chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ২৭ ডিসেম্বর একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সশস্ত্র সংগ্রামের বীর প্রতিরোধ যোদ্ধা, ফেনী-২ আসনের তিনবারের সাবেক সাংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জয়নাল আবেদিন হাজারির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ।  ১৯৯৫/১৯৯৬ সালের আন্দোলনে বৈপ্লবিক ভুমিকা রাখা এবং ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ছিলেন তিনি।

 

জয়নাল আবেদিন হাজারী আজীবন অকৃতদার ছিলেন, নিজেকে দলের জন্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের শেষ সম্বল টুকু। তিনি সর্বশেষ তার পৈত্রিক সূত্রে মালিকীয় প্রায় শত কোটি টাকার সম্পাদ টুকু জাতির পিতার নামে ‘ মুজিব উদ্যান’ এর নামে নামকরন করে গেছেন।  এ উপলক্ষে পারিবারিক আয়োজনে সকালে মরহুমের কবরে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

 

এ ছাড়াও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতেনাগরীক সমাজের উদ্যেগে নাগরিক শোকসভা, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।  ২০২১সালের ২৭ডিসেম্বর তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ঢাকার ল্যাব হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন ফেনী শহরের মাস্টার পাড়াস্থ তাঁর নিজ বাড়ী মুজিব উদ্যানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ ও হাজারী পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বাদ যোহর মুজিব উদ্যানে  দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক শহীদ উদ্দিন খোন্দকার।

 

তাঁর রাজনৈতিক সহচর ও পরিবার সুত্রে জানা যায়, ১৯৪৬ সালের ২৪ আগস্ট ফেনীর মাস্টার পাড়াস্থ’ হাজারী বাড়ীতে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি আমৃত্যু দৈনিক হাজারীকা প্রতিদিনের সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ আ’লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।  তিনি ফেনী সদর আসন থেকে তিন বার (১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এর নির্বাচনে) জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৪-২০০৪ পর্যন্ত প্রায় বিশ বছর ফেনী জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জয়নাল হাজারী। ৭১এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালী জেলা ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের নেতা ছিলেন।

 

২নং সেক্টরে তিনি এফএফ ফোর্সের একটি ইউনিটে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির দমন-নিপিড়ন থেকে দলীয় কর্মীদের রক্ষার্থে তিনি ১৯৯৩সালে ছাত্র-যুব নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে একটি সুশৃঙ্খল স্টিয়ারিং বাহিনী গঠন করেছিলেন। আ’লীগের ভাষ্যমতে জনকল্যান ও সন্ত্রাস দমনে কাজ করেছিল জয়নাল হাজারীর স্টিয়ারিং বাহিনী।

 

রাজনৈতিক কারনে তিনি বার বার জেল খেটেছেন। এবং রাজনৈতিক কারনে ২০০১ সালের ১৬আগস্ট থেকে ২০০৯ সালের ১০জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতে নির্বাসনে ছিলেন। লেখক হিসেবে তাঁর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম হলো ‘জয়নাল হাজারী বলছি’ ‘বিজুর বিচার চাই’ ‘বাধনের বিচার চাই’ ‘বাধন আছে বিজু কোথায়? ব্যাক্তিগত জীবনে জয়নাল হাজারী চিরকুমার ছিলেন। জনশ্রুতি আছে, ফেনী সরকারি কলেজের বিজুনামে এক শিক্ষার্থীর সাথে তিনি প্রেম করতেন । তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু‘ যুদ্ধকালে বিজুর বিয়ে হয়ে যায়।

 

সে অভিমানে তিনি আর বিয়ে করেননি। জয়নাল হাজারী কলেজ, হাজারী পাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, হাজারীপাড়া জামে মসজিদ, নয়টিলা মাজার মসজিদ ও এতিমখানা সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জয়নাল হাজারী। কবি নির্মলেন্দু গুন তাঁর এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, ফেনী মহকুমা ছাত্রলীগ নেতা থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে সখ্যতা ছিল জয়নাল হাজারীর।

 

ওই প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন, ৬৬’র ছয়দফার পক্ষে মিছিল করায় জয়নাল হাজারীকে বহিষ্কার করেছিল ফেনী কলেজ কর্তৃপক্ষ । তখন জয়নাল হাজারীকে ভর্তি করানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ.আর মল্লিককে চিঠি লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭৫এর ১৫আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার পর চট্টগ্রাম বিভাগে একমাত্র জয়নাল হাজারীর নেতৃত্বে ফেনী শহরের বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর