chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ইয়াবা রুটে সোনার চালান,বাংলাদেশ হয়ে যায় ভারতে

কক্সবাজারের ইয়াবা পাচারের রুট ব্যবহার করে দেশে আসছে অবৈধ সোনার চালান। ফলে ইয়াবার পাচারের ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে সোনা পাচারের ট্রানজিটে। সোনা পাচারের এ নেপথ্যে রয়েছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীরা। যারা ইয়াবা ও আইসের পাশাপাশি বর্তমানে সোনাও পাচার করছে। মিয়ানমার থেকে আসা এ চালান কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে চলে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে মতে, ভারতের সোনার বিপুল চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চোরাচালানে ঝুঁকেছে চোরাকারবারিরা। সম্প্রতি আটক হওয়া প্রায় সোনার গন্তব্য ছিল ভারত। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আকাশ পথে আসা সোনার চালান বেরিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে। শুল্ক গোয়েন্দা ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গোপন প্রতিবেদনে আরো বলেছে, ভারত থেকে ফেনসিডিলের যেসব চালান আসে সেসবের বড় একটি অংশের মূল্য পরিশোধ করা হয় চোরাই সোনা দিয়ে। মাদক ও অস্ত্রের চালানের চোরাই সোনা ব্যবহৃত হচ্ছে। কেবল বিমানবন্দরেই নয়, রেলস্টেশনেও ধরা পড়ছে সোনার চালান। যেগুলো ধরা পড়ছে না সেগুলোর বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে ভারতে।

বিজিবি কক্সবাজারের রামু সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মেহেদী হোসাইন কবির জানান, গত এক বছরের কয়েকটি অভিযানে আমরা প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সোনা জব্দ করেছি। বারের ওপর মিয়ানমারের সিলমোহর ছিল। এ চালানগুলোর মিয়ানমার থেকে এসেছে তা নিশ্চিত হলেও গন্তব্য কোথায় ছিল তা জানতে পারিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এক সময় দেশের সোনা পাচারের জন্য ব্যবহার করা হত ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে এ দুই বিমান বন্দরে সোনা পাচার নিয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করার কারণে সোনা মাফিয়ার বিকল্প রুট ব্যবহার করছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আবর আমিরাত, সৌদি আবর, কাতার, ওমানসহ অন্যান্য দেশ থেকে সোনার চালান সরাসরি বাংলাদেশ না এনে তৃতীয় দেশ ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে তারা মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আসছে সোনার চালান। এক্ষেত্রে তারা সোনার চালান বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করছে ইয়াবার রুট এবং ইয়াবা মাফিয়াদের। তারা সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমার হয়ে সোনার চালান নিয়ে আসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। অতপর সুবিধা মত সময়ে সোনার চালান পাঠিয়ে দেয়া হয় চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার কিংবা ঢাকায়। পরে সোনার চালান চলে যায় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে।

দীর্ঘদিন ধরে সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করছেন চট্টগ্রাম- বিজিবি-৮ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী। তিনি জানান, পাচারকারীরা নিজেদের আড়াল করতে সব সময় অপরিচিত রুট ব্যবহার করে। এ কৌশলের অংশ হিসেবেই তারা সোনা পাচারের অপরিচিত রুট মিয়ানমারকে ব্যবহার করছে। এছাড়া মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে।

গত ১৬ জুন কক্সবাজার থেকে ৯ কেজি ৬২৩ গ্রাম সোনার বার ও পাত পাচারের সময় চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কর্ণফুলী থানা পুলিশ। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ৪ পাচারকারীকে। ২৫ মে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে অভিযান চালিয়ে আড়াই কেজি সোনার বারসহ এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করে বিজিবি। গ্রেফতার পরবর্তিতে বিজিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়- মিয়ানমার থেকেই অবৈধ ভাবে সোনার চালানটি আসে। এ চালানের গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম। ১৭ ফ্রেব্রুয়ারী কক্সবাজারের পালংখালী সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ১৯১ ভরি সোনাসহ এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৫। গ্রেফতারের পর র্যাব জানায় মিয়ানমার থেকেই সোনার চালানটি আসে। এ চালানের গন্তব্য ছিল রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প।

সম্প্রতি কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে সাড়ে ৯ কেজি সোনার চালান জব্দ মামলাটি তদন্ত করছে সিএমপির ডিবি (বন্দর ও পশ্চিম) বিভাগ। এ মামলার তদন্ত নিয়ে উপ-কমিশনার আলী হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকেই সোনার চালানটি এসেছে। এ চালানের পরবর্তী গন্তব্য ছিল চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার। এ চালানের মুলহোতা করা এবং শেষ গন্তব্য কোথায় ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর