chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ইফতারে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ‘মেজবানের মাংস’

পোস্তদানা, মিষ্টি জিরা, নারকেল ও বাদাম বাটার সঙ্গে কয়েক ধরনের মসলা এবং সরিষার তেল মিশিয়ে রান্না করা হয় গরুর মাংস। বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্না করা এই মাংস চট্টগ্রামের অনন্য ঐতিহ্য। স্থানীয়ভাবে এটি মেজবানি মাংস নামে পরিচিত। বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে চট্টগ্রামের তুমুল জনপ্রিয় খাবারের নেপথ্যে রয়েছে এটি। বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে মেজবানের (নিমন্ত্রণ) আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে চট্টগ্রামে।

গত কয়েক বছরে মেজবানি স্বাদের রান্না করা এই মাংস স্থান করে নিয়েছে রোজাদারদের ইফতারের টেবিলেও। চট্টগ্রামের ফুটপাত থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল সর্বত্র ইফতারের মেন্যুতে স্থান করে নিয়েছে মেজবানির এই মাংস। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন সড়কের অলি-গলিতেও দেখা মিলছে এই মাংসের পাতিল। বিশালাকৃতির পাতিলে রান্না করে তা কেজি হিসেবে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। প্রতিদিনের ইফতারে ঐতিহ্যবাহী এ মাংস পাওয়ায় খুশি রোজাদাররা। প্রায় ২ যুগ আগে চট্টগ্রামের পীরবাড়ির মানুষ রোজাদারদের তৃপ্তির জন্য এ আয়োজন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী সেই সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের সর্বত্র।

চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনী এলাকার পীরবাড়ি রোডের মেজবানি মাংসের কদর রয়েছে পুরো নগরে। রোজার মাসে যে কোনোদিন দুপুরের পর পীরবাড়ি রোডে ঢুকলেই মেজবানি মাংসের খুশবু পাবেন যে কেউ। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা মেজবানির মাংসটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের বেশকিছু স্থানে বিক্রি হচ্ছে। শুধু রমজান মাসে এই মাংস বিক্রি করেন অনেক মৌসুমি বিক্রেতাও। চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল তো বটেই, নামিদামি অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি নগরের রাস্তার দুই পাশে বসে মাংস বিক্রির অস্থায়ী বেশ কয়েকটি দোকানও বসেছে।

সরেজমিন চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনীর পীরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির চারপাশে রঙ-বেরঙের প্যান্ডেল তৈরি করে মেজবানির মাংস বিক্রি করছেন কয়েকজন বিক্রেতা। এদের কেউ পেশাদার বিক্রেতা না হলেও রমজান এলেই পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ মাংস বিক্রি করেন তারা। এসব অস্থায়ী দোকানের টেবিলে সাজানো রয়েছে ছোট-বড় প্লাস্টিকের বাটি। মাংস থাকা বড় পাতিলটি মোড়ানো হয়েছে লাল কাপড়ে। মাংস গরম রাখতে রয়েছে কয়লার ব্যবস্থাও। টেবিলের পাশে থাকা চুলায় রাখা হয়েছে বড় ও মাঝারি আকারের দুটি হাঁড়ি। হাঁড়ির বড়টিতে রাখা হয়েছে মেজবানের মাংস। অন্যটিতে রয়েছে চনার ডাল। ক্রেতা এলেই হাঁড়ি থেকে গরম মাংস তুলে দেওয়া হয় বাটিতে।

বাবুর্চি আব্দুল রব বলেন, ‘চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই মেজবানির মাংসটি সবাই রান্না করতে পারে না। প্রয়োজনীয় উপাদান ঠিক না থাকলে ও রান্না সঠিকভাবে না হলে তার আসল স্বাদটা পাওয়া যায় না। এই মাংসের আসল স্বাদ পাওয়াই হলো মূল বিষয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মাংস রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে শেষ করা হয় রান্না। দুপুরের পর বিক্রির উদ্দেশ্যে দোকানে আনা হয়। দোকানে মাংস আনার আগ থেকেই অনেক ক্রেতা মাংস কেনার আশায় হাজির হন দোকানের সামনে। অনেকে অগ্রিম অর্ডারও দিয়ে রাখেন। চাহিদা বেশি থাকায় প্রতিদিন অনেককে মাংস না নিয়েই ফিরতে হয়।’

প্রতি কেজি মেজবানির মাংস বিক্রি করা হয় ৭৫০ টাকা। ক্রেতার সুবিধার্থে আধা কেজির বাটিও রাখা হয়েছে। এর দাম পড়ে ২২০ টাকা। মাংস কিনতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন ফরহাদ বলেন, ‘ইফতারে মেজবানির মাংস পছন্দ করে পরিবারের সবাই। তাই প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে মাংস নিয়ে যাই।’ আরেক ক্রেতা সাইফুল রহমান বলেন, ‘বড়দের মতো মেজবানির মাংসটি সন্তানরাও খুব খেতে ভালোবাসে। রমজান শুরুর পর থেকে প্রায়ই বাসার জন্য মাংস কিনে নিয়ে যাই।’

এই বিভাগের আরও খবর