chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ফেনীতে হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি মিরসরাইয়ে গ্রেফতার

ফেনীর ফুলগাজীতে সিএনজি চালককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মিরসরাইয়ের সুমন চন্দ্র রায়কে ১৩ বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) ভোরে রংপুর জেলার মাহিগঞ্জ এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার এড়াতে সুমন চন্দ্র রায় (৪৩) ছদ্মনামে দীর্ঘ দিন যাবত রংপুরে অবস্থান করছিলো। গ্রেফতার কৃত সুমন চন্দ্র রায় (৪৩) মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার পূর্ব দুর্গাপুর হিন্দু পাড়ার হারাধন চন্দ্র রায়ের ছেলে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২০১০ সালের ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় ফেনীর পরশুরাম সিএনজি স্টান্ড হতে একটি সিএনজি ভাড়া করে ফুলগাজী থানাধীন মুন্সিরহাট নামক স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। এরপর থেকে সিএনজি চালক মুলাকাত আহমদ কালা মিয়ার আত্মীয়স্বজনরা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পান।

গভীর রাত হয়ে গেলেও কালামিয়া বাড়িতে ফিরে না আসায় তার আত্মীয়স্বজনরা শহরের বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন ১৯ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩ টায় সিএনজি চালকের ভাই স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন যে ফুলগাজী থানাধীন ধলিয়া জগতপুর এলাকায় একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে।

পরবর্তী তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাত লাশটি তার ভাই কালা মিয়ার বলে শনাক্ত করেন। হত্যার শিকার কালামিয়ার ডান চোখের উপরে ধারালো অস্ত্রের রক্তাক্ত গভীর কাঁটা জখম এবং উভয় কানে, বাম চোয়ালে এবং পুরুষাঙ্গে রক্তাক্ত জখম দেখতে পাওয়া যায়।

কিন্তু কালামিয়ার সিএনজি অটোরিকশা ও মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। উক্ত অমানবিক ও পাশবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি সে সময় সারাদেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ মোঃ ফখরুল বাদী হয়ে ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-০৩, তারিখ- ১৯ নভেম্বর ২০১০, জি আর নং-১১৯/২০১০, ধারা- ৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।

পরবর্তীতে ফুলগাজী থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের মাধ্যমে আসামীদের সনাক্ত করেন এবং বর্ণিত হত্যা মামলায় আটককৃত তিনজন আসামী বিজ্ঞ আদালতের নিকট স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আসামীগনের জবানবন্দি হতে স্পষ্ট যে, তারা জেনে বুঝেই সিএনজি ও মোবাইল ফোন লুট করার জন্য কালামিয়াকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা নির্দয় ও নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

তদন্ত ও প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমানে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জন আসামীর নামে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরবর্তীতে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত মামলার বিচারকার্য শুরু করেন। আসামীরা দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশের তদন্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষে আসামীদের অনুপস্থিতিতে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে ভিকটিম মোঃ মুলকত আহাম্মদ প্রকাশ কালা মিয়া’কে হত্যার দায়ে আসামী সুমন চন্দ্র রায় (৪৩) কে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৩ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।

র‌্যাব-৭, ফেনী বর্ণিত হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, ফেনী জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী সুমন চন্দ্র রায় আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে রংপুর জেলার মাহিগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করছে।

উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭, ও র‌্যাব-১৩ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল গত ১৩ জুন ভোর সাড়ে ৪টায় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী সুমন চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার কৃত সুমন চন্দ্র রায়কে মঙ্গলবার রাতে জোরারগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর