chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

 বঙ্গবন্ধু টানেলে পাল্টে যাবে কর্ণফুলীর এপার-ওপার

নদীর তলদেশে টানেল এখন আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে পদ্মা সেতুর পর দেশীয় সক্ষমতার অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টানেল থাকলেও তার অধিকাংশ রেল নির্ভর। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক পথ ।

টানেল প্রজেক্ট

প্রকল্পের বিতরণ অনুযায়ী, ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উচ্চতর দু’টি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেলের মধ্যদিয়ে চলাচল করতে পারে। বাস্তবায়নাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩.৪০ কিলোমিটার। এতে ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোড ও একটি ৭৪০ মিটার ব্রিজের পাশাপাশি মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যাতে টানেলের অভ্যন্তরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু থাকে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় টানেলের টিউব দু’টির মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ৩-৪ মিনিটের মধ্যে পার হওয়া যাবে এপাড় থেকে ওপাড়ে। এই প্রকেল্পর মোট ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯.৭১ কোটি টাকা।

 বঙ্গবন্ধু টানেলে পাল্টে যাবে কর্ণফুলীর এপার-ওপার

টানেলের দুই প্রান্তের ইকোনমিক করিডোর 

দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারা প্রান্তে টানেলের মুখ একদিকে পটিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ন্যাশনাল হাইওয়ে-১ এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে যা ইতোমধ্যে সম্প্রসারণের কাজ বাস্তবায়নাধীন। একই প্রান্তে বাঁশখালী-পেকুয়া এর সাথে সংযুক্ত সড়কটি সরকারের নতুন পরিকল্পনা মোতাবেক বাঁশখালী-পেকুয়া-চকরিয়া-ঈদমনি-খুরুশকুল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে যারফলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার কমে যাবে। এছাড়া এই নতুন পরিকল্পিত রুটের সাথে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত একটি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরী করা যেতে পারে যা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার কমিয়ে আনতে পারে। টানেলের চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট ৩-৪ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার এবং একই প্রান্ত থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দূরত্ব আনুমানিক ২০ কিলোমিটার।

সেতুর পরিবর্তে কেন এই টানেল

গত একযুগে চট্টগ্রামে বৈপ্লবিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যার মধ্যে মিরসরাইতে দেশের বৃহত্তম বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল, বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অবকাঠামোগত এই উন্নয়নের ফলে অত্র অঞ্চলে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের এই চাপ বহন করতে কর্ণফুলী নদীর উপর বর্তমানে যে দু’টি সেতু রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে সেতুর কারণে নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পলি জমা হয়ে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই নদী নাব্যতা সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কর্ণফুলীর প্রবেশমুখ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ প্রবেশের নির্বিঘ্নতা নিশ্চিত করে আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণ করতে গেলে যে উচ্চতার প্রয়োজন তা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত দুরূহ ও ব্যয়বহুল। তাই সকল দিক বিবেচনায় কর্ণফুলী নদীর উভয়পাশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করতে সেতুর বিকল্প হিসেবে টানেল নির্মাণ একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ ।

 বঙ্গবন্ধু টানেলে পাল্টে যাবে কর্ণফুলীর এপার-ওপার

আন্তর্জাতিক লজিস্টিক্স হাবে পরিণত হওয়ার পথে চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক লজিস্টিক্স হাবে পরিণত করতে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্ন ও গতিশীল করার কোন বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক লজিস্টিক্স হাবে পরিণত হওয়ার জন্য যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রধান শর্ত হলোঃ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক করিডোরের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস করা যাতে পণ্য পরিবহনে গতিশীলতা আসে, পাশাপাশি বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা এবং টানেল চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক লজিস্টিক্স হাবে পরিণত করতে একটি উপযুক্ত অবকাঠামো।
পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী উভয় পরিবহনের জন্য নির্বিঘ্নে যাতায়াতের স্বতন্ত্র লেইন বা রুটের ব্যবস্থা থাকা। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে ১২টি স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ বাণিজ্য সড়ক পথে সংগঠিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সড়কপথে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও সেভেন সিস্টারে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। সুযোগ রয়েছে পাহাড় ও সমতলবেষ্টিত প্রতিবেশী দেশ নেপাল এবং ভুটানেরও। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হলে ট্রানজিটের ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু টানেল বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটির নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এ টানেলকে ঘিরে।

চট্টগ্রাম নগরীর মহাপরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু টানেলের তাৎপর্য

বন্দরনগরীকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারাকে যুক্ত করেছে এই টানেল। এর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকাগামী যানবাহনকে আর মহানগরের অভ্যন্তরে ঢুকতে হবে না। টানেল ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে চলে যাবে গন্তব্যে। পরিকল্পনাধীন সময়ের এক সমীক্ষায় দেখা যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির জন্য টানেল অর্থনৈতিকভাবে খুবই জরুরী ভূমিকা রাখবে এবং ওই সমীক্ষায় বলা হয় টানেল দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রতিদিন চলাচল করতে পারবে অন্ততঃ সাড়ে ১৭ হাজার গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন যাতায়াত করতে পারে বলেও ধারণা করা হয়। তাই এই বিপুল পরিমাণ ট্রাফিক পূর্বের দুই সেতু এবং চট্টগ্রাম শহরের উপরে যে যানজটের চাপ সৃষ্টি করতে পারে তার সমাধান ও বিকল্প হিসেবেই এই টানেল চট্টগ্রাম নগরীর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নদীর দুই তীর ধরে নগর সম্প্রসারণের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ। চট্টগ্রাম নগরের মাস্টার প্ল্যানে কর্ণফুলী নদীর দুই তীর ও বঙ্গোপসাগর উপকূলে অন্তত ১১টি উপশহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ এই টানেল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশহিসেবে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কাজটি হাতে নেওয়া হয়েছে। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে সাগরিকা থেকে টানেল পর্যন্ত সাগরপাড়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোড নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সড়ক যাবে টানেলের ভেতর দিয়ে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা-হালিশহরে বাস্তবায়নাধীন আউটার রিং রোড কাজ করবে টানেলের অ্যাপ্রোচ সড়ক হিসেবে। নগরী থেকে টানেল অতিক্রম করে মেরিন ড্রাইভ কক্সবাজার যাবে আনোয়ারা উপজেলা হয়ে। আবার উত্তর দিকে এই মেরিন ড্রাইভ চলে যাবে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর পর্যন্ত। চট্টগ্রামকে ঘিরে গ্রহণ করা হয়েছে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা। মহাপরিকল্পনার আওতায় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ হাব। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে হয়েছে দু’টি এলএনজি টার্মিনাল। এইসব কর্মযজ্ঞ পৃথকভাবে চলমান থাকলেও মূলতঃ সরকারের মেগা উন্নয়ন পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে এই টানেল নির্মাণ করা হয়েছে।

টানেলকে ঘিরে শিল্পায়ন

টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠছে বড় বড় বিনিয়োগ। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর ওপারে রয়েছে প্রায় ২,৫০০ একরের উপর কারিয়ান ইপিজেড। দক্ষিণ এশিয়ায় এ প্রথম টানেল নির্মাণের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আনোয়ারার একটি ইকোনমিক জোন স্থাপন করছে সরকার। বেজার তথ্যমতে কর্ণফুলী দক্ষিণপাড়ে আনোয়ারা উপজেলায় প্রায় ৮০০ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হচ্ছে চাইনিজ ইকোনোমিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সদস্যভূক্ত অনেকে বিনিয়োগ করছে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায়। এছাড়া টানেলের দক্ষিণ পাড় থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত চার লেনের সড়কের পাশে কারখানা স্থাপনের জন্য অনেকেই ক্রয় করেছেন ভূমিও। শিল্পায়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে টানেলকে ঘিরে যারফলে স্বাভাবিকভাবে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে টানেলের মধ্য দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের সংখ্যা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। টানেলের আশেপাশের অঞ্চলের সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাত পর্যটন খাত কক্সবাজারের পরে পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও আনোয়ারা পার্কি বিচ। আগে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে সড়ক পথে শহরের মধ্য দিয়ে আনোয়ারা যেতে সময় লাগতো ৪ ঘন্টা। বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়িত হওয়ায় এই সময় নেমে আসবে মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নদীর তলদেশে এই টানেল হওয়ায় এই স্থাপনাকে ঘিরে আকর্ষণ বাড়বে দর্শনার্থীদের। পাশাপাশি ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ এবং ফৌজদারহাট এলাকায় গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন ডিসি পার্ক পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। কক্সবাজার জেলায় গড়ে উঠছে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক, শাবরাং ট্যুরিজম ও টেকনাফে নাফ ট্যুরিজম পার্ক। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী মোট প্রায় ৫০ কিলোমিটারের কোস্টাল লাইন রয়েছে। যারমধ্যে পোর্ট, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ইত্যাদি ছাড়াও প্রায় ২০ কিলোমিটারের কোস্টাল লাইনজুড়ে কোস্টাল টুরিজ্যম প্রসারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

লবণ শিল্প

দেশে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজার জেলায়। এরপরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকলেও অধিকাংশ লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে সনাতনী পদ্ধতিতে। তাই চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ বাস্তবায়িত হলে অপার সম্ভাবনা দেখা দিবে লবণ শিল্পে।

চখ/ফখ

এই বিভাগের আরও খবর