‘ফেইসবুকে ঋণের ফাঁদ, অ্যাপে ঢুকেই সর্বস্বান্ত গ্রাহক
ফেইসবুকে ঋণের চটকদার বিজ্ঞাপনে র্যাপিড ক্যাশ’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে সহজে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতে একটি চক্র।পরে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হতো।
ওই অ্যাপের মাধ্যমে ৫০০ থেকে কয়েক হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হতো। পরে উচ্চ সুদে সেই টাকা আদায় করতো চক্রটি। টাকা দিতে অস্বীকার করলে অ্যাপ ডাউনলোড করা ব্যক্তির মোবাইল ফোনের তথ্য ও আপত্তিকর ছবি বিভিন্নজনকে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হতো। চক্রের মূলহোতা দুই চীনা নাগরিক। যারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতো।
আজ বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর বারিধারায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন।
সম্প্রতি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় এক ভুক্তভোগী ওই চক্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্তে গিয়ে চক্রটির সন্ধান পায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এই অ্যাপ সংশ্লিষ্ট কল সেন্টারের পরিচালক মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে আটক করে এটিইউয়ের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তবে চক্রের মাস্টারমাইন্ড দুই চীনা নাগরিককে পাওয়া যায়নি। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
সাইবার ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, সাধারণ মানুষ ঋণ নেওয়ার জন্য অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোডের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর সব কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারির ছবি, ভিডিও ও মোবাইলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতো। চক্রটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করা মহিউদ্দিন মাহি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছেন। তিনি চীনা ভাষা লিখতে ও বলতে পারেন। এই সুযোগে তারা এই ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। বাংলাদেশে বসে চক্রটি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদেরও একইভাবে ঋণ দিয়ে প্রতারণা করতো। মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো চক্রটি।
তিনি বলেন, সহজে ঋণ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলতেন চক্রের সদস্যরা। এরপর মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার নামে এনআইডির ছবি ও গ্রাহকের ছবি নিতেন। গ্রাহকরা এসব কাজ করার সময়ে চক্রটি কৌশলে মোবাইল ফোনের কল লিস্ট, গ্যালারির ছবি, ভিডিওসহ সব তথ্য হাতিয়ে নিতো। এরপর ঋণ দেওয়ার পরে উচ্চ সুদ আদায় শুরু করতো। কেউ দিতে আপত্তি জানালেই তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দেওয়া হতো। এই অ্যাপ বানিয়েছেন চীনারা। তারা এটাকে এমনভাবে বানিয়েছেন যে ডাউনলোড করলেই সব তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যেতো।
ফারহানা ইয়াসমিন বলেন আরও বলেন, অভিযানে দেখা যায় একটি বাসার ভেতরে গোপনে তারা এ কাজ করে আসছিলেন। অফিসে কাজ করা তরুণ-তরুণীরা হিন্দি ও উর্দু ভাষায় ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলতেন। ভারত ও পাকিস্তানে একই অ্যাপ ভিন্ন নামে ঋণ দিয়েছে। একইভাবে তাদের সঙ্গেও ঋণ দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছিল। ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছেন তারা।
এর বিপরীতে তারা ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আদায় করতেন। অ্যাপ ও সংশ্লিষ্ট কল সেন্টারের কর্মীদের ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। পাশাপাশি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারলে বোনাস পেতেন কর্মীরা। এর মাধ্যমে কর্মীরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পেতেন। চক্রের আরও এমন কল সেন্টান থাকতে পারে বলেও জানান এসপি ফারহানা ইয়াসমিন।
চখ/জুইম