর টু ডোর প্রকল্পের। নগরবাসীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় ৯ লাখ ময়লা রাখার প্লাস্টিক বিন। এ উদ্যোগের ফলে গৃহস্থালী বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে সহজে। কেউ আর এখন ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে না। একই সঙ্গে শহরের প্রধান সড়কগুলোর পাশে ময়লা ফেলার জন্য স্থাপিত কন্টেইনার এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থাপিত ডাস্টবিনও অপসারণ করেছে সিটি করপোরেশন। এরপর নগরীর সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে অপসারণ করেন বিশাল বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড। মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল, মেগা সাইন অপসারণ করেন। এরপর থেকে সিটি করপোরেশনের সীমার মধ্যে আর কোনো বিলবোর্ড স্থাপিত হয়নি। পরে মেয়র নাছিরকে অনুসরণ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রও ঢাকা শহরের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে।  এরপর নামের যানজট মুক্ত নগর নির্মানে। দিনের বেলায় শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। মেয়র নাছির দায়িত্ব গ্রহণের পর রাতের ময়লা রাতেই অপসারণের উদ্যোগ নেন। এছাড়া শহর পরিচ্ছন্ন করতে রাতেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্ব বন্টন করে দেন। বর্তমানে এক হাজার ৯শ জন সেবক প্রতি রাতেই নগরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করছে। যার কারণে  এখন চট্টগ্রাম শহর আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন হয়েছে এখন।

চসিকের বিদ্যুৎ শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ হাজার ৫৫৬টি সুইচিং পয়েন্টের মাধ্যমে ৫১ হাজার এনার্জি, টিউব, হাই–প্রেসার সোডিয়াম, এলইডি ও অন্যান্য বাতি দিয়ে সড়ক আলোকায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান প্রধান সড়কে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকায় ৭০৫টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে এবং আরো ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় ৩৮১টি এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ চলছে।  এছাড়া ২৭ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সোলার/নন-সোলার এলইডি স্ট্রিটলাইট প্রোগ্রাম ইন সিটি করপোরেশন (এস.এস.এল.পি.সি.সি.)-এর আওতায় ২ কি.মি. সড়কে ১০৩টি সোলার প্যানেলযুক্ত এলইডি লাইট এবং ৫৬ কি.মি. সড়কে ৩ হাজার ১৭টি নন-সোলার এলইডি এনার্জি সেভিং লাইট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমেধ্য জাইকার অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৬ কিলোমিটার প্রধান সড়ক আলোকায়ন এবং ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ৪০০ কিলোমিটার সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প পাস হয়েছে। এক সময় নগরীর আগ্রাবাদসহ শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অন্ধকারে ছিল, সড়ক বাতি ছিল না। সেখানে আলোকায়ন করেছে। মেয়র নাছির এলইডি কনসেপ্ট তা এর পরিবর্তনের সূচনা করেন। এলইডি লাইটের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চেহারা। তখন পথচারীদের চলতে সুবিধা হবে। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় সেগুলোও কমে যাবে।

মেয়র নাছির বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে ১৩ কোটি এবং শিক্ষাখাতে ৪৩ কোটি টাকা ভর্তূকি দিচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর কাছ থেকে গৃহকর বাবদ এই ভর্তুকির টাকাও আসছে না। তারপরও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সফলতা অনেক। ইপিআই টিকা কার্যক্রমে আমরা একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছি। সমস্যার পাহাড় আর সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা দেনা নিয়ে আমি দায়িত্বগ্রহণ করেছিলাম। দুর্নীতি অনিয়মে ভরা ছিল প্রতিষ্ঠানটি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সবগুলো সেক্টরে পরিবর্তন আনতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। এখন রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।

মেয়র নাছির মাসে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সম্মানি পেলেও সেই টাকা তিনি দান করেন অটিজম স্কুল, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের জন্য। গত ৪ বছরে ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন তিনি। এছাড়া তিনি সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করেন না। জ্বালানি খরচও বহন করেন নিজের পকেট থেকে।

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, আমি রাজনীতি করছি নগরবাসীর কল্যাণের লক্ষ্যে। কিছু পাওয়ার জন্য মেয়র হইনি, দেওয়ার জন্য এসেছি। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। অসহায়দের কল্যাণে আমার সম্মানির টাকা ব্যয় হচ্ছে- এটা আমার জন্য আনন্দের। আমি সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভেতরে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে চাই।

এই বিভাগের আরও খবর