chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পটিয়ায় মাটি খেকোদের রাম রাজত্ব: অসহায় জনগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পশ্চিম মুজাফরাবাদ সেন বাড়ির আশে পাশে মাটি খেকোদের আনা গোনা বেড়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় মাটি খেকাদের হৈচৈ আর মাটি কাটার মহোৎসব। দুর থেকে আলো আঁধারি স্কেভেটরের বাতি দেখে যে কারো মনে হতে পারে যেন সরকারি বড় কোন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে।

কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষিজমি ও টিলার উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কারখানা তৈরির কাজে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগের দিন যেখানে কৃষি জমি ছিলো সকালে উঠে দেখা যায় চিত্র বদলে গেছে। রাতারাতি পরিণত হয়েছে পুকুরে।

এভাবে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। তাছাড়া পুকুরের পাড় ঘেষে কৃষি জমি থেকে প্রায় ৩০ ফুটেরও বেশি নিচের অংশে মাটি কেটে ফেলায় যেকোন সময় পুকুরের পাড় বিলীন হয়ে মাছ ভেসে যাওয়ার আশংকা করছেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা।

আর মোটা অংকের টাকা নিয়ে পুরো এলাকায় এ মাটি কাটায় মাটি খেকোদের মদদ দিচ্ছেন পশ্চিম মুজাফরাবাদ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ি হিসেবে চিহ্নিত একটি চক্র। সেন বাড়ি ও আশেপাশের এলাকার লোকজন তাদের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে পাশের ইউনিয়ন থেকে উশৃঙ্খল কিছু লোকজন ডেকে এনে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলা ও বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে জেলের ঘানি টানানোর হুমকি প্রদান করে। ফলে ঝামেলার ভয়ে কেউই আর এগিয়ে আসতে সাহস পাই না।

নাম প্রকাশ না করা সর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, বিগত প্রায় দেড় মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মাটিকাটার যন্ত্র স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে তা বিক্রি করছেন মাটি খেকো চক্রটি। মাটি কাটার কাজে জড়িতদের শোরগোল ও স্কেভেটরের শব্দে একদিকে ঘুম হারাম হচ্ছে অন্যদিকে বাড়িতে চুরি ডাকাতির ভয়ে অস্থির দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে তাদেরকে বাঁধা দিতে গেলে তারা উল্টো ঝারি মেরে বলেন, আমরা টাকা দিয়ে যার জমি তার কাছ থেকে মাটি কাটার অনুমতি নিয়েছি। ফলে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই মাটি কাটবো। তাতে কার বাপের কি? বেশি বাড়াবাড়ি করলে মাটি কাটার ওই গর্তেই পুতে ফেলবো। তাছাড়া উল্টো মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন  চক্রটি।

তাই সেন বাড়ির অসহায় সদস্যগণ একত্রিত হয়ে বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করেন এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে জমির মালিক পলাশ সেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্ধত হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি ও টিলার মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২ এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।

দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদন্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি মালিক ও কর্তন কাজে জড়িত উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি গভীরের মাটিতেই মূলত পুষ্টিগুণ থাকে। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে না। এতে সারের পেছনে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, এক কানি জমিতে প্রায় ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয়। কিন্তু টপ সয়েল কেটে নেওয়া জমিতে এর প্রায় দ্বিগুণ সার দিতে হবে। ফলনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম হবে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, টাকার লোভে জমির মাটি বিক্রয় করে কৃষকেরা নিজেদেরই ক্ষতি করছেন। জমির হারানো পুষ্টিগুণ ফিরে পেতে প্রায় ১৫-২০ বছর সময় লাগে। এ জমি কার্যত আর তেমন কোন কাজেই আসবে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আতিকুল মামুন জানিয়েছেন ফসলি জমির মাটি কাটা অপরাধ। যে জমির মাটি বিক্রি করে এবং যারা কেটে নিয়ে দুপক্ষই সমান অপরাধী। কৃষি জমিতে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর