chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আদিবাসী দিবস: ‘আদিবাসী’ বলা যাবে না!

আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। প্রতিবছর সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। তবে সংবিধান অনুযায়ী ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী শব্দ ব্যবহারে নির্দেশনা দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

গত ২৩ জুলাই এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ অবস্থায় আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টক শোতে অংশগ্রহণকারী সরকারের নীতি নির্ধারক, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্য ব্যক্তিদের ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বিষয়ে সচেতন থাকার কথা বলা হয়।

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন আদিবাসী শব্দের প্রায়োগিক বাস্তবায়নের দাবিও জানিয়ে আসছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক সুরাহা হয়নি।

 

যে কারণে আদিবাসী বলা হচ্ছে না

বাংলাদেশ সরকারের নীতি হচ্ছে – যাদের আদিবাসী বলা হচ্ছে তারা এখানকার আদি বাসিন্দা নয়। তারা হচ্ছে এ ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি ২০১১ সালে ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের আহবান জানিয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর’ জনগণকে যেন ‘আদিবাসী’ বলা না হয়।

 

সরকারের অবস্থান হচ্ছে, এখানকার মানুষের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ৪ হাজার বছরের পুরানো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সেটিই প্রমাণ করে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবারত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়া থেকে আসা শুরু করে। সেজন্য তারা এখানকার আদিবাসী নয়।

 

এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় যাদের আদিবাসী বলা হয়, তাদের ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল বাংলাদেশে সে রকম কিছু হয়নি। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

 

আর জাতিসংঘের কোনো দলিলেও ‘আদিবাসী’ বিষয়ে সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই।

 

জাতিসংঘের ঘোষণায় যা আছে

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে জাতিসংঘের একটি ঘোষণাপত্র আছে। ২০০৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়।

এতে ১২টি ক্ষেত্রে আদিবাসীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বিশেষ করে ভূমি সংক্রান্ত অধিকারগুলোই ছিল মুখ্য। ঘোষণাপত্রে- ভূমি ও ভূখণ্ডের অধিকার; আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার; তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাবার অধিকার এবং তাদের সম্মতি ছাড়া যেসব ভূমি, ভূখণ্ড এবং সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাবার অধিকারের কথা বলা হয়।

ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেনি বাংলাদেশ, ভুটান এবং রাশিয়াসহ ১১টি দেশ। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। পরবর্তীতে এই চার দেশ তাদের অবস্থান বদল করে এই ঘোষণাপত্রকে সমর্থন দেয়।

এদিকে গত বছরও আদিবাসী দিবসের আগে একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরে এ বিষয়ে প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ ৫০ বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছিলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবিধানের কোনো ধারা বা বিষয় নিয়ে বিতর্ক বা মতান্তর দেখা দিলে তার ব্যাখ্যা একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই দিতে পারবে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নয়। আর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টেরই এক রায়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আদিবাসী শব্দ ব্যবহারে কোনো আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই বলে জানানো হয়েছে।’

 

এই বিভাগের আরও খবর